সারাদেশ

ইমামতিতে চার দশকের ইতিহাস: আলোকিত পথচলার শেষবিন্দুতে আতিয়ার রহমান খাটুয়াডাঙ্গায় অশ্রুসিক্ত বিদায়

  প্রতিনিধি 25 April 2025 , 11:26:04 প্রিন্ট সংস্করণ

মনিরামপুরের খাটুয়াডাঙ্গায় অশ্রুসিক্ত বিদায়, বুকের ব্যথায় থেমে গেল নির্লোভ আলেমের নীরব প্রস্থান


মনিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি:

জীবনভর কোরআনের বাণী প্রচারে যিনি নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন, যিনি নামাজের কাতারে দাঁড়িয়ে মানুষকে দেখিয়েছেন সোজা পথ—তিনি আজ নিজেই সেই কাতার থেকে চিরতরে বিদায় নিয়েছেন।

যশোরের মনিরামপুর উপজেলার খাটুয়াডাঙ্গা গ্রামের প্রিয় মুখ, প্রবীণ আলেম, শিক্ষক ও ইমাম হুজুর আতিয়ার রহমান আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

গত ২৩ এপ্রিল ২০২৫, বুধবার দিবাগত রাত ১টা ০৫ মিনিটে নিজ বাসভবনে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭০ বছর।

দীর্ঘদিন ধরে তিনি হৃদরোগ ও ফুসফুসজনিত জটিলতায় ভুগছিলেন। ১৯ এপ্রিল রাতে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে যশোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিন দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর বাড়ি ফেরেন ২৩ এপ্রিল বিকালে। কিন্তু সেদিন রাতেই হঠাৎ বুকে তীব্র ব্যথা অনুভব করলে পরিবারের সবার সামনে নীরবে পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে চলে যান তিনি।

আতিয়ার রহমান ছিলেন খাটুয়াডাঙ্গা মালিপাড়া জামে মসজিদের চার দশকের ইমাম ও খতিব।

তাঁর তিলাওয়াতে ছিল আত্মা ছুঁয়ে যাওয়া আবেগ, আর খুতবায় ছিল ঈমান জাগানিয়া ভাষা। পাশাপাশি তিনি ছিলেন স্থানীয় ফুরকানিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক, যেখানে তিনি আদর্শ, ধর্মীয় মূল্যবোধ ও নৈতিকতা শিক্ষায় নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন।

২৬ এপ্রিল, শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে দুপুর ২টায় খাটুয়াডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে তাঁর প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় হাজারো ধর্মপ্রাণ মানুষ অংশ নেন।

উপস্থিত ছিলেন—

মনিরামপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আলহাজ্ব অ্যাডভোকেট শহীদ মো. ইকবাল হোসেন, জেলা জামায়াত ইসলামের সূরা সদস্য অ্যাডভোকেট গাজী এনামুল হক, উপজেলা জামায়াতের সাবেক সভাপতি লিয়াকত আলী, উপজেলা বিএনপির সাংগাঠনিক সম্পাদক খান শফিয়ার রহমান, দূর্বাডাঙ্গা জামায়াত নেতা মাওলানা আজিজুর রহমান, নেহালপুর জামায়াতের সভাপতি মাওলানা আবু তালহা, দূর্বাডাঙ্গা ইউনিয়র বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক হারুন অর রশিদ, আসাদুজ্জামান আসাদ, সমাজসেবক আব্দুর রশিদ মোল্যা, শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম।

এরপর দুপুর ২:৩০টায়, তাঁর নিজ বাড়ির পাশের আমবাগানে দ্বিতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়।

আতিয়ার রহমানের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে তাঁর পরিবারে। স্ত্রী, সন্তানসহ স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েছেন।

তিনি ছিলেন দৈনিক চেতনায় বাংলাদেশ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান কে.এম. মোজাপ্ফার হুসাইনের মেঝো দুলাভাই।



চেতনায় বাংলাদেশ পরিবার শোকাহত, তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনা করেছে।

একজন আতিয়ার রহমান কেবল ব্যক্তি নন, তিনি ছিলেন একটি আদর্শের প্রতীক। তাঁর ইমামতিতে বেড়ে উঠেছে প্রজন্মের পর প্রজন্ম। আজ তাঁর অনুপস্থিতি শুধু একজন আলেমের বিদায় নয়—এ এক আদর্শ জীবনের নীরব সমাপ্তি।



 

Author

আরও খবর

                   

