শূন্য থেকে শতকে আসা এক সফল তরুণের গল্প এটি। অপ্রতিরোধ্য গতিতে যার এগিয়ে চলা। সময়ের সঙ্গে যিনি নিজেকেই ছাড়িয়ে গেছেন। অর্জন করে নিয়েছেন অসামান্য জনপ্রিয়তা। কলমের আঁচড়ে সৃষ্টি করে চলেছেন হাজারও মানুষের মনের ছন্দ। যার সৃষ্ট অন্তমিলে সুর বসিয়ে গাইতে চান দেশের যেকোনো সংগীত তারকা। হ্যাঁ, বলছি স্বনামধন্য গীতিকবি এফ এ রফিক চিশতী জীবনের কথা।
তরুণ প্রজন্মের অন্যতম জনপ্রিয় এবং সফল গীতিকবি জীবন। তাকে নিয়ে বাড়িয়ে বলারও কিছু নেই। কারণ নিজের যোগ্যতায় মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। গত ২৪ বছর ধরে উপহার দিয়েছেন অসংখ্য শ্রোতাপ্রিয় গান। লিখেছেন দেশের জনপ্রিয় প্রায় সব শিল্পীর জন্য। এই বিশেষ দিনে জীবনের ক্যারিয়ার ও গানের ভুবনে আসার গল্প প্রসঙ্গে জেনে নেওয়া যাক।
দুরন্ত কৈশোরের জীবন: জন্ম- নেত্রকোনা জেলার আটপাড়া উপজেলা তেলিগাতি ইউনিয়ন বাগড়া মাটিকাটা গ্রামে।
পিতা মৃত আবু বক্কর সিদ্দিক (মাস্টার)
মাতা সালেহা আক্তার ফজিলত
জন্ম ৬-১২-১৯৭৭ ইং।
গ্রামের অন্য আট-দশটা কিশোরের মতো জীবনও ছিলেন এক দুরন্ত বালক। সারাদিন খেলাধূলা আর বন্ধুদের সঙ্গে হইহুল্লোড় করেই কাটতো। কিন্তু নিয়তির নির্মমতায় মাত্র। তারপর এক কঠিন বাস্তবতার মুখে পড়ে জীবনের ছেলেবেলা। তবুও মায়ের অদম্য চেষ্টা আর মামাদের ভালোবাসায় জীবন ধীরে ধীরে স্কুলের গণ্ডি পার করেন। শত আবদার চোখের জলে মুছে ফেলে নতুন করে এগিয়ে চলার স্বপ্ন দেখেন। গ্রামের স্কুল থেকে মাধ্যমিক পেরিয়ে উচ্চ মাধ্যমিকের জন্য পাড়ি জমান নেত্রকোনা । নেত্রকোনা চন্দ্রনাথ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে শুরু হয় নতুন জীবনের পথচলা।
গানের খাতায় হাতেখড়ি: তখন ১৯৯৭ সাল। স্কুল জীবন থেকে একটা আগ্রহ ছিল ছিল উপন্যাস লেখার এবং শখ করে যাত্রাপালা তে অভিনয় । কিন্তু বিভিন্ন সময় বিভিন্ন হাটবাজারে খোলা মাঠে চলাফেরার পথে দেখি বাউল গানের আসর হয় । আমি এগুলো দেখতাম, হঠাৎ বাউল গানের প্রতি আমার একটু একটু ভালবাসার সৃষ্টি হয়। একদিন কলেজ থেকে বাসায় ফিরছিলাম। হাঁটতে হাঁটতে হঠাত মাথায় কয়েকটি লাইন আসে। বাসায় গিয়ে লিখে রাখলাম কাগজে। আমি তখন ভেবে দেখলেন লাইনগুলো গানের মতই। তারপর গানের সাধারণ আঙ্গিকে তিনটি অংশ পূরণ করলাম। নিজের কাছেই ভালো লেগে গেলো!
এরপর আমার ওস্তাদ সোলায়মান সরকার এর সহযোগিতায় একে একে লিখে ফেললাম ১০০ টি গান । মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে গানগুলোকে শিল্পীর কণ্ঠে গাওয়ানোর স্বপ্ন। পড়াশোনার পাশাপাশি খুঁজতে থাকি গান প্রকাশের বিভিন্ন মাধ্যম। দিনের পর দিন যায়, স্বপ্ন হাতে ধরা দেয় না। দমে যাওয়ার পাত্র নন জীবন। হতাশাকে এড়িয়ে নিজের গতিতে ছুটে চলছি রাস্তায়। কয়েকটি টিউশনি করে নিজের খরচ চালিয়ে কখনো শিল্পী, কখনো সুরকার আবার কখনো সংগীত পরিচালকদের খোঁজে স্টুডিওতে যেতে থাকি।
জীবনের কথায় কণ্ঠ দিয়েছেন যারা: দীর্ঘ ২৪ বছরে মাথায় আমার লেখা প্রথম একটি গানের বই তথ্যের সন্ধানে তার মধ্যে ৫৬ টি তত্ত্বের উপরে গান রয়েছে ১১৫০ টি।
এর মধ্যে অসংখ্য গান হয়েছে জনপ্রিয়। তার লেখা গানে কণ্ঠ দিয়েছেন দেশের বিভিন্ন প্রজন্মের অনেক জনপ্রিয় ও গুণী শিল্পী। এর মধ্যে রয়েছেন বাউল হবিল সরকার, বাউল রুবি সরকার, বাউল শহীদ মাইজভান্ডারী, বাউল নুরুল আমিন সরকার, বাউল আফরোজা সরকার, লাবনী সরকার, বাবুল বিপাসা সরকার ঝিলমিল সরকার,প্রমুখ।
বিষয়ভিত্তিক গান: গানের খাতায় কোনো নির্দিষ্ট গণ্ডিতে নিজেকে আবদ্ধ করে রাখেননি এফ এ রফিক চিশতী। প্রেম-বিরহের সঙ্গে শব্দের মিলনে তুলে এনেছেন মানবতা ও মানুষের প্রতি দায়িত্ববোধের কথা।
বর্তমানে উদয় বাউল একাডেমী সহ একটি গানের একাডেমী স্কুল রয়েছে সেখানে ১৫ থেকে ২০ জন ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে এবং খুব সুনামধন্যের সাথে গান শিখিয়ে ভাল শিল্পী আগমন হবে বলে আশা করেন গীতিকার এফ এ রফিক চিশতী।