আন্তর্জাতিক

আল-আকসায় গোপনে নয়, প্রকাশ্যে ইহুদিদের প্রার্থনা: কৌশলে মন্দির বানানোর গুরুতর অভিযোগ

  প্রতিনিধি 19 August 2025 , 7:14:43 প্রিন্ট সংস্করণ

ঢাকা:

বিশ্ব যখন গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যা নিয়ে ব্যস্ত, তখন আল-আকসা মসজিদ তার পরিচয় হারানোর ঝুঁকিতে পড়েছে। ফিলিস্তিনিরা আশঙ্কা করছেন, ইসরায়েল কৌশলে এই পবিত্র স্থানকে একটি ইহুদি মন্দিরে রূপান্তরিত করার চেষ্টা করছে। ‘মিডেল ইস্ট আই’-এর এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর থেকে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে, যেখানে ইহুদিরা এখন প্রকাশ্যে মসজিদের ভেতরে প্রার্থনা, গান-বাজনা এবং ইসরায়েলি পতাকা ওড়াচ্ছে।

নিয়ম লঙ্ঘন করে ইসরায়েলের আগ্রাসন

জেরুজালেমের এই পবিত্র স্থানটি শতাব্দীর পুরনো ‘স্ট্যাটাস কো’ চুক্তি অনুযায়ী শুধুমাত্র মুসলিমদের প্রার্থনার জন্য নির্ধারিত। এই চুক্তি অনুসারে, আল-আকসা মসজিদ কমপ্লেক্সের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ইসলামিক ওয়াকফ-এর অধীনে, যা জর্ডান দ্বারা পরিচালিত। কিন্তু ১৯৬৭ সালে পূর্ব জেরুজালেম দখলের পর থেকে ইসরায়েল ধীরে ধীরে এই চুক্তি লঙ্ঘন করে আসছে। ফিলিস্তিনিদের প্রবেশে বিধিনিষেধ আরোপ করে এবং একই সময়ে ইহুদিদের প্রবেশাধিকার বাড়িয়ে পরিস্থিতি জটিল করে তুলেছে।

বিশেষ করে ২০০২ সালে ইসরায়েলি নেতা এরিয়েল শ্যারনের সশস্ত্র হামলার পর পরিস্থিতি নাটকীয়ভাবে পাল্টে যায়। এরপর থেকেই ইসরায়েলিরা আল-আকসায় নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে শুরু করে। তারা মসজিদ প্রাঙ্গণে সেনা মোতায়েন করে এবং ফিলিস্তিনিদের প্রবেশে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে। অন্যদিকে, ‘টেম্পল মাউন্ট অ্যাক্টিভিস্ট’ নামের উগ্র ইহুদি সংগঠনগুলো প্রকাশ্যে আল-আকসা মসজিদ ভেঙে সেখানে তৃতীয় মন্দির নির্মাণের দাবি জানাচ্ছে।

মুসলিমদের প্রবেশ সীমিত, ইহুদিদের প্রার্থনা স্বাভাবিক

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে মুসলিমদের জন্য আল-আকসায় প্রবেশ ক্রমশ কঠিন হয়ে পড়ছে। যেখানে এক সময় লক্ষাধিক মুসলিম নামাজ পড়তেন, এখন সেই সংখ্যা কমে মাত্র কয়েক হাজারে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে, ইহুদিদের প্রবেশ স্বাভাবিক করতে ইসরায়েল ২০১৭ সাল থেকে প্রায় প্রতিদিন তাদের দলগুলোকে প্রবেশ করাচ্ছে।

সম্প্রতি সবচেয়ে উদ্বেগজনক ঘটনা হলো, ইহুদিদের প্রকাশ্যে প্রার্থনা করা। আগে এই ধরনের কার্যকলাপ লুকিয়ে করা হলেও, ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন গিভির প্রকাশ্যে প্রার্থনার আহ্বান জানানোর পর থেকে তা বহুগুণে বেড়েছে। এমনকি বেন গিভির নিজেও আল-আকসায় গিয়ে প্রকাশ্যে প্রার্থনা করেছেন।

তৃতীয় মন্দিরের বিতর্কিত পরিকল্পনা

ইসরায়েলের উগ্রপন্থী এমপি অমিত হালেভি ও বেন গিভির আল-আকসা মসজিদকে ইহুদি ও মুসলিমদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়ার পরিকল্পনা প্রস্তাব করেছেন। একজন এমপি মসজিদ প্রাঙ্গণে সিনাগগ (ইহুদি প্রার্থনাস্থল) নির্মাণের পক্ষেও সমর্থন জানিয়েছেন।

ফিলিস্তিনিদের আশঙ্কা, ইসরায়েল হেবরনের ইব্রাহিমি মসজিদের মতো একই কৌশল অবলম্বন করছে। প্রথমে সিনাগগ তৈরি করে তারা ধীরে ধীরে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেবে। ‘ইসলামি ওয়াকফ’-এর আন্তর্জাতিক বিষয়ক পরিচালক আউনি বাজবাজ বলেন, “আল-আকসায় যা ঘটছে তা শুধু কিছু সাময়িক লঙ্ঘনের ঘটনা নয়। এটি একটি ব্যাপক ইহুদিকরণ প্রকল্প, যার লক্ষ্য হলো মসজিদের ওপর পূর্ণ ইসরায়েলি নিয়ন্ত্রণ চাপিয়ে দেওয়া।” তিনি বিশ্ব মুসলিমদের এই ভয়াবহ পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান।

আরও খবর

                   

জনপ্রিয় সংবাদ