নলছিটি শহরের প্রধান সড়ক প্রশস্তকরন প্রকল্প, ৯৭% জনগণ চাইলেও ব্যবসায়ীদের বাধা।
বালী তাইফুর রহমান তূর্য,নলছিটি:
ঝালকাঠির নলছিটিতে ৯৭% নাগরিক শহরের প্রধান সড়কের প্রশস্ততা চাইলেও আটকে আছে ৩% লোকের বাধায়।১৮৬৫ সালে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের দ্বিতীয় নগরী বা পৌরসভার নাম নলছিটি পৌরসভা।বয়সের হিসেবে প্রায় ১৬০ বছর পুরনো নগরী হিসেবে যতখানি উন্নতি বা নাগরিক সেবার সুনাম থাকার কথা ছিলো তার সিকিভাগও নেই বাস্তবে।
অনুন্নয়ন,লুটপাট, দখলদারিত্বের কবলে পরে যুগ যুগ ধরে অবহেলিত হয়ে একটি পরিত্যক্ত নগরীতে পরিনত হবার পথে এটি।
প্রায় পচিশ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত পৌরসভাটির নয়টি ওয়ার্ডের কোথাও ভালো কোনো রাস্তাঘাট নেই।গত এক দশকে লুট হয়েছে কোটি কোটি টাকার বরাদ্দ।এমনকি মূল শহরের প্রধান সড়কটি বাস স্ট্যান্ড থেকে বন্দর স্কুল হয়ে থানারপোল পর্যন্ত পৌছেছে।যার বর্তমান প্রশস্ততা মাত্র দশ থেকে বারো ফুট যা দিয়ে একটি রিক্সা গেলেই আরেকটি রিক্সাও ভালোমতো যেতে পারে না।আটকে যায় এম্বুলেন্স বা পুলিশের গাড়ি অথবা ফায়ার সার্ভিসের গাড়িও।অর্থাৎ বড় ধরনের কোনো বিপদ বা অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে পুরো নগরী পুরে ছাড়খার হয়ে যাওয়া দাঁড়িয়ে দেখা ছাড়া কিছুই করার থাকবে না করোই।
নগরীর ভিতরের মিউনিসিপালিটির নামে রেকর্ডীয় প্রায় ষোল একর সম্পত্তি থাকার কথা শোনা গেলেও বাস্তবে তা খুজে পাওয়া যায় না।তবে এসব রেকর্ডীডী সম্পত্তির অধিকাংশই জলাধার এবং রাস্তায় রয়েছে বলেও জানিয়েছেন পৌর নির্বাহী।জলাধারগুলোও দখলের কবলে পরে নাজেহাল অবস্থায় আছে।শহরের মধ্যে নেই রিজার্ভ পানির ট্যাংক কিংবা ফায়ার হাইড্রান্ট।অর্থাৎ আপতকালিন সময়ের মোকাবেলার মতো কোনো সুবিধাই নেই নগরীটিতে।
প্রধান এই সড়কটির দুই পাশ প্রশস্ত করতে একটি প্রকল্পে (সিটিসিআরপি) প্রস্তাব পাঠিয়েছিলো পৌর কর্তৃপক্ষ যেখানে ফুটপাত সহ বাইশ ফুট প্রশস্ত করার প্রস্তাব ছিলো।রাস্তাটির নকশা এবং পৌরসভার মালিকানার অংশ পরিমাপে দেখা যায় রাস্তাটির দুই পাশ মিলিয়ে প্রায় ষাট ফুট জমির মালিক নলছিটি মিউনিসিপালিটি,যার এক পাশ দিয়ে পুরনো খালও ছিলো।খালটিকে ড্রেনের নামে দখল করে তার উপর দিয়ে দোকান বানিয়ে পানি নিস্কাশন পদ্ধতিকে হত্যা করেছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা।পুরনো ড্রেনের উপরে দোকান নির্মান করে আয়ের উৎস তৈরি করেছিলো পৌরসভা,কিন্তু প্রায় দেড় শতাধিক দোকানের নাম মাত্র ভাড়া কোষাগারে জমলেও বাস্তবে একেকটি দোকান ইজারা নিয়ে তা দুই তিন হাত বদলে তিন থেকে পাচ লক্ষ টাকা এডভান্সে তিন থেকে পাচ হাজারে ভাড়াও দিচ্ছেন সেইসব লিজ গ্রহীতারা।
