প্রতিনিধি 7 January 2025 , 11:50:49 প্রিন্ট সংস্করণ
আনোয়ার সাঈদ তিতু
দেশের উত্তরের সীমান্তঘেঁষা জেলা কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে এক সময়ের খরস্রোতা ধরলা-বারোমাসিয়া নদীসহ বিভিন্ন নদনদী শুকিয়ে গেছে। পানির পরিবর্তে নদী এখন সবুজ ফসলের মাঠে পরিণত হয়েছে। জেলেদের পরিবর্তে দেখা মিলছে চাষিদের ব্যস্ততা। নদীর বুকে চাষ হচ্ছে ধান, ভুট্টা, কলাসহ নানা ফসল। সরেজমিনে এমন চিত্র দেখা মেলে।
চাষিরা বলছেন, এসব নদনদীর বুকে তীরবর্তী চাষিরা টানা দেড় যুগ ধরে বোরো ধান, ভুট্টা, বাদাম, কলা, মরিচ, বেগুন, টম্যাটো, বাঁধাকপি, সরিষা, আলু করলাসহ নানামুখী ফসলের চাষাবাদ করে আসছেন। নদীতে পানির ধারণক্ষমতা না থাকায় বর্ষাকালে অল্প বৃষ্টিপাতে বন্যা হয়ে যায়। ফলে বছরে দুই বার চাষাবাদ করা গেলেও এখন আবহাওয়ার কারণে শুষ্ক মৌসুমে তিন-চার ফসল ফলাতে পারছেন কৃষক।এতে করে বর্ষা কাটিয়ে খরা মৌসুমের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হচ্ছেন এই অঞ্চলের কৃষক।
বয়োবৃদ্ধরা জানান, এক থেকে দেড় যুগ আগেও পানির প্রবাহ ও প্রাণের স্পন্দন ছিল ধরলা ও বারোমাসিয়া নদীতে। এই দুই নদীর প্রবল স্রোতের কারণে আঁতকে উঠত নদীপাড়ের হাজারো বাসিন্দা। এখন পানি না থাকায় ধরলা ও বারোমাসিয়া নদীতে ছোট বড় দুই থেকে আড়াই শতাধিক চরের সৃষ্টি হয়েছে। বন্যার সময় দুই-তিন মাস বাদে বছরের বাকিটা সময় নদীর বুক চিরে পুরোদমে চলছে চাষাবাদ। সীমান্তঘেঁষা এই নদী দুইটি এখন অঞ্চলের মানুষের জীবন- জীবিকার একমাত্র আয়ের প্রধান উৎস। নদী শুকিয়ে যাওয়ায় এখন জীবন-জীবিকায় কৃষি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।
এ দিকে ধরলা ও বারোমাসিয়ার বুকে চাষাবাদ করে কৃষকদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এলেও নদীতে নাব্য সংকট দেখা দেওয়ায় ইঞ্জিনচালিত নৌকা বা ডিঙ্গি নৌকা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহকারী জেলে পরিবারগুলো দুর্দিনে দিন পার করছেন। পেশা হারিয়ে অনেকেই দিনমজুর, রিকশাচালক, মালিসহ নানা পেশা বেছে নিচ্ছেন।
উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের কৃষ্ণানন্দ এলাকার চাষি কবিদুল ইসলাম বলেন, ‘বারোমাসিয়ার তীরে দুই বিঘা জমিতে বেগুনের চাষাবাদ করেছি।’
শিমুলবাড়ী এলাকার ভুট্টাচাষি জমির উদ্দিন ও আব্দুল হানিফ জানান, তারা প্রত্যেকেই ধরলার বুকে পাঁচ বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষাবাদ করছেন। তাদের মতো ঐ এলাকার শত শত কৃষক ধরলার বুকে ভুট্টার রোপণ করেছেন। আবহাওয়া অনুকূল থাকলে এ বছরও ভুট্টার ভালো ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে।
গোরকমণ্ডল কৃষ্ণানন্দ বকশি মরিচচাষি গোবিন্দ চন্দ্র রায় জানান, বারোমাসিয়ার বুকে দুই বিঘা মরিচের চাষাবাদ করেছেন।
ফুলবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোছা, নিলুফা ইয়াছমিন জানান, ধরলা ও বারোমাসিয়াসহ নদীর অববাহিকার কৃষকরা ১১৫ হেক্টর জমিতে আলু, ১০ হেক্টরে মরিচ, ২৫ হেক্টরে বাঁধাকপি ও ফুলকপি, ১৫ হেক্টরে বেগুন, ২৫ হেক্টরে সরিষা, ৯৫০ হেক্টরে ভুট্টা, ১৫ হেক্টরে ডাল, ১৫ হেক্টরে বাদাম, ৮০ হেক্টরে কলা ও ১০ হেক্টর জমিতে টম্যাটো চাষাবাদ করেছেন। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় চরাঞ্চলের এ সব ভালো ফলন হয়েছে। আলু, মরিচ, ফুলকপি ও বাঁধাকপির দাম কিছুটা কমলে লোকসান গুনতে হবে না কৃষকদের।