প্রতিনিধি 8 September 2025 , 5:48:45 প্রিন্ট সংস্করণ
আশির দশকের কবি হাফিজ রশিদ খান বাংলাদেশে আদিবাসী জীবনের প্রথম কাব্যকার বলে বিবেচিত। আদিবাসীদের জীবন ও সংস্কৃতি নিয়ে তিনি প্রথম একটি পূর্ণাঙ্গ কাব্য গ্রন্থ প্রকাশ করেছিলেন ‘আদিবাসী কাব্য’ নামে, যেখানে প্রকাশ ঘটেছিল আদিবাসীদের বর্ণিল জীবন ও সেই জীবনের প্রতি নির্ভেজাল ভালোবাসা, পক্ষপাত ও মমত্ববোধ।
গ্রন্থের ভূমিকায় শুরুতেই রয়েছে একটি সহজ-সরল স্বীকারোক্তি: ‘সত্তর দশকের শেষ দিকে একটি আদিবাসী তরুণীর প্রেমে পড়ি। বোমাং সার্কেলের রাজপুণ্যাহ দেখতে গিয়ে। সে ছিল পরমারূপসী আর অত্যন্ত মিষ্টভাষী। ডিভাইন লাভ বা বেহেশতি প্রেমের সেই অনুভূতিগুলো আজও আমাকে ভাবায়। আমি সেই মেয়েটার স্বপ্নময়তায় আদিবাসী পল্লি এলাকায় অনেক ঘুরেছি।
অনেকের তিরস্কার, অনেকের পুরস্কার পেয়েছি। আবার দুঃখ-দারিদ্র্যজীর্ণ অনেক আদিবাসী মানুষের অসম্ভব সুন্দর আর ভালো মনের প্রকাশও লক্ষ করেছি। আমার স্বীকার করতে ভালো লাগে: আগের জন্মে আমি আদিবাসীই ছিলাম। টিলার ওপর ছিল আমাদের ঘর। লাউয়ের খোলে করে জল আনতাম অনেক দূরের ঝরনা থেকে, জুমচাষে আসত জীবিকা। নাপ্পি ও তরকারি পেলে সবচেয়ে ভালো মনে পেটপুরে খেতাম। বুনোহাঁস আর কালো হরিণের মাংসে আমাদের পালা-পার্বণগুলো বেশ জমত। আমার সেসব স্পষ্ট মনে পড়ে—আমি তো জাতিস্মর।’
এই স্বীকারোক্তিকে আমরা ‘কাব্যসত্য’ বলেই আপাতত মেনে নিই। আসলেই তো। কবিরা হচ্ছেন মানবজাতির জাতিস্মর। বহুকাল ধরে মানুষের চেতনার মধ্যে যে স্বপ্ন ও অভিজ্ঞতা পুঞ্জীভূত রয়েছে, কবিরা সে অভিজ্ঞতা নিজের চেতনায় ধারণ করেন। সমালোচকদের মতে, আদিবাসী মানুষের চেতনার মধ্যে যে স্বপ্ন ও অভিজ্ঞতা পুঞ্জীভূত আছে, তিনি সে অভিজ্ঞতা নিজের চেতনায় ধারণ করতে পেরেছেন। সেই অর্থে তিনি অবশ্যই একজন ‘জাতিস্মর’।
‘আদিবাসী কাব্য’ নিয়ে তিনি সবার সামনে মেলে ধরেছিলেন এক অপরূপ সৌন্দর্যের সুষমামণ্ডিত কার্পাসমহল। কবি হওয়াতেই হয়তোবা, পাহাড়ে থাকাকালে রীতিমতো তাঁকে কন্দর্পবাণে, অর্থাৎ প্রেম দেবতার বাণে বারবার আহত হতে হয়েছিল। তা না হলে তাঁর কবিতায় প্রেম প্রধান অনুষঙ্গ হয়ে উঠবেই–বা কেন! ব্যক্তিপ্রেমের অন্বেষণে বেরিয়ে কবি আবিষ্কার করেছিলেন, একটি জনপদ ও সংস্কৃতির যুগ্ম সত্তাকে চিহ্নিত করে তিনি বিনির্মাণ শুরু করেছেন কবিতার।
একজন বম আদিবাসী তরুণীকে নিয়ে অক্ষরবৃত্তে লেখা তাঁর একটি কবিতায় ফুটে ওঠে বম তরুণীদের সহজ–সরল, নম্র, ভদ্র, কোমল, মিষ্টি, কোমল ব্যক্তিত্ব আর স্বভাবের প্রতিচ্ছবি। সিয়ামপুই বম লনচেয়ো হচ্ছেন একজন বম আদিবাসী তরুণী। তাঁর ভাঙা ভাঙা বাংলা উচ্চারণ কবির কাছে কেমন মিষ্টি আর আদুরে লাগত।
