প্রতিনিধি 2 October 2024 , 5:26:38 প্রিন্ট সংস্করণ
উত্তরবঙ্গে বন্যা ভয়ংকর রূপ ধারন করেছে !তিস্তার অববাহিকায় কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, রংপুর, ও গাইবান্ধার চর ও নদীতীরবর্তী শত-শত গ্রাম ডুবে কয়েক লক্ষ মানুষ পানিবন্দি…পানি ও নদীভাঙন সমানতালে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কয়েক দিনের টানা ভারী বৃষ্টি ও উজানের ঢলে তিস্তা নদীর পানি বেড়ে নদীতীরবর্তী বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। উত্তরের চার জেলা লালমনিরহাট, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম ও রংপুরে ২৩ হাজারের বেশি পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এদিকে গত সোমবার ও মঙ্গলবার তিস্তা নদীর বেশ কয়েকটি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় অবস্থিত তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে গতকাল তিস্তার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে। সকাল ছয়টায় পানি বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তবে দুপুরের পর থেকে পানি আবার বিপৎসীমার নিচে নামতে থাকে। গতকাল সন্ধ্যা ছয়টার দিকে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ত্রাণ শাখা জানিয়েছে, তিস্তার পানি বেড়ে জেলার পাঁচটি উপজেলার চারটিতে ১৭ হাজার ৩৫০ পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলার ৭ হাজার ৫০০ পরিবার, হাতীবান্ধায় ৫ হাজার ৬৫০, আদিতমারীতে ৩ হাজার পরিবার এবং কালীগঞ্জ উপজেলার ১ হাজার ২০০ পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
আদিতমারীর মহিষখোঁচার আব্দুল রহমান (৪৫) বলেন, ‘মোর বাড়ির উঠানসহ চারদিকত তিস্তার পানি উঠি জলবন্দ হইছে। সড়কের ওপরত আছোং পরিবার নিয়া। কাজকাম নাই। খুব সমস্যা।’
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচ এম রাকিব হায়দার বলেন, সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির দিকে জেলা, উপজেলা ও পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ নজর রাখছে। ইতিমধ্যে দুর্গত পরিবারগুলোর জন্য ত্রাণসহায়তা হিসেবে ১৩ লাখ টাকা ও ৯০ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে তিস্তার পানি বেড়ে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার নদীতীরবর্তী ১৫টি গ্রামের পাঁচ হাজারের বেশি পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ খাঁন বলেন, ‘পূর্ব ছাতনাই ও ঝাড়সিংহেরস্বর মৌজার প্রায় ১ হাজার ২০০ পরিবারের বাড়িঘরে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। পানি বাড়তে থাকায় মানুষজন আতঙ্কের মধ্যে আছেন।’
পাউবো নীলফামারীর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আতিকুর রহমান বলেন, ‘শনিবার দিবাগত রাতে তিস্তার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে। রোববার দুপুরের পরে পানি আবার বিপৎসীমার নিচে নেমে আসে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় তিস্তা ব্যারাজের সব কটি জলকপাট (৪৪টি) খুলে রাখা হয়েছে।’
তিস্তা নদীর পানি বেড়ে কুড়িগ্রামে নদীতীরবর্তী এক হাজারের বেশি পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া তিস্তা ছাড়াও জেলার প্রধান প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি বাড়ছে। পাউবোর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও ধরলা, গঙ্গাধর, দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে।
গতকাল সন্ধ্যা ছয়টায় ধরলা নদীর পানি তালুক শিমুলবাড়ী পয়েন্টে ৬২ সেন্টিমিটার, দুধকুমার নদ পাটেশ্বরী পয়েন্টে ৪৪ সেন্টিমিটার এবং ব্রহ্মপুত্র নদ চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ২ দশমিক ৪৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
তিস্তার পানি বেড়ে রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার চরাঞ্চলসহ নিম্নাঞ্চলে পানি উঠেছে। নদীতীরবর্তী উপজেলার ৫০০ পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পাউবো সূত্রে জানা যায়, শনিবার দিবাগত রাতে কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে। সোমবার বিকাল চারটার দিকে এই পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৩১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।