অন্যান্য

কাউখালীতে অপহরণের আটদিন পর ব্যবসায়ীর দ্বিখণ্ডিত মরদেহ উদ্ধার

  প্রতিনিধি 15 July 2025 , 8:38:39 প্রিন্ট সংস্করণ

সৈয়দ মোঃ ইমরান হোসেন 

রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার সুগারমিল আদর্শগ্রাম থেকে অপহরণের আটদিন পর পোলট্রি ব্যবসায়ী মো. মামুনের (২৫) দ্বিখণ্ডিত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) সকালে উপজেলার কলমপতি ইউনিয়নের মাঝের পাড়া এলাকায় বস্তাবন্দি অবস্থায় তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

নিহত মামুন উপজেলার সুগারমিল আদর্শগ্রামের বাসিন্দা আলী আহম্মেদের একমাত্র ছেলে। তিনি দুই ছেলে ও এক কন্যা সন্তানের জনক।

এর আগের দিন সোমবার (১৪ জুলাই) মামুনের সাবেক কর্মচারী মো. কামরুল ইসলামকে (৩০) লক্ষ্মীপুর জেলার ভবানীগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার স্বীকারোক্তিতে আজ সকালে মামুনের দ্বিখণ্ডিত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। একই ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে কামরুলের স্ত্রী সাথী আক্তারকেও (১৯)।

গ্রেপ্তার কামরুল একই ইউনিয়নের ডাব্বুনিয়া এলাকার সেলিম সওদাগরের ছেলে। স্ত্রী সাথীকে নিয়ে রানীরহাট বাজার এলাকায় ৬ তলা ভবনে ভাড়ায় থাকেন।

পুলিশ জানায়, গত ৭ জুলাই বিকেলে নিখোঁজ হন মামুন। রাতেই স্ত্রীকে ফোন করে তিনি জানান, কিছু ঝামেলায় আছেন এবং তার দুটি ব্যাংক চেক রানীরহাট এলাকার একজনের কাছে পৌঁছে দিতে। এরপর থেকেই নিখোঁজ ছিলেন মামুন।

পরদিন (৮ জুলাই) মামুনের স্ত্রীর ফোনে মুক্তিপণ হিসেবে ১০ লাখ টাকা দাবি করে একটি কল আসে মামুনের নম্বর থেকে। সেই রাতেই থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন অপহৃতের স্ত্রী।

এরপর তাকে উদ্ধারে অভিযানে নামে কাউখালী থানা পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হয় চেক গ্রহণকারী আনোয়ার (২০) নামে এক ব্যক্তিকে। পরে তার দেওয়া তথ্যে উঠে আসে মামুনের সাবেক কর্মচারী কামরুলের নাম।

সোমবার তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় লক্ষ্মীপুর জেলার ভবানীগঞ্জ থেকে কামরুলকে গ্রেপ্তার করে কাউখালী থানা পুলিশ। তার স্বীকারোক্তি মতে, আজ সকালে উপজেলার কলমপতি ইউনিয়নের মাঝের পাড়া এলাকা থেকে বস্তাবন্দি অবস্থায় মাটিতে পুঁতে রাখা মামুনের দিখণ্ডিত মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

পুলিশ হেফাজতে কামরুল স্বীকার করেন, মামুনকে রানীরহাটে তার ভাড়া বাসায় ডেকে নিয়ে চায়ের সঙ্গে নেশাজাতীয় দ্রব্য খাইয়ে অজ্ঞান করা হয়। এরপর স্ত্রী সাথী আক্তারের সহায়তায় হত্যা করে তার মরদেহ দ্বিখণ্ডিত করেন। পরে বস্তায় ভরে কাউখালীর মাঝের পাড়া এলাকায় মাটিচাপা দেন।

কাপ্তাই সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহেদুল ইসলাম বলেন, ‘মামুন ও কামরুল একসময় একই সঙ্গে পোলট্রি ব্যবসায় যুক্ত ছিলেন। ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব থেকেই এ হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।’

কাউখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাইফুল ইসলাম সোহাগ বলেন, ‘এ ঘটনায় থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। প্রধান অভিযুক্ত কামরুলকে আদালতে উপস্থাপন করে রিমান্ড চাওয়া হবে। ঘটনায় আরও কেউ জড়িত রয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।  ইতোমধ্যে চেক গ্রহণকারী আনোয়ারকে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।’