প্রতিটি বিকেলে হতো তাঁদের দেখাসাক্ষাৎ। দেখা হলে নম্র ভঙ্গিতে পদ্মের মুদ্রায় দুহাত কপালে ঠেকিয়ে উচ্চারণ করত মেয়েটা, ‘নমস্কার, স্যার।’ এক জোছনার বন্যায় প্লাবিত ঝকঝকে রুপালি রাতে কবির মনে পড়ে গিয়েছিল সেই তরুণীকে। তরুণীর ভীরুতা যেন রূপান্তরিত হলো খরগোশের নম্র আর কোমল স্বভাব বা চলনের মধ্যে। সবুজ সবুজ দূর্বাঘাসে সাদা আর নানা রঙের খরগোশের ভীরু ভীরু বিচরণ। ফলে জন্ম হলো একটি কবিতার:
কচি ঘাসের নেশায় খরগোশত্রস্ত চোখশাদা আর এলোমেলো রঙে…সুন্দরী সিয়ামপুই বম লনচেয়োবুনোফুলের প্ররোচনায়প্রেমে খাবি খাওয়া তোমার আশেকআদরের কেশর ফোলায়…তুমিসারামুখে সন্ন্যাসিনী-হাসিমাংসল পদ্মের মুদ্রায়দূর-দেবতার চোখে চোখেসাজালে পরমাএকটা কোমল নমস্কার…(বুনোফুলের প্ররোচনায়, আদিবাসী কাব্য, ১৯৯৭, কবি হাফিজ রশিদ খান)
কবি যখন সিয়ামপুই বম লনচেয়ো নামের তরুণীকে নিয়ে কবিতা লিখেছিলেন, তখন তিনি আসলে একটি ব্যক্তিকে নয়; বরং গোটা বম জনগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যকেই তুলে ধরেছিলেন। তরুণীর ভদ্রতা, নম্রতা, কোমলতা ও মিষ্টি স্বভাব কেবল ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য নয়, এটি পুরো জনগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক পরিচয়ের এক প্রতিফলন।
কবির দৃষ্টিতে বম তরুণী হয়ে ওঠেন এক বহুমাত্রিক প্রতীক। তিনি প্রেমিকা, তিনি প্রকৃতির কোমলতার অংশ, আবার তিনি আধ্যাত্মিক সত্তারও প্রতীক। তাঁর মধ্যে ফুটে ওঠে গোটা বম জনগোষ্ঠীর সামাজিক-সাংস্কৃতিক স্বাক্ষর। ফলে এই কবিতা কেবল প্রেমানুভূতির প্রকাশ নয়; বরং প্রেম, প্রকৃতি, সংস্কৃতি ও জাতিগত পরিচয়ের এক নান্দনিক সমাহার।
বমদের মধ্যে নিজেদের ভাষায় তুমুল ঝগড়াবিবাদ চলতে থাকলেও অন্য কারও পক্ষে ঝগড়া চলছে বলে সেটা বুঝে ওঠা কখনো সম্ভব হয় না। বরং মনে হতে পারে, তারা মৃদু স্বরে খোশগল্প করছে। কারণ, রাগান্বিত হলেও তাদের স্বভাবে একে অপরের প্রতি চিৎকার–চেঁচামেচি কিংবা অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজের কোনো রেওয়াজ নেই। তাদের ভাষা, উচ্চারণ ও আচরণে কোনো অশ্রাব্যতা, খিস্তিখেউড় বা আক্রমণাত্মকতা নেই। এটি এমন এক সাংস্কৃতিক শালীনতা, যা আজকের পটভূমিতে নিতান্তই বিরল।
