প্রতিনিধি 29 July 2025 , 5:18:53 প্রিন্ট সংস্করণ
ঢাকা, ২৯ জুলাই ২০২৫:
দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক দৃশ্যমান উন্নয়নের সুফল দিতে পারছে না সাধারণ মানুষকে। সম্প্রসারিত এই মহাসড়কে তৈরি হয়েছে আধুনিক অবকাঠামো যেমন সার্ভিস লেন, ফুট ওভারব্রিজ, ও সড়ক বিভাজক। তবে অবৈধ দখল, নিয়ম ভাঙা এবং হকারদের দৌরাত্ম্যের কারণে এই আধুনিকতা পরিণত হয়েছে দুর্ভোগের নতুন ফাঁদে। হেমায়েতপুর, সাভার, ও নবীনগরসহ বিভিন্ন অংশে যানজট, চাঁদাবাজি এবং অব্যবস্থাপনার কারণে প্রতিদিন নাকাল হচ্ছেন হাজারো যাত্রী ও চালক।
সার্ভিস লেন দখলের মহোৎসব ও মূল সড়কে নৈরাজ্য
মহাসড়কের বিভিন্ন অংশে দেখা গেছে, সার্ভিস লেনগুলো প্রাইভেট কার ও ট্রাকের অবৈধ দখলে রয়েছে। এর চেয়েও গুরুতর বিষয় হলো, বাস ও গণপরিবহনগুলো মূল লেনে যাত্রী ওঠানামা করাচ্ছে, যা নিত্যদিনের যানজটের অন্যতম কারণ। বাসচালকদের দাবি, যাত্রীদের চাপ এবং সময় বাঁচানোর তাগিদে তারা এই নিয়ম ভাঙতে বাধ্য হচ্ছেন। কিন্তু এর ফল ভোগ করছেন সাধারণ যাত্রীরা। তাদের অভিযোগ, মাত্র এক কিলোমিটার রাস্তা পার হতে ঘণ্টারও বেশি সময় লেগে যাচ্ছে। বিশেষ করে বিকেলে সার্ভিস লেনগুলো হকারদের দখলে চলে যাওয়ায় পথচারী চলাচল তো দূরের কথা, যান চলাচলও প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।
অভিযান চলে, কিন্তু সুফল টেকে না
সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে ঢাকা জেলা উত্তর ট্রাফিক পুলিশ। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরাফাতুল ইসলাম জানান, পুলিশ নিয়মিত জরিমানা ও ভ্রাম্যমাণ দোকান উচ্ছেদ করছে। তবে তিনি নিজেও স্বীকার করছেন যে, সড়ক ব্যবহারে সাধারণ মানুষ এখনো ভোগান্তিতে আছেন। মূল লেনে গাড়ি থামিয়ে যাত্রী তোলার বিষয়ে তিনি চালক ও সাধারণ নাগরিক উভয়কেই দায়িত্বশীল আচরণ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
এদিকে, অবৈধ দোকান বসিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠলেও পুলিশের কাছে এ বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। তবে অভিযোগ পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনও জানিয়েছে, বারবার অভিযান চালানো সত্ত্বেও কিছু চক্র আবারও সড়ক দখল করে নিচ্ছে, ফলে যানজট ও দুর্ভোগের অবসান হচ্ছে না।
সমাধানে দরকার সমন্বিত উদ্যোগ
সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুবকর সরকার মনে করেন, শুধু আইন প্রয়োগ করে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা, জনপ্রতিনিধিদের আন্তরিকতা এবং সর্বোপরি সাধারণ মানুষের সচেতনতা।
বিশেষজ্ঞরাও একই সুরে কথা বলছেন। তাদের মতে, অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি এর সঠিক ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণই উন্নয়নের সফলতা নিশ্চিত করতে পারে। উন্নয়নের সুফল পেতে হলে প্রশাসন, চালক, যাত্রী, ব্যবসায়ী—সব পক্ষকেই দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। অন্যথায় নতুন করে যতই উন্নয়ন হোক না কেন, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের নাগরিক দুর্ভোগ থেকে মুক্তি মিলবে না। এই দুর্ভোগের চক্র ভাঙতে সমন্বিত এবং টেকসই উদ্যোগ এখন সময়ের দাবি।