সাইফুল ইসলাম
ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা বিএনপির আয়োজিত স্থানীয় সমির উদ্দীন স্মৃতি মহা বিদ্যালয় মাঠে বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৩ টায় বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, প্রশাসন এখন পর্যন্ত ফ্যাসিবাদ মুক্ত হতে পারেনি। এই ফ্যাসিবাদ মুক্ত হতে না পারার প্রধান কারণ হচ্ছে, এত ডিপ রুটে চলে গিয়েছিল ফ্যাসিবাদ, সেখান থেকে ফ্যাসিবাদ বিরোধী লোকজনকে খুঁজে বের করা কঠিন হচ্ছে। এখানে আমাদের যেটা প্রয়োজন ছিল ঐক্য অটুট রাখা। এই সরকারের সমস্ত কাজকে সমর্থন দিয়ে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করা। নিজের মধ্যকার সম্মিলিত ঐক্যের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, এই মুহূর্তে আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল আমরা ফ্যাসিবাদকে সরিয়েছি, হাসিনাকে সরিয়েছি। এখন একটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আমাদেরকে অতিদ্রুত সংস্কারের মধ্য দিয়ে তারা নির্বাচনে যাবে। যে নির্বাচনটা অবাধ নিরপেক্ষ হবে। বিএনপি সাথে আওয়ামী লীগের তুলনা নয়
বিএনপি ও আওয়ামী লীগ মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ’ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এটি ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে এই বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এটি একটি পরিকল্পিত অপপ্রচার। এটা করেই কিন্তু যারা দুষ্টু, যারা সবসময় ফয়দা লুটতে চায়। বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ তুলনা হতেই পারে না। কারণ আওয়ামী লীগ কোনো গণতান্ত্রিক দল নয়, গণবিরোধী একটা দল। গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে গণতান্ত্রিক মানুষকে হত্যাকারী একটি দল। আর বিএনপি হচ্ছে গণতন্ত্রকে জীবন্ত করার দল। ১৯৭৫ সালে স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান একদলীয় রাজনীতি থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্র নিয়ে এসেছিলেন। বেগম খালেদা জিয়া সংসদীয় গণতন্ত্র নিয়ে এসেছেন। আমরাই কেয়ারটেকার সিষ্টেম চালু করেছি। সুতরাং এ দেশে গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার ফান্ডামেন্টাল জিনিস প্রত্যেকটা আমাদের হাতে গড়া এবং শান্তিপূর্ণ উপায়ে ক্ষমতা হস্তান্তর আমরা করেছি।
জুলাই গণহত্যায় দলটির কমপক্ষে ৪২২ জন নেতাকর্মী শহীদ হয়েছেন বলে জানিয়েছে বিএনপি।
গতকাল বিকালে জনসমাবেশে এই পরিসংখ্যান তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দেশজুড়ে শহীদ হওয়া সব শ্রেণিপেশা-রাজনীতির মানুষগুলোর এই বিশাল অংশ যে বিএনপিরই নেতাকর্মী এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং আমাদের সুদীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রামের অনিবার্য ফল।
তিনি বলেন, দেশের স্বাধীনতাকে যখনই গ্রাস করেছে স্বৈরতন্ত্র, প্রতিবারই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করেছে বিএনপি। ১৬ বছরের স্বৈরাচারী দুঃশাসনকে চূর্ণ করে, গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশের জনগণ - মুক্তির স্বাদ পায়, গণতন্ত্রের পথ সুগম হয়। অসংখ্য ব্যক্তি ও পরিবার রয়েছে, যাদের বছরের পর বছর ধরে ত্যাগের মহিমায় আমরা ফ্যাসিবাদ মুক্ত বাংলাদেশ পেয়েছি। তিনি বলেন, বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুযায়ী জুলাই গণহত্যায় ১৩ আগস্ট পর্যন্ত সমগ্র বাংলাদেশে শহীদ হন ৮৭৫ জন। যার মধ্যে কমপক্ষে ৪২২ জন বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত। দেশজুড়ে শহীদ হওয়া সকল শ্রেণিপেশা-রাজনীতির মানুষগুলোর এই বিশাল অংশ যে বিএনপিরই নেতাকর্মী এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং আমাদের সুদীর্ঘ রাজনৈতক সংগ্রামের অনিবার্য ফল। পোশাক শ্রমিক কিংবা রিকশাচালক, পাবলিক কিংবা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, বাম কিংবা ডান আদর্শের অনুসারী, সকল মত ও পথের রাজনৈতিক কিংবা অরাজনৈতিক ব্যক্তি হতাহতের পরিচয় যাই হোক না কেন, প্রতিটি প্রাণের মূল্য ও রক্তের মর্যাদা সমান।