সম্প্রতি এই নম্র-ভদ্র-নিরীহ জনগোষ্ঠীর মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে। কয়েক বছর ধরে এই জনগোষ্ঠীর নারীসহ বেশ কয়েকজন মানুষ কারাগারে অন্তরিণ। কেউ কেউ চিকিৎসার অভাবে মারা যাচ্ছেন। ২১ আগস্ট কুকি–চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট দমনের নামে সাধারণ বম জনগণের ওপর গণগ্রেপ্তারের ৫০০ দিন পূর্ণ হয়েছে। এই দীর্ঘ সময়ে নারী-শিশুসহ শতাধিক নিরপরাধ বম নাগরিক বিনা বিচারে কারাগারে বন্দী আছেন।
বিচারবহির্ভূত এই দমননীতি শুধু মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন নয়, এটি বাংলাদেশের সংবিধান ও ন্যায়বিচারের মূলনীতির প্রতি প্রকাশ্য অবজ্ঞা। ইতিমধ্যে কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও চিকিৎসাবঞ্চনার কারণে তিনজন বম পুরুষ কারাগারে মারা গেছেন। বর্তমানে শতাধিক মানুষ, যাঁদের মধ্যে গুরুতর অসুস্থ রোগীও আছেন, এখনো বন্দী অবস্থায় অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।
এ অন্যায় দেখে দেশ-বিদেশ থেকে অসংখ্য মানুষ বম জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সংহতি জানিয়েছেন। গত ২১ আগস্ট একযোগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজেদের ওয়ালে পোস্ট দিয়ে অধিকারকর্মীরা এই নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। একযোগে একই দিনে দাবি তুলেছেন নিরীহ ব্যক্তিদের মুক্তিদানের।
বান্দরবান জেলার রুমার বেথেলপাড়া এবং থানচির শাহজাহানপাড়া। এই দুটি পাহাড়ি গ্রামের সাতজন বম নারী ৫০০ দিন ধরে কারাগারে দিন গুনছিলেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন শিউলি বম (থ্যালাসেমিয়া রোগী), আলমন বম (কলেজপড়ুয়া), জিংরুনএং বম (মা–বাবাহারা), লালসিংপার বম (দেবর নিখোঁজ, পিতা কারাগারে), জিংরেমঙাক বম (স্বামী নিখোঁজ), লালনুনজির বম (বিবাহিতা) এবং ভানইনকিম বম (ছোট ভাই বন্দী)।
অভিযোগ ছিল ভয়াবহ—ব্যাংক ডাকাতি আর অস্ত্র লুট। কিন্তু গ্রামবাসী সবাই জানতেন, এসব অভিযোগ তাঁদের জীবনের সঙ্গে কোনো দিনও মেলেনি। অবশেষে দীর্ঘ ৫০০ দিনের মাথায়, ২১ আগস্ট তাঁরা চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান। মুক্তির সেই মুহূর্তে হয়তো বা আনন্দের সঙ্গে মিশে ছিল বেদনা। কারণ, তাঁদের স্বজনেরা কেউ এখনো বন্দী, কেউবা নিখোঁজ।
তাঁদের গল্পগুলো যেন একই সূত্রে গাঁথা—অভিযোগ, গ্রেপ্তার, অনিশ্চয়তা আর দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর মুক্তির স্বাদ। কিন্তু এই মুক্তির মধ্যেও তাঁদের মনে রয়ে গেছে শূন্যতা। কারণ, শতাধিক বম নাগরিক এখনো কারাগারের ভেতরে দিন গুনছেন আর পরিবারগুলো প্রতিদিন অপেক্ষা করছে—কবে তাঁরা ফিরবেন ঘরে!
