মহামারির ভয়াল স্মৃতি কাটিয়ে ওঠার কিছুদিনের মধ্যেই ফের দুশ্চিন্তার ভাঁজ এশিয়াজুড়ে। করোনা ভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্টের আক্রমণে চীন, হংকং, সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে সংক্রমণ। প্রতিদিনই এসব দেশে সংক্রমণের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে, চাপ বাড়ছে হাসপাতালগুলোতে।
বিশ্বের একাধিক সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, এশিয়ায় এ নতুন ঢেউয়ের পেছনে রয়েছে ওমিক্রনের JN.1 ভ্যারিয়েন্ট এবং এর সাবভ্যারিয়েন্ট LF.7 ও NB.1.8। এসব রূপ BA.2.86 থেকে উদ্ভূত এবং এদের রয়েছে অন্তত ৩০টি মিউটেশন, যা পূর্বের সংক্রমণ বা টিকায় সৃষ্ট প্রতিরোধ ক্ষমতাকে পাশ কাটাতে সক্ষম।
সিঙ্গাপুরে সংক্রমণের উল্লম্ফন
সিঙ্গাপুরে ২০২৫ সালের মে মাসের প্রথম সপ্তাহেই সংক্রমণের সংখ্যা ১৪ হাজার ছাড়িয়েছে, যা এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে ছিল প্রায় ১১,১০০। নতুন এই ঢেউয়ে হাসপাতালগুলোতেও ভর্তির হার বেড়েছে। যদিও এখন পর্যন্ত কোনো ভ্যারিয়েন্ট অতিমাত্রায় প্রাণঘাতী হয়েছে এমন প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
ভাইরাস রূপান্তরের বিপজ্জনক দিক
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, JN.1 ভ্যারিয়েন্ট মানবদেহে পূর্বে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডির ক্ষমতা কমিয়ে দিতে সক্ষম। ফলে আগে সংক্রমিত ব্যক্তিরাও আবার আক্রান্ত হচ্ছেন। একইসঙ্গে টিকার সুরক্ষা কার্যকারিতাও কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়ছে এই নতুন রূপের ক্ষেত্রে।
তবে কিছুটা স্বস্তির খবর হলো, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) জানিয়েছে, XBB.1.5 ভিত্তিক টিকা JN.1 প্রতিরোধে কার্যকর প্রমাণিত হচ্ছে। এই টিকাই বর্তমানে একমাত্র স্বীকৃত প্রতিরক্ষামূলক উপায় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
চীন ও হংকংয়ের উদ্বেগজনক চিত্র
চীনের বিভিন্ন প্রদেশ ও হংকংয়ে নতুন করে সংক্রমণ বৃদ্ধির ঘটনা স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের চিন্তায় ফেলেছে। সরকারি পর্যায়ে সতর্কতা জারি করা হয়েছে এবং হাসপাতালগুলোতে বেড সংখ্যা ও অক্সিজেন সরবরাহ বাড়ানোর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। হংকংয়ে শিশু ও বৃদ্ধদের মধ্যে সংক্রমণ তুলনামূলক বেশি দেখা যাচ্ছে।
বাংলাদেশের জন্য কী বার্তা?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্ব যেভাবে আন্তঃসংযুক্ত হয়ে পড়েছে, তাতে করে এই সংক্রমণ ঢেউ যে কোনো সময় বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতেও আছড়ে পড়তে পারে। তাই সীমান্তে স্বাস্থ্য পরীক্ষা, আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের স্ক্রিনিং এবং সতর্কতামূলক টিকাদান কর্মসূচি জোরদার করার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ
করোনা অতীত হলেও শেষ হয়ে যায়নি। ভাইরাসের রূপান্তর ও তার ছড়ানোর গতি আমাদের আবারও সচেতন করে তুলছে। নতুন করে যেন সেই ভয়াবহ দিনগুলো ফিরে না আসে, সে জন্য এখনই আমাদের প্রস্তুতি ও সচেতনতা জরুরি।