আর এই বদলি যেটা পাশের উপজেলা কেশবপুরের কাটাখালীতে জনগণ তা মেনে নিচ্ছে না।“টাকা না দিলে ফাইল নড়েনা”এই অভিযোগে দীর্ঘদিনের দুর্নীতির অভিযোগে বদলি নায়েব, এলাকাবাসীর স্বস্তির নিঃশ্বাস
রিপন হোসেন সাজু
যশোরের মনিরামপুর উপজেলার নেহালপুর ইউনিয়নে অবস্থিত ভূমি অফিসটি যেন ঘুষ-জালিয়াতির এক অঘোষিত দুর্গে পরিণত হয়েছিল। এর কেন্দ্রে ছিলেন তহসিলদার (নায়েব) বিষ্ণুপদ মল্লিক। গত কয়েক বছর ধরে তিনি ওই অফিসে যে সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন, সেটিকে স্থানীয়রা বলছেন ‘ঘুষতন্ত্র’। সেই সাম্রাজ্যের আজ কিছুটা পতন হয়েছে বিষ্ণুপদ মল্লিককে বদলি করা হয়েছে। কিন্তু তার বদলির আদেশ দেখে প্রশ্ন জেগেছে জনমনে: মাত্র ৮ কিলোমিটার দূরে বদলি কি শাস্তি, না পুরনো রাজ্য নিয়ন্ত্রণের নতুন ফাঁদ ?
৮ জুলাই, যশোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সুজন সরকারের স্বাক্ষরিত ১১৯৪ নম্বর স্মারকে বিষ্ণুপদসহ ১০ জন নায়েবকে বদলি করা হয়। এরমধ্যে বিষ্ণুপদকে কেশবপুর উপজেলার কাটাখালী ভূমি অফিসে বদলি করা হয়। তাকে আগামী ১৬ জুলাইয়ের মধ্যে যোগদানের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয়দের মতে, এটি কোনো শাস্তি নয় এটি ‘চোখে ধুলো দেওয়া’র সামান্য প্রয়াস। কারণ, যেখানে মানুষের আশা ছিল দুর্নীতির তদন্ত ও বিভাগীয় ব্যবস্থা, সেখানে মাত্র পাশের উপজেলায় বদলি করাটা যেন অপরাধকে প্রশ্রয় দেওয়া।
▶️ ঘুষের সাম্রাজ্যের ভেতরের চিত্র
স্থানীয়রা জানান, নেহালপুর ভূমি অফিসে বিষ্ণুপদের রাজত্ব ছিল এমন: ফাইল এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিতে ঘুষ, জমির নামজারি করাতে মোটা অংকের টাকা, খাজনা নিতে অতিরিক্ত চার্জ, প্রতিটি সেবা পেতে ‘লোক খরচ’ নামে আলাদা চাঁদা, একজন গ্রাহক বলেন, “তিনবার গিয়েছি ফাইল নিতে, প্রতিবারই নানান বাহানায় টাকা চেয়েছে। শেষ পর্যন্ত ৩ হাজার টাকা না দিলে কাজ হয়নি।”একই অভিযোগ আম্রঝুটা, পোড়াডাঙ্গা, দত্তকোনা, বালিধা, কপালিয়া, নেহালপুর সবখান থেকেই আসছে।
▶️ স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়া ?
বিষ্ণুপদ মল্লিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলেও তিনি বরাবরই থেকে গেছেন বহাল তবিয়তে। কারণ ? এলাকাবাসীর ধারণা, তার রাজনৈতিক ‘ছাতা’ খুব শক্ত। স্থানীয় একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা, এমনকি ইউপি সদস্যরাও নাকি তার বদলি ঠেকাতে একাধিকবার তদবির করেছেন। এমনকি শোনা যায়, ভারতে জমি ক্রয় ও বাড়ি নির্মাণে তার এই ঘুষের টাকাই পুঁজি। ছুটি নিয়ে প্রায়ই তিনি দেশ ছাড়েন, যান ভারতে। সেখানে কী করেন? কে জানে।
▶️ জনমনে এখনও সংশয়...
বদলির খবর ছড়িয়ে পড়তেই লোকজন বলছে, “ভাল হয়েছে, অন্তত এই অফিসটা কিছুটা মুক্তি পাবে।” তবে একইসাথে তারা বলছেন, “এত কাছে বদলি করলে লাভ কী?” একদম পাশের উপজেলার এক ইউনিয়নে বদলি করে প্রশাসন কি তাকে আসলে রক্ষা করল ?