কবিতা

কবিতাঃ- চিঠির উত্তর // কলমেঃ- মোঃ সাগর বিশ্বাস

  প্রতিনিধি 13 July 2025 , 5:59:40 প্রিন্ট সংস্করণ


চিঠির উত্তর


প্রিয় কুহেলিকা—

কেমন আছো? আশা করি ভাল আছো,

 কিন্তু তোমার পত্রানুবাদে বুঝেছি ক্লেশাক্ত হৃদয়ের উদ্গিরিত লাভায় ঝলসে গেছে তোমার দিনাতিপাত।

অদ্য প্রাতে হস্তগত হয়েছে তোমার কোমল হাতের পরশ মাখানো, হৃদয়ের আকুতি দিয়ে লেখা, নয়নের জলে ভেজা একখানা পত্র।

 পত্রের প্রতিটি শব্দ – যেন বর্শার তীক্ষ্ণ ফলার মত —

এফোঁড়ওফোঁড় করে দেয় আমার হৃদপিণ্ড।

নিজেকে বড্ড অপরাধী মনে হয়–

বিচ্ছেদ দহনে তোমাকে পুড়িয়েছি বলে।

তোমাকে বঞ্চিত করার স্পর্ধা কস্মিনকালেও ছিলনা না আমার, তবুও বঞ্চনার আগুনে দুজনকেই পুড়তে হয়েছে। এ দিনটি হয়তো কখনোই দেখতে হতো না —

যদি না অপারগতার বেরি পড়তো পায়ে।

 অনিচ্ছা সত্ত্বেও তোমার অন্তরে আঘাত দিতে হয়েছে, সেজন্য পত্রের শুরুতেই মার্জনার দরখাস্ত রাখছি।

হৃদয়ের গহীনে যে দহনের বসবাস,কষ্টদের চোখ রাঙানি, সবটুকুই সইতে হয় নিরবে, মাঝেমধ্যে নেভানোর ব্যর্থ চেষ্টা করি নিভৃতে চোখের জলে।

নিয়তির নির্মমতার কাছে হার মানতে হয়েছিল বলেই আজ দুজনার মাঝে রচিত হয়েছে এক আকাশ ব্যবধান, কষ্টের হিমালয়, আর অশ্রুর জলধি।

 অসীম কষ্টের হিমালয় পাড়ি দিয়ে

আমাদের আর কখনো দেখা হবে কিনা জানিনা,

যদি কখনো দেখা হয়-

সেদিন হয়তো অনাহুত নোনা জলের শ্রাবণ ধারায়

ধুয়ে মুছে যাবে হৃদয়ের দুঃখ যন্ত্রণা যত।

 তোমাকে কষ্ট দেবো ভেবে আমি পা বাড়ায়নি পথে, আবার ফিরে যাবো ভেবেও ছাড়িনি ঘর।

এ যেন এক দৈব বাণীর প্রতিশ্রুত ব্যক্ত হয়েছে আমার জীবনে।

আমার কথাগুলো হয়তো তোমার কাছে অসঙ্গতিপূর্ণ মনে হতে পারে,

 যদি অতীত কিছু ঘটনার পর্যালোচনা করতে সক্ষম হও সত্যতা খুঁজে পাবে শতভাগ।

আমি কবি, আমি সত্যের পূজারী,

সত্য ও সুন্দর ব্যতীত অসত্যের বসবাস নেই এই অন্তরে, যেখানে রয়েছে শুধু কবিতার বসবাস —

আর রয়েছে হীরার চেয়েও মূল্যবান তোমার স্মৃতিগুলো সযতনে সঞ্চিত।

আমিও তোমার মতো একাকিত্বের বিষন্নতায় অঙ্গার হই প্রতিক্ষণ,

তোমার মতোই দিয়ে চলেছি পর্বতসম ধর্যের পরীক্ষা, আমার উপর অর্পিত হয়েছে বিধাতা কর্তৃক যে গুরুদায়িত্ব, চাইলেই তা অপাত্রে ন্যস্ত করা সম্ভব নয়,

বৈরাগ্য জীবন, ভিন্ন,,

 অন্য কোন দ্বার উন্মুক্ত ছিল না আমার সম্মুখে,

 তাইতো নিজেকে কাঁদতে হল-আর তোমাকেও।

অনন্যপায় হয়ে অজস্র বেদনা বটিকা করেছি

গলাধঃকরণ,গড়েছি অশোকিয় অন্তর।

আজও সঙ্গবদ্ধ কষ্টেরা গর্জে ওঠে হৃদয় গভীরে –

শুনতে পাই পাঁজর ভাঙার শব্দ,

তখন জিগীষা জাগে অন্তরে,

পরাজিত হই দায়িত্ব নামক স্বৈরতন্ত্রের অপশাসনে।

দুর্বিষহ যন্ত্রণায় দুর্গম পথ মাড়িয়ে —

ছুটে চলা এই জীবনের একাকিত্বের বিষণ্ণতায়,

তোমার স্মৃতিটুকুই মনোবলের একমাত্র অবলম্বন।

 প্রচণ্ড ইচ্ছা সত্ত্বেও তোমাকে করতে পারিনি এই দুঃসাহসিক অগ্রযাত্রার সারথী,

 অমসৃণ পথের ধকল তোমার সহনীয় মাত্রা অতিক্রম করতে পারে এই ভেবে।

আমি যে ভালোবাসি তোমাকে, এখনো, অনেক বেশি!

