প্রিন্ট এর তারিখঃ জুলাই ১৮, ২০২৫, ৬:৪৯ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ জুলাই ১৭, ২০২৫, ৮:২৬ এ.এম
কবিতাঃ- রক্তাক্ত মানচিত্র কলমেঃ- বিপ্লব হোসেন

রক্তাক্ত মানচিত্র
রাষ্ট্র পচে গেছে!
খোঁচা দিলে এখন তাজা রক্ত বের হয় না,
এখন বের হয়ে পচাগলা পুঁজরক্ত।
হ্যাঁ আমরা ঠিক এমন একটা রাষ্ট্রে বাস করি,
যেখানে সত্য বললেই তুমি হয়ে যাও আসামি।
যেখানে অন্যায়ের প্রতিবাদ মানেই, আগামীকাল তুমি নিখোঁজ সংবাদের শিরোনাম,
আর অন্যায়ের সাথেই চুপচাপ মিশে গেলে তুমি নিরাপদ।
এখানে খুন এখন আর চমক নয়,
এটা নিত্যদিনের খবর,
খবরের শিরোনামে একটা নাম, একটা জায়গা, আর একটুখানি বিবৃতি।
আদালতে মামলা হলেও, বিচার হয় না,
শুধু ফেসবুকে শোক আর দুঃখের ইমোজি জমে থাকে।
তারপর আবার রীতিমতো নতুন সংবাদের অপেক্ষা।
ধর্ষণ এখন আর গোপন ঘটনা নয়,
এটা যেন এক জাতীয় খেলা,
যেখানে প্রতিযোগীরা দলীয় পরিচয় নিয়ে মাঠে নামে।
ধর্ষিতাকে দেখে নির্ভর করে তার দোষ কতটা,
যদি সে গরিব হয়, তবে সেটা ‘দুর্ভাগ্য’,
আর যদি মধ্যবিত্ত হয়, তবে কিছুটা শোক প্রকাশ।
মাঝে মাঝে নেতাদের মুখে শোনা যায়,
এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা।
চাঁদাবাজি এখন প্রতিষ্ঠানিক নিয়ম,
যেখানে ব্যবসা করতে চাইলে “উপঢৌকন” দিতে হয়।
না হলে তোমার দোকানে তালা পড়ে যায়,
বা হাতুড়ি দিয়ে গুড়িয়ে ফেলা হয় জীবনের পুঁজি অথবা পাথরের আঘাতে থেতলে যাবে মগজ।
টেন্ডার মানে এখন আর কাজ নয়,
এটা এখন ভাইয়েরা ওয়ারিশ ভাগ করে নেওয়ার খেলা।
তুমি সৎ হলে কাজ পাবে না,
আর দুর্নীতির ভাগ না দিলে, পরদিন রাতেই হবে বাচ্চাদের অস্ত্র চালানো শেখার প্র্যাক্টিসের ওয়াল।
মামলা এখন জুতোর মতো,
যাকে শায়েস্তা করার দরকার তার পায়ে পরিয়ে দাও।
প্রতিবাদ করলে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করবে,
তা না করলেও কর ফাঁকির নামে মামলা আসে,
যেখানে বিচার হয় না, শুধু হয় লেনদেন।
জমি দখল এখন রাষ্ট্রের প্রাতিষ্ঠানিক অপরাধ,
পাশে পুলিশ থাকে, পাশে দলীয় নেতারা থাকে,
আর যার জমি,
সে আদালতের চক্করে শেষ বয়সে হারিয়ে ফেলে নিজের কবরের জায়গাটুকুও।
এখানে পৈত্রিক জমিও নিরাপদ নয়,
কারণ সাইনবোর্ড লাগিয়ে দিলেই সব ইতিহাস মুছে যায়।
এই দেশে প্রতিবাদ মানে আত্মহত্যার শামিল,
কণ্ঠস্বর উঁচু মানেই শত্রু তৈরি করা।
যারা সত্য বলে, তাদের ফোন সার্চ হয়,
তাদের ঠিকানায় নজরদারি বসে,
আর তাদের সন্তান স্কুলে যায় বুকে ভয় নিয়ে।
সংবাদমাধ্যম এখানে একটা মিথ্যার চশমা,
যা শুধুই তা-ই দেখায়,
যা রাষ্ট্র চায়, আর তুমি তা-ই দেখবে।
ক্যামেরা চলে না গরিবের কান্নার দিকে,
চলে শুধু কে কোথায় কী ছিঁড়লো সেইসব আমলার দিকে।
এই রাষ্ট্রের হাসপাতালে মৃত্যু বিনামূল্যে আসে,
কিন্তু বাঁচতে গেলে কিডনি বেচতে হয়।
ডাক্তারের কলম চলে না রোগীর দিকে,
কলম চলে ওষুধ কোম্পানির কমিশনে।
আমাদের শিক্ষা আজ চাকরি পাওয়ার সার্টিফিকেট মাত্র।
মানুষ হওয়ার আর সময় কোথায়।
শিক্ষকরা ভয়ে চলে,
ছাত্রদের হাতে লাঞ্চিত হবার ভয়।
আর শিক্ষার্থীরা অপেক্ষায় থাকে, কীভাবে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়।
রাজনীতির নামে চলে ব্যবসা,
জনগণ শুধু ভোটার সংখ্যা মাত্র,
ভোট শেষে তারা হয় পরিত্যক্ত।
নেতারা বাস করেন বিলাসে,
আর যারা ভোট দেয়, তারা বাঁচেও না, মরেও না।
এই রাষ্ট্রের গায়ে আজ যত দাগ,
তা শত্রুর গুলিতে নয়,
বরং আমাদের নিজেরই কামড়ে।
আমরা নিজেরাই একে ছিঁড়ে খেয়েছি,
নিজেদের ভয়ে নিজেরাই চুপ থেকেছি,
আর এখন বলি, রাষ্ট্রটা পচে গেছে।
না বন্ধু, রাষ্ট্রটা নয়,
পচে গেছি আমরা, পচে গেছে আমাদের বিবেক।
Copyright © 2025 cetonaibangladesh.news. All rights reserved.