প্রতিনিধি 19 September 2024 , 3:09:35 প্রিন্ট সংস্করণ
আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-
বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ইং ০১:০১ পিএম.
কুড়িগ্রাম জেলা পরিষদে ভুয়া বিল ভাউচারে পূর্বাপর লুটপাট করা হয়েছে কোটি কোটি টাকা। এ ধরনের অর্থ লুটপাটে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার জোর দাবী জানিয়েছে কুড়িগ্রাম জেলার মানুষজন।
আগস্টে দেশজুড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অস্থিরতার সুযোগে কুড়িগ্রাম জেলা পরিষদে ভুয়া বিল ভাউচারে পূর্বাপর কোটি কোটি টাকা লুটপাটের বিষয়গুলো উন্মোচিত হচ্ছে।
জানা যায়,বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের পদ বিলুপ্ত হলেও সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আ.ন.ম ওবায়দুর রহমান ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফিরুজুল ইসলাম উভয়ে যোগসাজশে অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এ প্রক্রিয়ায় ব্যাকডেটে সাবেক চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরে ভুয়া বিল ভাউচার দেখিয়ে ব্যাংক থেকে অর্থ উত্তোলন করা হয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়।
এ ব্যাপারে খোঁজ খবর নিতে গিয়ে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর গত ১৮ আগস্ট জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ বিলুপ্তি হলে আগের দিন গত ১৭ আগস্ট পর্যন্ত ভুয়া বিল ভাউচার করে প্রায় অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়। বিল- ভাউচারের টাকা সমন্বয়ের জন্য ব্যাংকের চেকে সিগনেটরি হিসেবে পূর্বের চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর নিয়ে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজেও চেকে স্বাক্ষর করে গত ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা পরিষদের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী বলেন, লেনদেন ক্লজ হওয়ার কথা ছিল ১৭ আগস্টে। ১৮ আগস্ট থেকে ডিসি অতিরিক্ত দায়িত্ব নিলেও ১১ সেপ্টেম্বরের আগে কোনো চেক স্বাক্ষর করা হয়নি। তবে টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। ওপর দিকে সচিব নিজের মনগড়া পরিষদ চালাচ্ছেন। ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেখলে যার সত্যতা পাওয়া যাবে বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানায়।
জেলা পরিষদে নতুন প্রশাসক হিসেবে জেলা প্রশাসক’কে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেয়া হয় গত ১৮ আগস্ট। তিনি জেলা পরিষদের প্রথম চেক স্বাক্ষর করেন ১১ সেপ্টেম্বর। কোনো অফিসের সিগনেটরি পরিবর্তন হলে তিনি তার শেষ কর্মদিবসে চেক রেজিস্টার খাতা সমাপ্তি করে চলে যাওয়ার বিধান থাকলেও বাস্তবে তা হয়নি। কিন্তু ওই অফিসের হিসাব শাখায় চেক রেজিস্টার সমাপ্তি করার কথা ছিল ১৭ আগস্ট। পরদিন ১৮ আগস্ট থেকে ডিসির নতুন স্বাক্ষরে রেজিস্টার ওপেন করার করা ছিল। বাস্তবে তা হয়নি। দেরিতে চেক রেজিস্টার বহি ক্লজ করায় বিধি বহির্ভূতভাবে আগস্ট মাসে স্টাফদের বেতন প্রদান করা হয়।
এ ব্যাপারে জেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফিরুজুল ইসলাম বলেন, প্রশাসক না থাকায় পূর্বের চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরে বিল-ভাউচার করা হয়েছে। যা করেছি অফিসের ভালোর জন্যই করেছি। ব্যক্তিগত কোনো কাজে করা হয়নি। আমার বিরুদ্ধে অর্থআত্মসাতের অভিযোগ সত্য নয়।
এছাড়া আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তথ্য নিতে গিয়ে জানা যায়, কুড়িগ্রাম জেলা পরিষদের ফান্ড থেকে সরকারী নিয়মনীতি উপেক্ষা করে ইতোমধ্যে নন রেজিস্ট্রার সংগঠন ও বিভিন্ন সমিতির নামে কোটি টাকা ভাগ বাটোয়ারা করে আত্মসাৎ করা হয়েছে। কুড়িগ্রাম জেলা পরিষদের পূর্বাপর এ ধরনের অর্থ লুটপাটের লুটপাটে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার জোর দাবী জানিয়েছে কুড়িগ্রাম জেলার মানুষজন।
এদিকে আত্মগোপনে থাকায় জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আ.ন.ম ওবায়দুর রহমানের সাথে একাধিকবার কথা বলার চেষ্টা করেও কোন মাধ্যমেই তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
কুড়িগ্রাম জেলা পরিষদের এ ধরনের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কুড়িগ্রামে নব নিযুক্ত জেলা প্রশাসক নুসরাত সুলতানা বলেন ‘নতুন যোগদান করেছি, বিষয়টি অবগত হয়েছি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে’।