অন্যান্য

এক বছর পরেও দুর্বল পুলিশ, আইজিপি বললেন, ‘দুই ধরনের আনুগত্যের বিভাজন চলছে’

  প্রতিনিধি 10 August 2025 , 6:33:09 প্রিন্ট সংস্করণ

এক বছর পরেও দুর্বল পুলিশ, আইজিপি বললেন, ‘দুই ধরনের আনুগত্যের বিভাজন চলছে’
ঢাকা: গত বছরের ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনীর কার্যকারিতা এবং মনোবল এখনো কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় ফিরে আসেনি। এক বছর পেরিয়ে গেলেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক না হওয়ার পেছনে পুলিশের অভ্যন্তরীণ বিভাজন এবং নৈতিক সংকটকে প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করছেন আইজিপি ও অপরাধ বিশেষজ্ঞরা।
গণঅভ্যুত্থানের সময় ছাত্র-জনতার ওপর দমন-পীড়নের পর তীব্র গণরোষে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল পুলিশ। তখন অনেক থানা ও পুলিশ স্থাপনায় হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়, এমনকি কিছু পুলিশ সদস্য ইউনিফর্ম খুলে পালিয়ে যান। সেই দুঃসময় পেরিয়ে গেলেও পুলিশ এখনো পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি।
‘দুই ধরনের আনুগত্যের বিভাজন’
পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম গতকাল ইত্তেফাককে বলেন, গত ১৫ বছরে রাজনৈতিক আনুগত্যের ভিত্তিতে পুলিশে নিয়োগ ও পদোন্নতি হয়েছে। এই দুই ধরনের আনুগত্যের বিভাজনের মধ্য দিয়ে এক বছরে পুলিশ বাহিনীকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। তিনি বলেন, “ফ্যাসিস্ট সরকারের নিপীড়ন নির্যাতনে পদোন্নতি বঞ্চিত হয়েছেন, তারাও এই এক বছরে পদোন্নতি পেয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। তারাও এক ধরনের আনুগত্যের মধ্য দিয়ে পুলিশে রয়েছেন।” আইজিপি মনে করেন, পুলিশকে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে আরও সময় লাগবে। তবে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পুলিশ কাজ করছে বলে তিনি জানান।
মনোবল তলানিতে, জনমনে স্বস্তি নেই
অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গণঅভ্যুত্থানের পর পুলিশ সদস্যদের মধ্যে এক ধরনের ‘মব ভায়োলেন্সের’ ভয় কাজ করছে, যার কারণে তারা এখনো শক্ত হাতে আইনশৃঙ্খলার দায়িত্ব পালনে দ্বিধাগ্রস্ত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক বলেন, “গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে অনেক পুলিশ সদস্য নৈতিক ও মনোবল সংকটে পড়েছেন। এই পরিস্থিতি এত দ্রুত স্বাভাবিক হবে না।”
এদিকে, পুলিশের মনোবল তলানিতে চলে যাওয়ার বিষয়টি আইজিপি নিজেও স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, গত ১৫ বছরে রাজনৈতিকভাবে পুলিশকে ব্যবহারের কারণে তাদের মনোবল তলানিতে চলে গিয়েছিল। সেখান থেকে ধীরে ধীরে এখন একটা গোছালো জায়গায় এসেছে, কিন্তু পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি।
পরিবর্তন ও চ্যালেঞ্জ
গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে পুলিশকে কাজে ফেরানো ছিল অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। নানামুখী পদক্ষেপের মাধ্যমে পুলিশকে পুনরায় সক্রিয় করা হয়। এর অংশ হিসেবে সারা দেশে ৫০ সহস্রাধিক পুলিশের রদবদল, ৬৩ পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যকে গ্রেফতার এবং ৫৫ জনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। তবে এই পদক্ষেপগুলো সত্ত্বেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির পুরোপুরি উন্নতি হয়নি বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
পুলিশ সদর দপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত এক বছরে খুনের মামলা হয়েছে ৩ হাজার ৮৩২টি, যা উদ্বেগজনক। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আরিফুর রহমান তুহিন মনে করেন, অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত ছিল সবার আগে পুলিশকে পুনর্গঠন করা এবং একটি নিরপেক্ষ পুলিশ কমিশন গঠন করে এই বাহিনীকে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপমুক্ত করা।
পুলিশকে তার হারানো গৌরব ও জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হলে আরও সময়, অভ্যন্তরীণ সংস্কার এবং স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

আরও খবর

                   

জনপ্রিয় সংবাদ