সম্প্রতি সড়কটি সম্প্রসারণের লক্ষ্যে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নলছিটি পৌরসভায় দুই দফায় মতবিনিময়ের আয়োজন করেন।যেখানে নাগরিক,শুধী সমাজ সহ সকলের থাকার কথা থাকলেও এই সড়কের ব্যবসায়ীরাই বেশি ছিলেন।সভায় প্রকল্প বাস্তবায়নে তাদের আপত্তির কথাও জানান।
নাগরিকদের পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের ক্ষতি না হয় সেরকম মার্কেট নির্মান করে পুন:র্বাসনের পরে সড়কটি সম্প্রসারণের দাবি জানালেও ব্যবসায়ীরা তখনই হট্টগোল বাধিয়ে নাগরিক প্রতিনিধিদের থামিয়ে দেন।
পরবর্তীতে সড়কটির প্রশস্ততা বাস্তবায়নে জনমত যাচাই করতে কয়েক দফায় অনলাইন ভোটিং ও অফ লাইন জরিপ চালানো হয়।এতে ভোটিং এ ৯৭% ভোট পরেছে সড়ক সম্প্রসারণের পক্ষে,মাত্র ৩% ভোট পরেছে বিপক্ষে।এছাড়াও মতবিনিময় সভায় সড়ক সম্প্রসারণের পক্ষের দাবির একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রায় সাত হাজার লোক দেখেছেন যাতে সড়কটি সম্প্রসারণের বিপক্ষে কেউই ছিলেন না।সেখানে নাগরিকদের অনেকেই তাদের মতামত তুলে ধরেন।
এতে সাথী আক্তার নামের একজন সেচ্ছাসেবী মন্তব্য করেন,শহরের রাস্তারাস্তাটি জনসাধারনের সুবিধার কথা চিন্তা করে অবশ্যই চওড়া করা দরকার।কোথাও আগুন লাগলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ও রাস্তায় ডুকাইলে যানজট শুরু হয়,সেই সময় যদি কোন এম্বুলেন্স আসে তাহলে তো অবস্থা আরো বেহাল।আগুন নিবাইতে আগে যাইবে নাকি রোগী নিয়ে হাসপাতালে?সর্বোপরি যত দ্রুত সম্ভব রাস্তাটা প্রশস্ত করা উচিৎ।
বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্র ও শহরের পুরান বাজার এলাকার বাসিন্দা আহসান ইমন বলেন,আমার আব্বু অসুস্থ হবার পর এম্বুলেন্স সাথির মোড় থেকে বাসার সামনে আনতে ৩০ মিনিটের বেশী সময় লাগে। সেদিন রাতেই আব্বু মারা যায়। এ রাস্তাটা আমরা যারা স্থানীয় বসবাস করি তাদের জন্য অভিশাপ। অতিসত্বর এ রাস্তা প্রসস্ত করা দরকার। নাহলে যেকোনো দুর্ঘটনায় আমাদের রক্ষায় কিংবা সহযোগিতা করার ক্ষেত্রে অনেক ব্যাঘাত ঘটবে।
আরিফ আকন বলেন,হ্যাঁ রাস্তাটি অবশ্যই প্রয়োজন।দুইটা গাড়ি পারাপারের সময় যাম জট লেগেই থাকেঅবশ্যই রাস্তার প্রশস্ততা বাড়ানো দরকার।
ইসলামি ছাত্র আন্দোলন নেতা মাহবুবুর রহমান মন্তব্য করেন,রাস্তাটি চলাচলের জন্য অনুপোযোগী অবশ্যই রাস্তার প্রশস্ততা বাড়ানো দরকার।
