মোঃ মিন্টু মিয়া,বিশেষ প্রতিনিধি:
গাজীপুরের কালিয়াকৈরে রবিবার সকালে সরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভেতরে ঢুকে এক শিক্ষককে পেটালেন যুবদল/ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। এসময় তাকে উদ্ধার করতে গেলে যুবদলের এক নেতাকেও মারধর করেন হামলাকারীরা। গাজীপুর জেলা যুবদলের যুগ্ম-আহবায়ক রাশেদুল ইসলাম রনির নেতৃত্বে প্রকাশ্য দিবালোকে এ হামলার ঘটনা ঘটে। আহতরা হলেন, কালিয়াকৈর উপজেলার কালিয়াদহ এলাকার ইছাক উদ্দিনের ছেলে মোহাম্মদ বশির মিয়া। তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সরকারী হাই স্কুলের সহকারী শিক্ষক। অপর আহত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সরকারী কলেজ শাখা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম-আহব্বায়ক ও আটাবহ ইউনিয়ন যুবদলের নেতা রেজভী আহম্মেদ রাজীব। এলাকাবাসী ও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, গত ১৪ই আগস্ট কিছু লোক কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা এলাকায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সরকারী হাই স্কুলে যায়। সেখানে গিয়ে তারা নানা অভিযোগ তুলে- সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ বশির মিয়াকে পদত্যাগ পত্রে জোরপূর্বক স্বাক্ষর করায়। তাৎক্ষণিক তারা তাকে হুমকি-ধামকি দিয়ে স্কুল থেকে বের করে দেয়। পরের দিন ১৫ আগস্ট ওই শিক্ষক কালিয়াকৈর থানায় একটি সাধারন ডায়েরী (জিডি) করেন। এরপর ১৮ আগস্ট স্কুলে যান ওই শিক্ষক। এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি হলে ওই শিক্ষকের পক্ষে একটি তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়। প্রতিবেদনটি সন্তেুাষজনক না হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর পুনঃতদন্তের জন্য আবেদন করেন গাজীপুর জেলা যুবদলের যুগ্ম-আহবায়ক রাশেদুল ইসলাম রনিসহ সাতজন স্বাক্ষরিত একটি পক্ষ। এরপর গত ০১ জানুয়ারী ২০২৫ ইং উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মিজানুর রহমানকে প্রধান করে অপর একটি পুনঃতদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। রবিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে যুবদল নেতা রাশেদুল ইসলাম রনির নেতৃত্বে কয়েকজন লোক ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের অফিস কক্ষে ঢুকে। পরে তারা ওই সহকারী শিক্ষককে টেনেহেচড়ে বাইরে বের করে এবং রড, লাঠিসোটা দিয়ে মারধর করে। এসময় ওই শিক্ষকের সাবেক ছাত্র ও যুবদল নেতা রাজীব তার শিক্ষককে উদ্ধার করতে গেলে তাকেও মারধর করে হামলাকারীরা। পরে আশপাশের লোকজন আহতদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। উল্লেখ্য গত ১০ জানুয়ারী ওই গ্রুপের উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম-আহবায়ক রিপনের নেতৃত্বে কারখানার বিল্ডিং মালিক যুবদল নেতাকে লাঞ্ছিত করে। উক্ত বিষয়ে যুবদল নেতা থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছে। এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত গাজীপুর জেলা যুবদলের যুগ্ম-আহবায়ক রাশেদুল ইসলাম রনির মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ধরেননি।
এ ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে গাজীপুর জেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোখলেছুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে আমরা কঠোর কর্মসূচী গ্রহণ করবো। আহত শিক্ষক মোহাম্মদ বশির মিয়া বলেন, গত ১৪ আগস্টের পর তারা স্কুলে না আসার জন্য বিভিন্ন সময় আমাকে হুমকি দিয়ে আসছিল। জোর করে একটা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে স্কুল থেকে বের করে দিয়েছিল। এরপর আবারও নিয়মিত স্কুলে যাওয়া শুরু করি। আজকে স্কুলে ঢুকলে আমার ওপর হামলা হয়। এসময় আমাকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকিও দেয়। আমাকে বাঁচাতে গেলে আমার সাবেক ছাত্র রাজীবকেও তারা মারধর করে। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আনন্দ কুমার দাস জানান, ওই শিক্ষকের বিষয়ে তদন্ত চলমান থাকা অবস্থায় তার ওপর হামলার ঘটনাটি দুঃখজনক। ওরা আমাকেও বকাঝকা করে ও হুমকি দিয়েছে। আমিও আতঙ্কে আছি। তবে সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানাচ্ছি। এব্যাপারে গাজীপুর জেলা যুবদলের আহব্বায়ক আতাউর মোল্লা জানান,আমি বিষয়টি শুনেছি। কিন্তু এর আগেও তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগের কথা শুনেছি। তবে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিয়াদ মাহমুদ জানান, বিষয়টি শুনেছি। এ ঘটনায় এখনো কেউ থানায় অভিযোগ করেনি। তবে অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।