জনপ্রিয় সংবাদ

মাগুরায় ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনা, অলৌকিকভাবে বেঁচে গেল মাইক্রোবাসটির ড্রাইভার সহ ৫ যাত্রী।

নেত্রকোনায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে সেমাই তৈরীর কারখানাকে জরিমানা

‘১৫ বছর অত্যাচার চালিয়েও বিএনপিকে ভাঙতে পারেনি ফ্যাসিষ্ট সরকার’

ঈদগাঁওতে মেলার নামে বেহায়াপনা ও জুয়ার আসর বন্ধে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারক লিপি

যানজটের কারণে অধিষ্ট কিশোরগঞ্জবাসী।

একটা কিনলে অন্যটা কেনার টাকা থাকে না ঝিনাইদহ প্রতিনিধি চার সদস্যের পরিবার নিয়ে ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার ঋষিপাড়ায় থাকেন ফজলুল রহমান। ভ্যান চালিয়ে দিনে আয় করেন ২৫০-৩০০ টাকা। এর অর্ধেক চলে যায় কিস্তি দিতে। বাকি টাকায় দৈনন্দিন সংসার খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। গত বৃহস্পতিবার সকালে ফজলুর হরিণাকুণ্ডুর একটি দোকানে ডিম কিনতে এসেছিলেন। দাম শুনেই তিনি হতবাক। প্রতি হালি ডিমের দাম চাওয়া হচ্ছে ৫৬ টাকা। ফজলুর লোকমুখে শুনেছেন, সরকার ডিমের দাম কমিয়েছে। কিন্তু বাস্তবে দাম এত বেশি কেন? জিজ্ঞেস করতেই দোকানি বলেন, ‘নিলে নেন, না হলে অন্যখানে যান।’ পকেটের অবস্থা ভালো ছিল না ফজলুরের। বাধ্য হয়ে ফিরে যাচ্ছিলেন তিনি। এর আগে গিয়েছিলেন স্থানীয় কাঁচাবাজারে। শাকসবজিসহ সব পণ্যের অস্বাভাবিক দামে হতাশা ঘিরে ধরে তাঁকে। আয়ের সঙ্গে খরচের হিসাব মেলাতে পারছিলেন না। ফজলুর রহমান বলেন, ১৫ দিন আগেও প্রতি পিস ডিমের দাম ছিল ১২ টাকা। এখন সেটার দাম কোথাও ১৩ টাকা ৫০ পয়সা আবার কোথাও ১৪ টাকা। হালিতে এই ১৫ দিনের ব্যবধানে ডিমের দাম বেড়েছে ৬-৮ টাকা। শাকসবজি, মাছ, আলু, পেঁয়াজ, কাঁচামরিচসহ সবকিছুর দামই বেড়েছে। এভাবে দ্রব্যমূল্য বাড়তে থাকলে সীমিত আয়ে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে। ২৫০-৩০০ টাকা আয়ের মধ্যে ঋণ নিয়ে কেনা ভ্যানের কিস্তির জন্য দিতে হয় ১৫০ টাকা। বাকি ১০০-১৫০ টাকায় চাল, ডাল, তেল আর তরিতরকারি কেনা যায় না। একটা কিনলে অন্যটা কেনার টাকা থাকে না। কাঁচাবাজারে কেনাকাটা করতে এসেছিলেন সাগর হোসেন। তিনি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত। হরিণাকুণ্ডু পৌরসভার শুড়া এলাকায় থাকেন স্ত্রী, দুই সন্তান ও মা-বাবা নিয়ে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে ছয় সদস্যের সংসারে খরচ চালাতে হিমশিম অবস্থা তাঁর। সাগর বলেন, সপ্তাহের ব্যবধানে সবকিছুর দাম বেড়েছে। কোনো কোনো পণ্যের দাম দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্টদের পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান তিনি। ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণে ১৫ অক্টোবর সরকারের কৃষি বিপণন অধিদপ্তর মূল্য নির্ধারণ করে দেয়। উৎপাদক পর্যায়ে ১০ টাকা ১৯ পয়সা, পাইকারিতে ১১ টাকা ১ পয়সা এবং খুচরায় ১১ টাকা ৮৭ পয়সা প্রতি পিসের ডিমের দাম নির্ধারণ করা হয়। বুধবার থেকে এ দামে ডিম বিক্রির কথা থাকলেও বাজারের চিত্র ভিন্ন। একেক জায়গায় একেক রকম দাম নেওয়া হচ্ছ। উপজেলা শহরের কোথাও ১৩ টাকা ৩৩ পয়সা, কোথাও ১৩ টাকা ৫০ পয়সায় বিক্রি হচ্ছে। গ্রামাঞ্চলের বাজারে ১৪ টাকা করে। লাগামহীন ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দামও। বাজারভেদে প্রতি কেজি ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে ১৮০-২০০ টাকায়। সোনালি মুরগি ২৮০-৩০০ টাকা কেজি। বৃহস্পতিবার সকালে শহরের কাঁচাবাজারে প্রতি কেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হয় ২৮০-৩২০ টাকায়। পেঁয়াজের কেজি ১২০ টাকা। লাউ পিস ৫০-৬০ টাকা, আলুর ৬০ টাকা কেজি। ৩০ টাকার মিষ্টি কুমড়া বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা। ৪০ টাকার কাঁচাকলা ৬০ টাকা। ৪০ টাকার শসা বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকায়। গত সপ্তাহের চেয়ে এদিন ঢ্যাঁড়শের দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ টাকায়। প্রতি কেজি পেঁপে ৩০ টাকা থেকে হয়েছে ৪০-৫০ টাকা। বেগুন বিক্রি হতে দেখা গেছে ১৩০-১৫০ টাকায়। ৫০ টাকার নিচে বাজারে সবজি মিলছে না। ব্যবসায়ীদের দাবি, সরবরাহ কম থাকায় দাম বেড়েছে। কাঁচাবাজারের বিক্রেতা খাইরুল ইসলামের ভাষ্য, কয়েকদিন আগে টানা বৃষ্টি হয়েছে। তা ছাড়া অনেক এলাকায় বন্যা হচ্ছে। মানুষের সবজি ও কাঁচামালের ক্ষতি হয়েছে। এতে সরবরাহ কম। তাই সব কিছুর দাম বেড়েছে। দাম কমাতে হলে আগে আড়তদারদের নিয়ন্ত্রণের আহ্বান জানান পাইকারি বিক্রেতা আব্দুল খালেক। তিনি বলেন, আড়ত থেকে কিনে সামান্য লাভে বিক্রি করেন। হরিণাকুণ্ডু উপজেলা মোড়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে আশরাফুল ইসলামের। তাঁর দাবি, খামারির কাছ থেকেই প্রতি পিস ডিম কিনতে হয় ১৩ টাকা ২০ পয়সায়। এর সঙ্গে পরিবহন খরচ রয়েছে। খুচরায় বিক্রি করছেন ১৩ টাকা ৩৩ পয়সায়। আনার সময় অনেক ডিম ভেঙে যায়। ফলে লাভ থাকে না। শুধু ক্রেতা ধরে রাখতেই ডিম বিক্রি করছেন। উৎপাদক ও পাইকার পর্যায়ে দাম নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে ডিম বা ব্রয়লার মুরগির দাম খুচরা বাজারে কমবে না বলে মনে করেন তিনি। মাছের বাজারেও একই অবস্থা। এদিন সকালে হরিণাকুণ্ডু শহরের দৈনিক বাজারে প্রতি কেজি রুই ও কাতলা প্রকারভেদে বিক্রি হয়েছে ২৫০-৩৫০ টাকায়। পাঙাশ ও তেলাপিয়ার দর ১৫০-২৫০ টাকা; চ্যাঙ ও দেশি পুঁটি বিক্রি হয় ৩২০-৫০০ টাকায়। মাছ বিক্রেতা জয়নাল মিয়ার ভাষ্য, আড়তে তেমন মাছ আসছে না। অল্প পরিমাণে যা আসছে, অনেক বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। আড়তদার কামাল উদ্দিন বলেন, বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের আড়তে মাছ আসে। কিছু এলাকায় বন্যা ও অতিবৃষ্টির কারণে প্রচুর ঘের-পুকুর তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া প্রচুর মাছ মারাও গেছে। ফলে সরবরাহ কমেছে, তাই দাম বেশি। ঝিনাইদহ ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক নিশাত মেহের বলেন, এই এলাকায় খামারি নেই। ব্যবসায়ীরা পাবনা বা অন্য এলাকা থেকে বেশি দামে ডিম কিনেন। ফলে সরকারের বেঁধে দেওয়া দর নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। তবুও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। ডিমসহ সব নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন। প্রতিনিয়ত বাজার তদারকি চলছে জানিয়ে ইউএনও আক্তার হোসেন বলেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।