এইচটি বন্দর স্কুল কর্তৃপক্ষ মন্তব্য করেছেন,আপনাদের প্রস্তাবগুলো অত্যন্ত চমৎকার। কতিপয় ব্যবসায়ী তাদের নিজেদের দেখল কিন্তু জনগণের কথা দেখলো না, স্কুলগামী ছেলেমেয়েদের খুবই কষ্ট হয়। শহরের রাস্তা এতই চিপা ঠিকভাবে পাশাপাশি দুটো রিক্সা যেতে পারে না তার উপরে দোকানের সামনে ভ্যান গাড়ি থামিয়ে রাখে তখন বেঁধে যায় বিপত্তি, একটা গাড়ি আসলে তো রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। সাধারণ জনগণের সবার দাবি রাস্তা হোক।
শওকত আহমেদ নামের একজন বলেন,কোনো এলাকার মানুষের জীবিকার উন্নয়নের প্রথম শর্ত হলো যোগাযোগের উন্নয়ন। হয়তো এখন অনেকেই বলবে যে রাস্তা বাড়ালে অনেক দোকানের সমস্যা হবে কিন্তু আাসলে তাদের সাময়িক ক্ষতি হলেও পরবতীতে তারাই বেশি লাভবান হবে এবং নলছিটি উপজেলার সকল জনগন উপকৃত হবে এবং নলছিটি উপজেলা ধীরে ধীরে এগিয়ে যাবে উন্নয়নের দিকে। ইউএনও স্যার যদি ব্যাবসাহীদের কথা মতো রাস্তা বড় না করে তাহলে এটা হবে নলছিটিবাসীর সবচেয়ে বড় দুর্ভোগের বিষয়।এখন রাস্তা না করা গেলে আর কখনোই রাস্তা বড় করা সম্ভব হবে না।
এম এইচ বিপুল বলেন,কিছু অসাধু ব্যবসায়ী আছে যাদের কারণেই রাস্তা প্রশস্ত হচ্ছে না।
এইচ এম মেহেদী হাসান বলেন,নলছিটি শহরে উন্নয়ন কর্মকান্ডের গুলোর ভিতরে এটাকে এক নম্বর ধরতে পারেন।
এছাড়াও উপজেলার প্রায় পঞ্চাশ হাজার নাগরিকদের সোশাল মিডিয়া ফেসবুকের একটি গ্রুপ "নলছিটি পরিবারে" অনলাইন ভোটিং আয়োজন করা হয় যেখানে সড়কটি সম্প্রসারণের পক্ষে প্রায় সবাই ভোট দিয়েছেন।
নলছিটি উপজেলার জনসংখ্যা প্রায় ১ লক্ষ ৮৫ হাজার।যার প্রায় দেড় লক্ষ মানুষ ঈদে এবং পূজার মৌসুমে শপিং করতে নলছিটি শহরে আসেন।তখন পুরো শহর জুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয় এই সড়কটির প্রশস্ততর অভাবে।
অভিযোগ রয়েছে রাস্তাটির দুই পাশের পৌরসভার মালিকানা দোকানগুলি একেকজনের নামে ততোধিকও বরাদ্দ নিয়ে ভাড়া দেয়া হয়েছে অন্যদের কাছে।যেকারণে সচেতন নাগরিকরা মন্তব্য, করেন কয়েকজন ব্যবসায়ীর লাভের জন্য প্রায় দু লক্ষ মানুষের দুর্ভোগ মেনে নেয়া যায় না।তাছাড়া দুর্ঘটনা ঘটলে পুরো শহর ধ্বংসস্তূপে পরিনত হবে এটা হতে দেয়া যায় না।
এ বিষয়ে নলছিটি পৌরসভার বর্তমান সরকার নিযুক্ত প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব মো নজরুল ইসলাম জানান,সড়কটির প্রশস্ততা বাড়ানোও জরুরি প্রয়োজন।সাথে সাথে ব্যবসায়ীদের ক্ষতির বিষয়টিও বিবেচনা করে ইতোমধ্যে তাদের সাথে কয়েক দফা আলোচনা করা হয়েছে।বিষয়টি নিয়ে উর্ধ্বতন কর্মকতাদের সাথেও ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে।আশাকরি সিগ্রই এটির সমাধান করা যাবে,যাতে ব্যবসায়ীরাও অধিক ক্ষতিগ্রস্ত না হন এবং সড়কটিও প্রশস্ত করা সম্ভব হয়।