প্রিন্ট এর তারিখঃ অগাস্ট ২৭, ২০২৫, ৪:৪৬ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ অগাস্ট ২৬, ২০২৫, ৫:৫৯ পি.এম
কিশোরগঞ্জের আরজত আতরজান উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তের জোর দাবি

নিজাম উদ্দীন
কিশোরগঞ্জ জেলার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আরজত আতরজান উচ্চ বিদ্যালয়ে পাঁচজন বৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষককে প্রশাসনিক বিধি-বিধানের তোয়াক্কা না করে পাঠদান থেকে বিরত রাখার ঘটনা নিয়ে শিক্ষাঙ্গনে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। এতে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন শিক্ষকগণ, তেমনি ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক জীবন। যার পরিণতিতে ২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষায় পাশের হার নেমে এসেছে মাত্র ৩৮ শতাংশে, যেখানে গত বছর ছিল ৮২ শতাংশ। এমন ফলাফল একদিকে যেমন প্রতিষ্ঠানের সুনামকে কালিমালিপ্ত করেছে, তেমনি প্রশ্ন তুলেছে বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক অদক্ষতা ও প্রধান শিক্ষকের একচেটিয়া সিদ্ধান্তের বৈধতা নিয়ে।ঘটনার শুরু কোথায়?ভুক্তভোগী শিক্ষকগণ জানিয়েছেন, তারা দীর্ঘদিন ধরে মানবেতর জীবনযাপন করে স্বল্প বেতনে বিদ্যালয়ে পাঠদান করে আসছিলেন। ২০১৭ সালের ৩০ জানুয়ারি নিয়োগ পরীক্ষা ও নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তৎকালীন স্কুল ম্যানেজিং কমিটি ও প্রধান শিক্ষক কর্তৃক বিধি মোতাবেক ৫ জন শিক্ষককে নিয়োগ প্রদান করা হয়। কিন্তু ২০২৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি প্রধান শিক্ষকের দুর্নীতির বিরুদ্ধে মুখ খুলতেই তারা ‘অপরাধী’ হয়ে পড়েন। কোনো পূর্ব সতর্কতা, কারণ দর্শানো নোটিশ কিংবা প্রশাসনিক আদেশ ছাড়াই, শুধুমাত্র একটি কথিত স্টাফ মিটিংয়ের মাধ্যমে তাদের পাঠদান বন্ধ করে দেওয়া হয় — যা সরাসরি শিক্ষা অধিদপ্তরের বিধিমালার লঙ্ঘন।ভুক্তভোগী শিক্ষকরা বলেন,> “আমরা শিক্ষক হিসেবে সম্মান চেয়েছি, চাকরি নয়। অথচ আমাদের সঙ্গে আচরণ করা হয়েছে একেবারে অমানবিকভাবে। আমাদের অপরাধ একটাই — আমরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছি।”প্রশাসনের নিরবতা এবং প্রধান শিক্ষকের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণজেলা প্রশাসক ও জেলা শিক্ষা অফিসকে একাধিকবার লিখিতভাবে অভিযোগ দেওয়ার পরেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। একটি সাধারণ পত্র জারি করে বিদ্যালয়কে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হলেও, প্রধান শিক্ষক আবুবকর ছিদ্দিক সেই নির্দেশকেও কর্ণপাত করেননি। এমনকি দুই বছরের বকেয়া বেতন আজও শিক্ষকগণ পরিপূর্ণভাবে পাননি, বরং তা পরিশোধ হচ্ছে সমিতির কিস্তির মত করে!এ বিষয়ে একজন শিক্ষক বলেন,> “আমরা যেন শিক্ষক নই, একটা বোঝা। বেতন চাইলে অপমান, ক্লাস নিতে চাইলে বাধা — এ কোন শিক্ষাব্যবস্থা?”ফলাফল বিপর্যয় এবং তদন্ত দাবিবিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র মোঃ জোনায়েদ হোসেন ১৬ জুলাই ২০২৫ তারিখে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ দাখিল করেন, যেখানে তিনি বিদ্যালয়ের নিম্নমানের ফলাফলের জন্য শিক্ষক সংকট এবং দুর্বল প্রশাসনকে দায়ী করেন।তার আবেদনের প্রেক্ষিতে ২৫ আগস্ট বিদ্যালয় পরিদর্শনে আসেন জেলা শিক্ষা অফিসের গবেষণা কর্মকর্তা এ.কে.এম. নাদিরুজ্জামান। তিনি সরেজমিনে তদন্ত করে দেখেন,শিক্ষক সংকটঅনিয়মিত পাঠদানপ্রশাসনিক বিশৃঙ্খলাদুর্বল একাডেমিক তত্ত্বাবধানএবং শিক্ষার্থীদের কম উপস্থিতি — সব মিলিয়ে ফলাফল বিপর্যয়ের কারণগুলি নিয়ে আলোচনা করেন৷তিনি বলেন,> “৫ জন শিক্ষককে বেআইনিভাবে পাঠদান থেকে বিরত রাখা হয়েছে, যা অবশ্যই তদন্তসাপেক্ষ। সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি।”প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ দাবি ও আন্দোলনের হুমকিসাধারণ অভিভাবক, সাবেক ছাত্র ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই বিষয়ে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। অনেকেই মনে করছেন, প্রধান শিক্ষক ইচ্ছাকৃতভাবে প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। দায়িত্বজ্ঞানহীন, স্বৈরাচারী ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে একটি পুরো প্রজন্মের ভবিষ্যৎকে হুমকির মুখে ফেলেছেন তিনি।সাবেক ছাত্রদের দাবি,> “এই ফলাফলের জন্য প্রধান শিক্ষক দায় এড়াতে পারেন না। তিনি নিজেই ৫ জন শিক্ষককে ক্লাস থেকে সরিয়ে, শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করেছেন। আমরা তার পদত্যাগ দাবি করছি এবং দাবি মানা না হলে মানববন্ধন ও কর্মসূচি ঘোষণার প্রস্তুতি নিচ্ছি।”একটি প্রশ্ন: শিক্ষক বাঁচবে কবে? শিক্ষা কি থাকবে রাজনীতিমুক্ত?আজ যখন গোটা জাতি শিক্ষার মানোন্নয়নের কথা বলছে, তখন একটি স্কুলে আইন মেনে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকরা অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় অবৈধভাবে পাঠদান থেকে বিরত থাকছেন — এটি শুধু অমানবিক নয়, এটি একটি গণতন্ত্র ও শিক্ষাব্যবস্থার চরম ব্যর্থতা।
Copyright © 2025 cetonaibangladesh.news. All rights reserved.