মির্জা ফখরুল বলেন, রাজনৈতিক নেতৃত্বের অবদানে গড়ে উঠা দীর্ঘদিনের ঐক্যকে ধারণ করে, গণতন্ত্রের পক্ষের সব শক্তির বলিষ্ঠ ভূমিকায় ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদের পতন ঘটে। বাংলাদেশের জনগণের এই বিজয় শুধুই দেশের মালিকানা ফিরে পাওয়ার বিষয় নয়, এটি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রার প্রতিশ্রুতি, যা অসীম ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা পদত্যাগের জন্য যে জাতীয় ঐকমত্য আমরা দেখেছি তা কিন্তু হঠাৎ করে গড়ে ওঠেনি। এটি মূলত অবৈধ সরকারের অত্যাচার-অবিচার, দুর্নীতি-দুঃশাসন, বঞ্চনা-অবজ্ঞা এবং শোষণ-নির্যাতনের বিরুদ্ধে মানুষের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। বিএনপি দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল হিসেবে গণ-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়ে গণ-অভ্যুত্থানের সর্বশক্তি দিয়ে রাজপথে নেমে আসে বিএনপি ও সব অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন। জনগণের কাতারে নেমে আসে বিএনপির সাথে সমমনা সব রাজনৈতিক দল তথা গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তিগুলো।
শিল্পাঞ্চলগুলোতে অস্থিরতা ফ্যাসিবাদের দোসরদের ইঙ্গিতে
দেশের শিল্পাঞ্চলগুলোতে চলমান অস্থিরতা ফ্যাসিবাদের দোসরদের ইঙ্গিতে হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ইন্ডাস্ট্রিয়াল বেল্টগুলোতে যে অশান্তি সৃষ্টি করা হয়েছে, এতে সুস্পষ্টভাবে ফ্যাসিবাদের দোসরদেরই ইঙ্গিত আছে। এই জিনিসগুলো থেকে মনে হচ্ছে যে, একটা চক্রান্ত চলছে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সোস্যাল মিডিয়ায় বা সাংবাদিকদের কাছে থেকে শুনে যা বুঝি যে, সীমান্তের ওপার থেকে কথিত ফ্যাসিবাদী হাসিনার অডিও-টডিও ফাঁস করে দেয়া হয়, যেগুলোতে বিভ্রান্তিকর খবর থাকে। অন্য দিকে আবার প্রচারণা চালানোর চেষ্টা করা হচ্ছে যে, বাংলাদেশে যারা ধর্মীয়ভাবে সংখ্যালঘু তাদের ওপরে অত্যাচার-নির্যাতন চালানো হচ্ছে। যেটা টোটালি বাঁকাওয়াজ। এটা আমরা শুধু নয়, ভারত থেকে যেসব সাংবাদিকরা এসেছিলেন তারা পর্যন্ত দেখে গেছেন। তারা রিপোর্ট করেছেন, তারা বলেছেন, যেটা বলা হচ্ছে সেটা সঠিক নয় বলে তিনি উল্লেখ্য করেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে কাজ করতে দিন
মির্জা ফখরুলব ইসলাম আলমগীর বলেন, এখন আমাদের যেটা সবচেয়ে প্রয়োজন ধৈর্য ধরে সহনশীলতার সাথে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে কাজ করতে পারে তাতে সহায়তা করা। অতিদ্রুত সংস্কার কাজে তারা হাত দিতে যাচ্ছেন। আমরা মনে করি, এই কাজগুলো দরকার। এই কাজগুলো অতিদ্রুত শেষ করে একটা নির্বাচনের দিকে যেতে হবে। যে নির্বাচনটা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হবে এবং জনগণ অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনে ভোট দিয়ে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করবে। তারপরই বাকি কাজগুলো তারা সম্পন্ন করবে। তিনি বলেন, আমরা পরিষ্কার করে বলেছি, নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এসব ক্ষেত্রে সংস্কার করতে হবে। অন্যান্য সংস্কার যেগুলো আছে সেটা যে সরকার জনগণের ভোটে আসবে তারা করবে।
বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো রাষ্ট্র মেরামতে প্রণীত ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাবের কথাও বলেন বিএনপি মহাসচিব।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এ্যাডভোকেট সৈয়দ আলমের সভাপতিত্বে ও সধারণ সম্পাদক ড. টিএম মাহাবুবর রহমানের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- ডক্টরস্ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ'র মহাসচিব ডাক্তার আব্দুস সালাম,কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য ও ঠাকুরগাঁও- আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জেড মূর্তুজা চৌধুরী তুলা, ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সাল আমিন, সহ-সভাপতি কাজী ফাহিম উদ্দীন, ওবাদুল্লাহ মাসুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু হায়াত নুরুন্নবী, জেলা মহিলা দলের সভানেত্রী সূরাতুন নেচ্ছা, ঠাকুরগাঁও জেলা আইনজীবি সমিতির সভাপতি এ্যাভোকেট জয়নাল আবেদীন, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা বিএনপির সহ সভাপতি এ্যাভোকেট ইউসুফ আলী, ফয়জুল ইসলাম হিরু, সাংগঠনিক সম্পাদক খোরশেদ আলম, এ্যাভোকেট আবেদুর রহমান, শুরুতেই কোরআন থেকে তালায়াত করেন উপজেলা ওলামা দলের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা হাসান আলী।
এসময় উপস্থিত ছিলেন- বিভাগীয়, জেলা ও ঠাকুরগাঁও জেলার ৫ টি উপজেলার বিএনপির নেতৃবৃন্দ।