অন্যান্য

আজহারীর মাহফিলে শত শত ফোন-স্বর্ণালঙ্কার খোয়া, জিডির হিড়িক

  প্রতিনিধি 4 January 2025 , 4:48:56 প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

 

যশোরে ইসলামি বক্তা ড. মিজানুর রহমান আজহারীর ওয়াজ মাহফিলে অসংখ্য মোবাইলফোন ও স্বর্ণালঙ্কার খোয়া গেছে। শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) রাতে শহরতলি পুলেরহাটে আদ্-দ্বীন সকিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চত্বর ও আশপাশ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর থেকে যশোর কোতোয়ালি মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে ভুক্তভোগীরা রীতিমতো লাইন ধরেছেন।

 

থানা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শনিবার (৪ জানুয়ারি) বিকেল ৩টা পর্যন্ত ৩০০ জিডি হয়েছে। প্রতিনিয়ত যেভাবে জিডি করতে ভুক্তভোগীরা থানায় আসছেন, এতে এই সংখ্যা কয়েকগুণ বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে পুলিশ।যশোর শহরতলি পুলেরহাটে আদ্-দ্বীন ফাউন্ডেশন আয়োজিত তিন দিনব্যাপী তাফসিরুল কোরআন মাহফিলের শেষ দিন ছিল শুক্রবার। রাতে বয়ান করেন বিশিষ্ট ইসলামি বক্তা ড. মিজানুর রহমান আজহারী। তার আসার খবরে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের ঢল নামে সমগ্র মাহফিল এলাকায়। শুক্রবার সকালে থেকেই শীত উপেক্ষা করে মানুষ জমায়েত হতে শুরু করে। বিকেল থেকে মাহফিল স্থান ছাপিয়ে সড়ক, মহাসড়কে নারী, শিশু ও পুরুষের ঢল নামে। দুপুরের পর সড়কে যানজট দেখা দেয়। এজন্য অনেকেই পায়ে হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছান। মাহফিল প্রাঙ্গনে কয়েক লাখ মানুষের সমাগম ঘটে। পরে সন্ধ্যায় আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শায়খ আহমাদুল্লাহ বয়ান রাখেন।রাত সাড়ে ১০টার পর মাহফিল শেষ হলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে পদদলিত হয়ে একাধিক ব্যক্তি মারা যাওয়ার গুজব। আহতের সংখ্যাও অর্ধশতাধিক। একইসঙ্গে মোবাইলফোন, স্বর্ণালঙ্কারসহ মূল্যবান জিনিসপত্র খোয়া যাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ে।হাসপাতাল ও থানা সূত্রে জানা গেছে, যশোর জেনারেল হাসপাতালে পদদলিত হয়ে ২১ জন ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে রাতেই ১০ জন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। আর ১১ জনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীনতবে শুক্রবার গভীর রাত থেকে শনিবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত স্বর্ণালঙ্কার ও মোবাইলফোন খোয়া যাওয়ার ঘটনায় তিনশ জিডি হয়েছে বলে জানিয়েছেন যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার ডিউটি অফিসার শারমিন আক্তার।

 

তিনি বলেন, শুক্রবার রাত থেকে অসংখ্য মানুষ মোবাইল হারিয়ে যাওয়া বা চুরির ঘটনায় জিডি করতে আসেন। তাৎক্ষণিকভাবে যারা মোবাইলের ডকুমেন্ট দেখাতে পেরেছেন তারা জিডি করতে পেরেছেন। আর শনিবার সকাল থেকে রীতিমতো ভিড় লেগেছে। কয়েক হাজার জিডির সংখ্যা হতে পারে বলে তিনি ধারণা করছেন।মায়ের দেড় ভরি ওজনের একটি সোনার চেইন খোয়া যাওয়ার পর শনিবার দুপুরে জিডি করতে এসেছিলেন সদরের রূপদিয়া থেকে ইব্রাহিম হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমার মা মহিলা প্যান্ডেলে বসে আজহারী হুজুরের ওয়াজ শুনছিলেন। একপর্যায়ে গলায় হাত দিয়ে দেখেন তার গলায় হার নেই। তাই থানায় জিডি করতে এসেছি।’

 

স্ত্রীর গলার চেইন হারিয়ে যাওয়ার পর থানায় জিডি করতে আসেন শহরতলি নওয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা হযরত হোসেন। তিনি বলেন, ‘এভাবে ওয়াজ মাহফিলে চুরি হওয়ার ঘটনা দুঃখজনক এবং অপরাধমূলক কাজ। লাখ লাখ মানুষের সমাগম হয়েছে মাহফিলে। চোররাও এ ধরনের অনুষ্ঠানে সুযোগটা কাজে লাগায়। কর্তৃপক্ষের আরও সর্তক ও ব্যবস্থাপনা ভালো করা উচিত ছিল।’শহরের বেজপাড়া এলাকার বাসিন্দা এনামুল হক। তিনি বলেন, ‘যশোরের ইতিহাসে এমন বড় মাহফিল হয়নি। ওয়াজ মাহফিলে গিয়েছিলাম ইমান-আমল ঠিক করতে আর চোরেরা তাদের ব্যবসা খুঁজে নিলো। হাজার হাজার মানুষের মোবাইলফোন হারিয়ে যাওয়ার খবর শুনেছি মাহফিলের মাঠেই। অনেকেই দূর-দূরান্ত থেকে এসেছেন। তাই জিডি করতে কাগজপত্র দেখাতে না পারায় জিডি করতে পারছেন না।’যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘তিন দিনব্যাপী বড় মাহফিল হয়েছে যশোরে। ৫-৭ লাখ মানুষ সমাগম হয়েছে। এর ভেতরে অসংখ্য মানুষের মোবাইলফোন, স্বর্ণালঙ্কারসহ মুল্যবান জিনিসপত্র হারিয়ে যাওয়ার খবর পেয়েছি। অনেকেই জিডি করছেন। কয়েকটি চুরির অভিযোগও পেয়েছি। পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে।’তিনি আরও বলেন, মাহফিলে আহত বা মৃত্যু নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। তবে মাহফিলে পদদলিত হয়ে মারা যাওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি। ফলে মৃত্যু নিয়ে গুজব না ছড়ানোর অনুরোধ করেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।প্রসঙ্গত, বুধবার (১ জানুয়ারি) থেকে তিন দিনব্যাপী এই মাহফিল শুরু হয়। মাহফিলের প্রথম দিন আলোচনা করেন আল্লামা মামুনুল হক ও আব্দুল হাই মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ। দ্বিতীয় দিন আলোচনা করেন মাওলানা রফিকুল ইসলাম মাদানী ও মুফতি আমির হাজমা। শেষদিন শুক্রবার আলোচনা করেন শায়খ আহমাদুল্লাহ ও ড. মিজানুর রহমান আজহারী।

Author

আরও খবর

                   

জনপ্রিয় সংবাদ