স্টাফ রিপোর্টার:
একটা কণ্ঠ যখন শুধুই শব্দ নয়— হয়ে ওঠে অনুভূতির ভাষা, চরিত্রের আত্মা, কিংবা গল্পের দিগন্ত, তখন সেই কণ্ঠ একজন শিল্পীর হাত ধরে নিজেই হয়ে ওঠে শিল্প। তেমনই এক কণ্ঠশিল্পীর নাম ইরফান রহমান। ভয়েস অ্যাক্টিং, ভয়েজ ডিরেকশন, গীত রচনা এবং সঙ্গীত— এই চারটি ভিন্নধর্মী মাধ্যমকে একসূত্রে গেঁথে নিজস্ব পরিচয় নির্মাণ করে চলেছেন এই তরুণ প্রতিভা।
Free Fire-এর Maxim থেকে ভয়েস দুনিয়ায় বিস্তার
বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় মোবাইল গেম Garena Free Fire-এর “Maxim” চরিত্রটির ভয়েস দিয়েছেন ইরফান রহমান। কিন্তু এটি শুধুই একটি ভয়েস দেওয়া নয়। একটি ভার্চুয়াল চরিত্রকে বাস্তব আবেগ ও ব্যক্তিত্বে রূপান্তরিত করার পেছনে রয়েছে ইরফানের দৃষ্টিভঙ্গি, পর্যবেক্ষণ ও কণ্ঠনির্ভর অভিনয়শৈলী।
“Maxim-এর ভয়েস করার সময় আমি শুধু কণ্ঠ দেই না, আমি ওর মতো ভাবি, ওর মতো অনুভব করি,”— বলছিলেন ইরফান।
চরিত্রটি যাতে মনে হয় জীবন্ত, যেন তারও একটা প্রাণ আছে— সেটাই তার লক্ষ্য। এবং সেই লক্ষ্যকে বাস্তবতায় রূপ দেওয়ার জন্য তিনি নিজেই ভয়েজ ডিরেকশনের কাজটিও করেন। একটি চরিত্রের স্বর, টোন, স্পিচ প্যাটার্ন— সবকিছু মিলিয়ে গড়ে তোলেন এক নিখুঁত ভয়েস পারফরম্যান্স।
ভয়েস দিয়ে তৈরি করেন দৃশ্য, ছোঁয়া দেন হৃদয়ে
ইরফান রহমানের কাজ কেবল গেমিং চরিত্রেই সীমাবদ্ধ নয়। তিনি ভয়েস দিয়েছেন ডাবিং সিনেমা, অ্যানিমেটেড সিরিজ, বিজ্ঞাপন, ডকুমেন্টারি ও ব্র্যান্ড কমার্শিয়ালেও। তার কণ্ঠে কখনো থাকে রাগ, কখনো প্রেম, কখনো প্রতিবাদ— প্রতিটি ভয়েস পেছনে থাকে চরিত্রের গভীর উপলব্ধি ও মানসিক প্রস্তুতি।
অনেকেই ভয়েস ওভারকে একটি টেকনিক্যাল কাজ মনে করেন। কিন্তু ইরফানের কাছে এটি একটি পারফরম্যান্স আর্ট। যেমন একজন থিয়েটার অভিনেতা স্ক্রিপ্ট পড়েন, চরিত্র বুঝে অভিনয় করেন, তেমনই ইরফান চরিত্রকে ধারণ করে শব্দের মাধ্যমে জীবন্ত করে তোলেন।
গানেও আছে তাঁর আবেগ, লেখায় ফুটে ওঠে গল্প
ইরফান রহমান শুধু ভয়েস আর্টিস্ট নন। তিনি গান লেখেন, নিজেই সুর দেন, আবার গাইতেও পারেন। তাঁর গানগুলোতে ফুটে ওঠে জীবনবোধ, ভালোবাসা, সমাজ বাস্তবতা আর কখনো কখনো গভীর কোনো দর্শন।
“প্রতিটি গান আমি এমনভাবে লিখি যেন তা একটা গল্পের মতো— একটা অনুভূতির প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠে,” বলেন তিনি।
যদিও এখনো তার গাওয়া মৌলিক গান প্রকাশ পায়নি, তবে খুব শিগগিরই নিজস্ব কিছু সৃষ্টিকর্ম প্রকাশের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি।
ভবিষ্যতের স্বপ্ন: নিজেকে দেখতে চান আন্তর্জাতিক পর্দায়
তার স্বপ্ন শুধু ভয়েজের মাঝেই থেমে নেই। তিনি নিজেকে দেখতে চান অভিনেতা হিসেবে পর্দায়, এবং নিজেকে উপস্থাপন করতে চান বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্বকারী একজন শিল্পী হিসেবে।
“আমি শুধু নিজের জন্য নয়, আমি বাংলাদেশের জন্য কাজ করতে চাই। আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে বাংলাদেশকে কণ্ঠ, অভিনয় ও সৃজনশীলতায় তুলে ধরাই আমার লক্ষ্য,”— বলছিলেন আত্মবিশ্বাসী ইরফান।
এক তরুণ, অনেক পরিচয়— এক গল্প, বহু সুর
ইরফান রহমান এই প্রজন্মের এমন একজন মুখ, যিনি দেখিয়ে দিচ্ছেন— একজন শিল্পীর পরিচয় কেবল একটি মাধ্যমেই সীমাবদ্ধ নয়। ভয়েজ, গান, লেখা, পারফর্মেন্স— সবকিছু মিলে তৈরি হয় একটি পরিপূর্ণ শিল্পী। তাঁর প্রতিটি কাজ যেন একেকটি পর্ব, একেকটি যাত্রার অংশ।
যেখানে অনেকেই ভয়েজ ওভারকে আড়াল-নিবিষ্ট একটি পেশা ভাবেন, সেখানে ইরফান এই মাধ্যমকেই করেছেন নিজস্ব আলোকিত পথ। তাঁর কণ্ঠে যেমন চরিত্র বাঁচে, তেমনি তাঁর গানে জেগে ওঠে গল্প— আর স্বপ্নেরা পায় নতুন ভাষা।