বম লাইভস ম্যাটার নামক অধিকারকর্মীদের পরিচালিত একটি ফেসবুক পেজে (২৩ আগস্ট, ২০২৫) বলা হয়েছে, ‘কুকি–চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের ব্যাংক ডাকাতির ঘটনার পরে গত বছর এপ্রিল মাসে বান্দরবানে গণগ্রেপ্তার অভিযান চালানো হয়। এই অভিযানে প্রায় ২০০ জন বম আদিবাসী নাগরিককে কোনো উপযুক্ত প্রমাণ ছাড়াই নির্বিচারে আটক করা হয়। আটককৃত অনেকেই শারীরিকভাবে অসুস্থ এবং মানসিকভাবে বিপর্যস্ত।
একদিকে তাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলার তদন্তে কোনো অগ্রগতি নেই, অন্যদিকে অনেকের জামিনের আবেদন বারবার প্রত্যাখ্যান করা হচ্ছে। ২৬ মে উচ্চ আদালত থেকে চারজন বম নারীর জামিন হয়, সেই জামিনের আদেশ জুনের ৩ তারিখ আপেলেট ডিভিশন থেকে খারিজ করে দেওয়া হয়।
‘সম্প্রতি ৯ জন নারী এবং ৪ জন শিশুকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়েছে, কিন্তু এখনো ১৪ জন নারী কারাবন্দী। তাদের মধ্যে আছেন ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত লালনুন কিম বম। আরও আছেন আলসারের রোগী ল্যারি বম। আটককৃত পুরুষদের মধ্যে ৩২ জন জামিন পেয়েছেন। আটককৃতদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা টাকাপয়সার অভাবে জামিনের আবেদনও করতে পারেন নাই।’
একই ফেসবুক পেজের (২৪ আগস্ট ২০২৫) আরেকটি পোস্টে বলা হয়েছে, ‘৫০৩ দিন বিনা বিচারে কারাবন্দী থাকার পর আলসার রোগী লেরি বমসহ আরও ৪ জন বম নারী আজ ২৪ আগস্ট ২০২৫ তারিখে অবশেষে উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন।
এই দীর্ঘ সময়ে তাঁদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সপক্ষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ দেখতে পারেনি, তদন্তে হয়নি কোনো অগ্রগতি, কিন্তু জামিনের আবেদন নাকচ করা হয়েছে বারবার। এখন রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন না করলে তাদের মুক্তি নিশ্চিত হবে। আমরা উচ্চ আদালতের আদেশ দ্রুত কার্যকর করে লেরি বমসহ সকলের অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানাই।’
একই ফেসবুক পেজের (১ সেপ্টেম্বর ২০২৫) আরেকটি পোস্টে বলা হয়েছে: ‘রামথাং, টিনা ও গিলবার্ট—তিনজনই কলেজের শিক্ষার্থী। বেথেলপাড়ায় গণগ্রেপ্তারের সময় তাদের আটক করা হয়। আটককালে প্রত্যেকের বয়স ছিল মাত্র ১৭ বছর।
রামথাং (১৮): নটর ডেম কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন রামথাং। ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে তাকে জামিন দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল গত বছরের অক্টোবর মাসে। কিন্তু তাঁর জামিনের শুনানি ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে স্থগিত হয়ে যায়। বাবা-মা নিম্ন আদালতে জামিনের জন্য আবেদনের পেছনে দেড় লাখ টাকার বেশি খরচ করেছেন, তারপরও জামিন পাননি রামথাং। বর্তমানে তাঁর মামলা হাইকোর্টে প্রক্রিয়াধীন।