এদিকে পোলট্রি ব্যবসায়ী মো. মামুনকে অপহরণের পর হত্যার ঘটনায় এলাকাজুড়ে শোক, ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন রাঙামাটির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) নাদিরা নুর, কাপ্তাই সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহেদুল ইসলাম ও কাউখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী আতিকুর রহমানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

আরও খবর

                   

জনপ্রিয় সংবাদ

মাধবপুরে ৫০ কেজি ভারতীয় গাঁজাসহ আপন দুই ভাইসহ গ্রেপ্তার ৩

মণিরামপুরে শহিদ ইকবালের ত্রাণ বিতরণ ও পূজামণ্ডপ পরিদর্শন

কুড়িগ্রামে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সাবেক নেতা জেলহাজতে

একটা কিনলে অন্যটা কেনার টাকা থাকে না ঝিনাইদহ প্রতিনিধি চার সদস্যের পরিবার নিয়ে ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার ঋষিপাড়ায় থাকেন ফজলুল রহমান। ভ্যান চালিয়ে দিনে আয় করেন ২৫০-৩০০ টাকা। এর অর্ধেক চলে যায় কিস্তি দিতে। বাকি টাকায় দৈনন্দিন সংসার খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। গত বৃহস্পতিবার সকালে ফজলুর হরিণাকুণ্ডুর একটি দোকানে ডিম কিনতে এসেছিলেন। দাম শুনেই তিনি হতবাক। প্রতি হালি ডিমের দাম চাওয়া হচ্ছে ৫৬ টাকা। ফজলুর লোকমুখে শুনেছেন, সরকার ডিমের দাম কমিয়েছে। কিন্তু বাস্তবে দাম এত বেশি কেন? জিজ্ঞেস করতেই দোকানি বলেন, ‘নিলে নেন, না হলে অন্যখানে যান।’ পকেটের অবস্থা ভালো ছিল না ফজলুরের। বাধ্য হয়ে ফিরে যাচ্ছিলেন তিনি। এর আগে গিয়েছিলেন স্থানীয় কাঁচাবাজারে। শাকসবজিসহ সব পণ্যের অস্বাভাবিক দামে হতাশা ঘিরে ধরে তাঁকে। আয়ের সঙ্গে খরচের হিসাব মেলাতে পারছিলেন না। ফজলুর রহমান বলেন, ১৫ দিন আগেও প্রতি পিস ডিমের দাম ছিল ১২ টাকা। এখন সেটার দাম কোথাও ১৩ টাকা ৫০ পয়সা আবার কোথাও ১৪ টাকা। হালিতে এই ১৫ দিনের ব্যবধানে ডিমের দাম বেড়েছে ৬-৮ টাকা। শাকসবজি, মাছ, আলু, পেঁয়াজ, কাঁচামরিচসহ সবকিছুর দামই বেড়েছে। এভাবে দ্রব্যমূল্য বাড়তে থাকলে সীমিত আয়ে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে। ২৫০-৩০০ টাকা আয়ের মধ্যে ঋণ নিয়ে কেনা ভ্যানের কিস্তির জন্য দিতে হয় ১৫০ টাকা। বাকি ১০০-১৫০ টাকায় চাল, ডাল, তেল আর তরিতরকারি কেনা যায় না। একটা কিনলে অন্যটা কেনার টাকা থাকে না। কাঁচাবাজারে কেনাকাটা করতে এসেছিলেন সাগর হোসেন। তিনি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত। হরিণাকুণ্ডু পৌরসভার শুড়া এলাকায় থাকেন স্ত্রী, দুই সন্তান ও মা-বাবা নিয়ে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে ছয় সদস্যের সংসারে খরচ চালাতে হিমশিম অবস্থা তাঁর। সাগর বলেন, সপ্তাহের ব্যবধানে সবকিছুর দাম বেড়েছে। কোনো কোনো পণ্যের দাম দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্টদের পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান তিনি। ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণে ১৫ অক্টোবর সরকারের কৃষি বিপণন অধিদপ্তর মূল্য নির্ধারণ করে দেয়। উৎপাদক পর্যায়ে ১০ টাকা ১৯ পয়সা, পাইকারিতে ১১ টাকা ১ পয়সা এবং খুচরায় ১১ টাকা ৮৭ পয়সা প্রতি পিসের ডিমের দাম নির্ধারণ করা হয়। বুধবার থেকে এ দামে ডিম বিক্রির কথা থাকলেও বাজারের চিত্র ভিন্ন। একেক জায়গায় একেক রকম দাম নেওয়া হচ্ছ। উপজেলা শহরের কোথাও ১৩ টাকা ৩৩ পয়সা, কোথাও ১৩ টাকা ৫০ পয়সায় বিক্রি হচ্ছে। গ্রামাঞ্চলের বাজারে ১৪ টাকা করে। লাগামহীন ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দামও। বাজারভেদে প্রতি কেজি ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে ১৮০-২০০ টাকায়। সোনালি মুরগি ২৮০-৩০০ টাকা কেজি। বৃহস্পতিবার সকালে শহরের কাঁচাবাজারে প্রতি কেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হয় ২৮০-৩২০ টাকায়। পেঁয়াজের কেজি ১২০ টাকা। লাউ পিস ৫০-৬০ টাকা, আলুর ৬০ টাকা কেজি। ৩০ টাকার মিষ্টি কুমড়া বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা। ৪০ টাকার কাঁচাকলা ৬০ টাকা। ৪০ টাকার শসা বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকায়। গত সপ্তাহের চেয়ে এদিন ঢ্যাঁড়শের দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ টাকায়। প্রতি কেজি পেঁপে ৩০ টাকা থেকে হয়েছে ৪০-৫০ টাকা। বেগুন বিক্রি হতে দেখা গেছে ১৩০-১৫০ টাকায়। ৫০ টাকার নিচে বাজারে সবজি মিলছে না। ব্যবসায়ীদের দাবি, সরবরাহ কম থাকায় দাম বেড়েছে। কাঁচাবাজারের বিক্রেতা খাইরুল ইসলামের ভাষ্য, কয়েকদিন আগে টানা বৃষ্টি হয়েছে। তা ছাড়া অনেক এলাকায় বন্যা হচ্ছে। মানুষের সবজি ও কাঁচামালের ক্ষতি হয়েছে। এতে সরবরাহ কম। তাই সব কিছুর দাম বেড়েছে। দাম কমাতে হলে আগে আড়তদারদের নিয়ন্ত্রণের আহ্বান জানান পাইকারি বিক্রেতা আব্দুল খালেক। তিনি বলেন, আড়ত থেকে কিনে সামান্য লাভে বিক্রি করেন। হরিণাকুণ্ডু উপজেলা মোড়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে আশরাফুল ইসলামের। তাঁর দাবি, খামারির কাছ থেকেই প্রতি পিস ডিম কিনতে হয় ১৩ টাকা ২০ পয়সায়। এর সঙ্গে পরিবহন খরচ রয়েছে। খুচরায় বিক্রি করছেন ১৩ টাকা ৩৩ পয়সায়। আনার সময় অনেক ডিম ভেঙে যায়। ফলে লাভ থাকে না। শুধু ক্রেতা ধরে রাখতেই ডিম বিক্রি করছেন। উৎপাদক ও পাইকার পর্যায়ে দাম নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে ডিম বা ব্রয়লার মুরগির দাম খুচরা বাজারে কমবে না বলে মনে করেন তিনি। মাছের বাজারেও একই অবস্থা। এদিন সকালে হরিণাকুণ্ডু শহরের দৈনিক বাজারে প্রতি কেজি রুই ও কাতলা প্রকারভেদে বিক্রি হয়েছে ২৫০-৩৫০ টাকায়। পাঙাশ ও তেলাপিয়ার দর ১৫০-২৫০ টাকা; চ্যাঙ ও দেশি পুঁটি বিক্রি হয় ৩২০-৫০০ টাকায়। মাছ বিক্রেতা জয়নাল মিয়ার ভাষ্য, আড়তে তেমন মাছ আসছে না। অল্প পরিমাণে যা আসছে, অনেক বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। আড়তদার কামাল উদ্দিন বলেন, বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের আড়তে মাছ আসে। কিছু এলাকায় বন্যা ও অতিবৃষ্টির কারণে প্রচুর ঘের-পুকুর তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া প্রচুর মাছ মারাও গেছে। ফলে সরবরাহ কমেছে, তাই দাম বেশি। ঝিনাইদহ ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক নিশাত মেহের বলেন, এই এলাকায় খামারি নেই। ব্যবসায়ীরা পাবনা বা অন্য এলাকা থেকে বেশি দামে ডিম কিনেন। ফলে সরকারের বেঁধে দেওয়া দর নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। তবুও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। ডিমসহ সব নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন। প্রতিনিয়ত বাজার তদারকি চলছে জানিয়ে ইউএনও আক্তার হোসেন বলেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে হামলার ঘটনায় ইউপি চেয়ারম্যান কারাগারে

দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড