নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
সারাদেশে ঘন কুয়াশার সঙ্গে জেঁকে বসেছে শীত। দেশের কিছু জেলায় কুয়াশার কারণে সূর্যের দেখা মিলছে না। মৌসুমি বায়ুপ্রবাহ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে শীতের অনুভূতি। এই ধারা আরও চার থেকে পাঁচ দিন চলতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তাদের পূর্বাভাস বলছে, আগামীকাল থেকে শুরু হতে পারে শৈত্যপ্রবাহ।
আবহাওয়াবিদ শাহনাজ সুলতানা জানান, শীতের প্রকোপ আরও বাড়বে। আগামী শনিবার অথবা রবিবার সারাদেশে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ শুরু হতে পারে। বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকায় ঢাকাসহ দেশের উত্তরাঞ্চল আগামী দু-তিন দিন নিয়মিত কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকবে।
রাজধানীতে হঠাৎ শীতের প্রকোপ বেড়েছে। বৃহস্পতিবার ঘড়ির কাঁটায় সকাল সাড়ে ৯টা। সাধারণ দিনে এমন সময় সূর্য উঁকি দিলেও এ দিন দেখা মেলেনি। কুয়াশা আর শীতের প্রকোপে জবুথবু নগরবাসী। জীবিকার তাগিদে বাইরে বেরিয়ে একটু উষ্ণতার
খোঁজে কেউ ভিড় করেছেন চায়ের দোকানে, কেউবা আগুনের কুণ্ডলী জ্বালিয়ে নিচ্ছেন তাপ। বাতাসে আর্দ্রতা বেড়ে যাওয়ায় নগরীর বিভিন্ন প্রান্তে বেলা ১১টার দিকেও কুয়াশা দেখা গেছে। দুপুরের সূর্যের দেখা মিললেও তেমন তাপ অনুভব হয়নি।
গতকাল ঢাকার তাপমাত্রা ছিল ১৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে চুয়াডাঙ্গার দর্শনায়, ১০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আমাদের চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি জানান, কনকনে ঠাণ্ডায় স্থবির হয়ে পড়েছে এ জেলার জনজীবন। চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র পর্যবেক্ষক মো. রকিবুল হাসান জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় চুয়াডাঙ্গার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। যা এই মৌসুমে দেশেরও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এর আগে জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ অবস্থা এখন অব্যাহত থাকতে পারে। এদিকে বৃহস্পতিবার ভোররাত থেকেই ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন ছিল চুয়াডাঙ্গার আকাশ। সঙ্গে তীব্র শীত অনুভূত হওয়ায় মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। এই বৈরী আবহাওয়ায়ও প্রয়োজনীয় কাজের জন্য ঘরের বাইরে আসতে হচ্ছে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে। বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে হাটবাজারের শ্রমিক ও কৃষি শ্রমিকদের। তীব্র শীতে খেটে খাওয়া মানুষের উপার্জন কমে গেছে। সন্ধ্যার পর শহরের রাস্তাঘাট ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। একইভাবে সকালের দিকে শহরে মানুষের আনাগোনা কম থাকছে। ভ্যান ও রিকশা চালকরা কাক্সিক্ষত যাত্রী পাচ্ছেন না।
জয়পুরহাট: জেলায় গত চার দিন ধরে সূর্যের দেখা মেলেনি। ঘন কুয়াশা আর হিম বাতাসের কারণে দিন দিন বাড়ছে শীতের তীব্রতা। প্রতিদিনই কমছে দিন ও রাতের তাপমাত্রা। দিনভর হালকা কুয়াশার সঙ্গে উত্তরের হিমেল বাতাসে বেড়েছে শীতের তীব্রতা। ফলে দিনমজুর, কৃষিশ্রমিকসহ খেটে খাওয়া মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। জয়পুরহাট সদর উপজেলার হিচমী গ্রামের বৃদ্ধ মোজাম্মেল হক বলেন, আমরা গরিব মানুষ। শীতের কাপড় তেমন নেই, শীত নিবারণে খুব কষ্ট হচ্ছে। কেউ গরম কাপড় দিয়ে সহযোগিতা করলে ভালো হতো।
পঞ্চগড় : গত তিন দিন ধরে এ জেলার তাপমাত্রা না কমলেও ঘন কুয়াশা আর মৃদু বাতাসে জনজীবনে দুর্ভোগ নেমে আসতে শুরু করেছে। শেষ বিকাল থেকে শুরু করে রাত ও সকাল পর্যন্ত ঘন কুয়াশার পাশাপাশি বাতাস বয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার সারা দিনই আকাশ ছিল মেঘাচ্ছন্ন। দিনের বেলাতেও গরম কাপড় পরে বের হতে হয়েছে। গতকাল সকাল থেকেই ঘন কুয়াশায় পুরো পঞ্চগড় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে; রাস্তাঘাটে কমে যায় মানুষের উপস্থিতি। আয় কমে যাওয়ায় নিম্নআয়ের পরিবারগুলোতে দুর্ভোগ বেড়েছে। শীতার্ত মানুষেরা সামর্থ্য অনুযায়ী গরম কাপড় কিনছেন। গ্রামীণ জনপদের অনেকে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্রনাথ রায় জানান, গত দু-তিন দিন ধরে এখানে তাপমাত্রা ১১ থেকে ১২ ডিগ্রির মধ্যে ওঠানামা করছে।
সাদুল্লাপুর : প্রচণ্ড ঠাণ্ডার কারণে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে শিশু এবং বৃদ্ধ রোগীর সংখ্যা। গত তিন দিনে দুপুরের দিকে সামান্য সময়ের জন্য সূর্যের মুখ দেখা গেলেও তাতে কোনো উত্তাপ ছিল না। গতকাল সকাল ১০টায় উপজেলার আবু হোসেন সরকার সড়কের পাশে পড়ে থাকা খড়কুটোয় আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করতে দেখা গেছে হতদরিদ্রদের। ঘন কুয়াশার কারণে সড়কে দিনের বেলায়ও হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করেছে মোটরসাইকেল, অটোবাইক, ট্রেন ও অন্য যানবাহন। এদিকে তীব্র ঠাণ্ডায় জমিতে কাজ করতে পারছেন না কৃষকরা। অব্যাহত ঘন কুয়াশা ও রোদ না থাকায় বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে ক্ষেতের সরিষা, আলু ও বোরো ধানের চারা। হলুদ রঙ ধারণ করছে ধানের চারা এবং সরিষার ফুলের গাছগুলো রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ছে।
পাবনা : গত কয়েক দিন ধরে শীতের প্রকোপ খুব বেড়েছে। দিনের বেশির ভাগ সময় সূর্যের আলোর দেখা মিলছে না। সারাদিন কুয়াশা আচ্ছন্ন ও মেঘে-ঢাকা ছিল চারপাশ। ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।