টিনা (১৮): টিনা সেন্ট জোসেফ স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী। ম্যাজিস্ট্রেট ও জজ কোর্টে টিনার জামিনের আবেদন করলেও সেগুলো নাকচ হতে থাকে। কাছাকাছি সময়ে উচ্চ আদালত থেকে একই মামলায় দশজন পুরুষের জামিন হওয়ায় তাঁর অভিভাবকেরা আশান্বিত হয়ে হাইকোর্টেই আপিল করেন। ২৬ মে ২০২৫ তারিখে হাইকোর্ট জামিন মঞ্জুর করেন। কিন্তু তার কিছুদিন পরই রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করলে ৩ জুন ২০২৫ তারিখে চেম্বার কোর্ট থেকে সেই জামিন স্থগিত করে দেওয়া হয়। বর্তমানে তাঁর জামিনপ্রক্রিয়া বান্দরবানের নিম্ন আদালতে চলমান।
গিলবার্ট বম (১৮): তিনি ঢাকার একটি কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। গণগ্রেপ্তারের সময় তিনি বাড়িতে ছুটিতে ছিলেন। গ্রেপ্তারের পর থেকেই তাঁর মামলার জামিনপ্রক্রিয়া বারবার জটিল হয়ে ওঠে। বান্দরবান জেলা আদালতে জামিনের আবেদন করা হলেও প্রতিবারই তা নাকচ হয়। দীর্ঘ সময় ধরে কোনো আইনি প্রক্রিয়াই কার্যকর না হওয়ায় গিলবার্ট এখনো চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী রয়েছেন। পরবর্তী সময়ে মামলা উচ্চ আদালতে এলেও এখন পর্যন্ত শুনানি আদৌ হয়েছে কি না, তা জানা যায়নি।
একটি বিষয় লক্ষণীয় যে অপরাধের কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ বা সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না থাকার ফলে উচ্চ আদালত থেকে জামিন দেওয়া হলেও সেগুলো বারবার আটকে দেওয়া হচ্ছে, রাষ্ট্রপক্ষের দিক থেকে প্রবল আপত্তির মাধ্যমে। নিরপরাধ বম নারী, পুরুষ ও শিক্ষার্থীরা এখনো কারাগারে দিন কাটাচ্ছেন। এটি মূলত রাষ্ট্রের ক্ষমতাসীন ব্যক্তি আর নীতিনির্ধারকদের প্রান্তিক মানুষের প্রতি চরম অসংবেদনশীলতা আর দায়িত্বজ্ঞানহীনতার বহিঃপ্রকাশ।
হয়তোবা আদিবাসী হিসেবে জন্ম গ্রহণ না করলে কারও পক্ষে কোনো দিনই তাঁদের জীবনের বঞ্চনাকে উপলব্ধি করা সম্ভব হবে না। আদিবাসী জীবনের প্রথম কাব্যকার কবি হাফিজ রশিদ খান আদিবাসীদের সংস্পর্শে এসে ‘জাতিস্মর’ হয়ে উঠেছিলেন। কারণ, আদিবাসীদের চেতনায় যে স্বপ্ন ও অভিজ্ঞতা পুঞ্জীভূত আছে, তিনি সেই অভিজ্ঞতা নিজের চেতনায় ধারণ করতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকেরাও যেদিন এ রকম ‘জাতিস্মর’ হয়ে উঠবেন, সেদিনই হয়তো তাঁরা আদিবাসীদের জীবনের বঞ্চনা ও যন্ত্রণার কথা উপলব্ধি করতে পারবেন। মমতার সঙ্গে একাত্মবোধ করতে পারবেন আদিবাসী সত্তার সঙ্গে।