এই ভালোবাসা যদি কোন যন্ত্রে পরিমাপ করা যেত, তাহলে পৃথিবীর সকল পরিমাপ যন্ত্রের সর্বোচ্চ সীমা অতিক্রম করতো।

যদি তুমি আমাকে পাষাণ নির্দয় ভেবে থাকো

তাহলে জেনো, আজও ভ্রান্তির সাগরে রয়েছে তুমি,

 তোমাকে এক নজর দেখার অসহনীয় ক্ষুধা

 আমাকেও যে তাড়ায় না,তা কিন্তু নয়,

 তাই বলছি কর্তব্যের নিকট পরাজিত এই অধম কবিকে মার্জনা করো।

তুমি শুধু একাই আমাকে নিয়ে ভাবনার জগতে বিচরণ করছো, নোনাজলের বিসর্জনে গুণছো অপেক্ষার প্রহর তেমনটাও কিন্তু নয়,তোমার কথা আমিও ভাবি।

তোমার কথা ভাবি এক আকাশ অবসাদের পসরায়, তোমার কথা ভাবি দুই নয়নের মুষলধারায়,

 তোমার কথা ভাবি কপোত যুগলের ডানা ঝাপটায়, তোমার কথা ভাবতে ভাবতে দিন পেরিয়ে সন্ধ্যা,

রাত পেরিয়ে হয় ভোর।

অতিবাহিত করেছি প্রতিটি সেকেন্ড, ঘন্টা, দিন,

মাস গুনে গুনে।

পত্রে তুমি অন্তর দাহের সাতকাহনের ফিরিস্তি লিখেছো

 তা শুধু তোমার একার নয়, সমপরিমাণে রয়েছে আমারও।

তুমি তো অন্তর্দাহে শুধু অশ্রুই ঝরিয়েছো,

আর আমি সেটাকে লিখনী করে সৃষ্টি করেছি

অসংখ্য গান, গল্প, কবিতা,

 যা কিনা অমরত্ব এনে দেবে আমাদের ভালোবাসায়।

এই পৃথিবীর যখন আমাকে বড় প্রয়োজন

 তখন কী করে তোমার বাহুডোরে আটকা পড়ে

আঁচলে মুখ গুঁজে থাকবো?

যদি তুমি শুনতে পেতে “কত অসহায় বধূর ক্রন্দন,

 কত বৃদ্ধের আহাজারি,

তবে তোমার অভিযোগ প্রশমন করে গৌরব করতে আমায় নিয়ে।

ভেবেছিলাম ফিরে আসবো,

কোন একদিন ধরা দেব তোমার প্রণয়াবেদনে,

হলো না আর,

 এখন সমাধিস্থ স্বপ্নের স্মৃতিস্তম্ভে দাঁড়িয়ে আছি আমি।যৌবনের প্রারম্ভে যে আশার জাল বুনেছিলাম,

কখন যেন তা একটু একটু করে কেটে দিয়েছে নিরাশার মূষিক শাবক।

এই নশ্বর পৃথিবীতে নাইবা হলো আমাদের মিলন,

 আমার অপেক্ষা অনন্তকালের সেই মহামিলনের। অবধারিত মৃত্যুর কালো ছায়া -যেদিন দখল নেবে আমার শরীর জুড়ে, রয়েছি সেদিনের অপেক্ষায়,

 ফুলে ফুলে ছেয়ে যাবে আমার কফিন —

হাজারো শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পিত হবে আমার শব দেহটিতে, অনন্তকালের যাত্রায় ছুঁয়ে দিও আমাকে একটিবার””।

প্রিয়ংবদা আমার”” সুস্মিতা অনন্যা, তুমি আছো হৃদয়ের মণিকোঠায়, যেখানে উচ্চারিত হয়েছে ভালোবাসার উচ্চারণ,

সেখানে কখনোই ফেলতে পারবে না

বিচ্ছেদি কালো মেঘের ছায়া” পথের দূরত্বের অজুহাতে।

দূরত্ব, সে তো হয় শুধু পথের!

আর মন তো একই সুতায় রয়েছে গাঁথা।

তোমার সাথে কথামালা সাজিয়ে বসায় —

দায়িত্বের ভাটা পড়েছে।

তাই হাজারও নিপীড়িতের ভিড়ে না হয়

করলাম তোমায় উৎসর্গ।

আমাদের ভালবাসার বলিদানে হাসি ফুটুক

 সেই সকল মানুষের মুখে–যারা হাসতে ভুলে গেছে, আমাদের ভালোবাসা যুগ যুগ ধরে বেঁচে থাকবে ওদের হাসির উচ্ছাসে।

আমাদের ভালোবাসাকে সকল অস্তিত্ব দিয়ে

লালন করে যাব অন্তরে, সেখানেই বেঁচে রইবে তুমি।

 অনেক কথা হলো কর্তব্যের তাড়নায় অবগন্ঠিত হোক খাপমুক্ত লেখনি।

 আবার কোন একদিন, কোন এক নির্ঘুম রজনীকে সাক্ষী রেখে –লিখব না হয় ব্যথিত হৃদয়ের কথা —

সে পর্যন্ত ভালো থেকো আর আমায় মার্জনা করো।

ইতি ——-

তোমার কবি।

আরও খবর

                   

জনপ্রিয় সংবাদ