প্রতিনিধি 7 October 2024 , 8:02:10 প্রিন্ট সংস্করণ
স্টাফ রিপোর্টার
নগরীর হাজার কোটি টাকা খরচ করে করা ফুটপাত অবৈধ দখল করে নিয়েছে ফুটপাত সন্ত্রাসীরা। শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর অনেকটা প্রতিযোগিতাময় ভাবে ফুটপাত ও কেসিসির জায়গা দখল করে নিয়েছে। গড়ে তুলেছে দোকান পাট অফিস। বিশেষ করে নগরীর ব্যস্ততম সড়ক ক্লে রোডের ফুটপাত পুরোটাই দখলদারদের কবলে। বৈকালী আদ দীন হাসপাতালের বিপরিতে পুরো ফুটপাত দখলদারদের কবলে। সেখানে নতুন নতুন স্থাপনা করছে দখলদাররা। সাধারণ পথচারিরা ফুটপাত ছেড়ে সড়ক দিয়েই চলছে। এতে করে ছোট খাটো দুর্ঘটনা আর যানজট এখন নিত্য নৈমিত্ত ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে। বিষয়টি যাদের দেখার কথা তারা ব্যবস্থা নিচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে নাগরিকদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, খুলনা নগরীর প্রধান সড়কগুলোয় প্রশস্ত ফুটপাত নির্মাণ করেছে খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি)। ড্রেনের ওপর স্ল্যাব দিয়ে দামি পার্কিং টাইলস বসিয়ে এবং নকশার মাধ্যমে ফুটপাতের সৌন্দর্য বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ হলেও এর সুফল পান না নগরবাসী। কারণ নির্মাণের পরই ফুটপাত চলে গেছে অবৈধ দখলে। দখলমুক্ত করার বিষয়ে কেসিসির উদ্যোগও তেমন একটা চোখে পড়েনি। প্রায় সাড়ে ৪৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের খুলনা মহানগরীতে মানুষের হাঁটার জায়গা খুবই কম। নগরীর ফুটপাতগুলোর অবস্থা ছিল রুগ্ন। বিভিন্ন সভা-সেমিনারে নগর পরিকল্পনাবিদ ও নাগরিক নেতারা প্রশস্ত ফুটপাত নির্মাণ এবং হাঁটার জায়গা বাড়ানোর পরামর্শ দেন। ২০১৮ সালে সাবেক মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক দায়িত্ব গ্রহণের পর সড়ক ও ড্রেন সংস্কার এবং ফুটপাত সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেন। যা এখনও চলমান। কেসিসি থেকে জানা গেছে, বর্তমানে নগরীতে ৮২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে জলাবদ্ধতা নিরসনে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং ৬০৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নগরীর ক্ষতিগ্রস্ত ও গুরুত্বপূর্ণ সড়ক মেরামত প্রকল্পের কাজ চলছে। প্রকল্পের আওতায় প্রধান সড়কের পাশে ড্রেন এবং ড্রেনের ওপর স্ল্যাব দিয়ে প্রশস্ত ফুটপাত নির্মাণ করা হচ্ছে। দাতা সংস্থা এই কাজে অর্থ দিয়েছে। এরই মধ্যে নগরীর কেডিএ এভিনিউ, আহসান আহমেদ রোড, রতন সেন সরণি, ক্লে রোডসহ প্রায় দু’ডজন সড়কের দু’পাশে ফুটপাত নির্মাণ শেষ হয়েছে। আর কাজ চলমান রয়েছে। বর্ণিল টাইলস ও নতুন নকশায় নির্মাণ করা ফুটপাত পেয়ে খুশি হয়েছিল নগরীর মানুষ। কিন্তু অল্প কিছুদিনের মধ্যেই আনন্দ রূপ নেয় আক্ষেপে। প্রধান সড়কগুলোর দু’ পাশে ফুটপাত সম্প্রসারণে কমপক্ষে ৫০-৬০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। নগরীর ডাকবাংলো মোড়ে গিয়ে দেখা গেছে, সড়কের দু’ পাশে ফুটপাত নির্মাণ করা হয়েছে। নানা রঙের টাইলসে নির্মিত ফুটপাতের ওপর দোকান বসিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বাধ্য হয়ে পথচারীদের সড়ক দিয়েই হাঁটতে হচ্ছে। সড়কে রিকশাসহ যানবাহনের পাশাপাশি হাঁটতে গিয়ে বিপাকে পড়ছেন পথচারীরা। এতে ছোটখাটো দুর্ঘটনা এখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। বয়রা কলেজ মোড়ে গড়ে ওঠা স্থাপনা সাবেক মেয়র উচ্ছেদ করলেও ৫ আগস্টের পর আবারো নতুন করে স্থাপনা গড়ে তুলেছে দুর্বৃত্তরা। ডাকবাংলো থেকে তুলাপট্টি পর্যন্ত ক্লে রোডের দু’পাশে ১ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ড্রেন ও ফুটপাত নির্মাণ করা হয়। ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে লাগানো হয়েছে টাইলস। কিন্তু কোটি টাকার এই ফুটপাতে এক দিনও হাঁটতে পারেননি পথচারীরা। উন্মুক্ত করার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দখল হয়ে গেছে পুরোটাই। নগরীর ময়লাপোতা মোড়ে সড়ক ও ফুটপাত প্রশস্ত করা হলেও তা দখল হয়ে গেছে অধিকাংশ ফুটপাত। কোটি টাকা ব্যয়ের ফুটপাতে এখন ফল, কাঁচাবাজার ও খাবারের দোকান। একই রকম পিকচার প্যালেস মোড়। নগরীর খালিশপুর বিআইডিসি সড়কের দু’পাশে টাইলসসহ ফুটপাত খুবই সুন্দর দেখাচ্ছে। ইতিমধ্যে দখল প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কেসিসির কর্মকর্তা এষ্টেট অফিসার গাজী সালাহ উদ্দীন আহমেদ বলেন, নগরীর প্রায় সব ফুটপাতই অবৈধ দখলে চলে গেছে। এ জন্য পৃথকভাবে কোনো তালিকা তৈরি করা হয়নি। ক্লে রোড, ময়লাপোতা, খালিশপুর, রূপসা, দৌলতপুর বাজারসহ যেসব এলাকায় দখল বেশি, সেখানে অভিযান চালানোর জন্য কর্তৃপক্ষের অনুমতি চাওয়া হবে। অনুমতি পেলে যথারীতি উচ্ছেদ অভিযান চলবে বলে নতুন এষ্টেট অফিসার জানান।
সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন জেলা কমিটির সম্পাদব এড. কুদরত ই খুদা বলেন, সুন্দর ফুটপাত দিয়ে স্বাচ্ছেন্দে নগরবাসী হাটবে-এমনটাই আশা ছিল। কিন্তু দখলদাররা আর হাটতে দিল না। এ জন্য পুলিশ ও কেসিসির নিয়মিত তদারকি করা উচিত। পুলিশ ও কেসিসির গাফেলতির কারণে দখলদাররা আবারো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের দেখা জরুরী বলে এই নাগরিক নেতা মনে করেন। পরিবর্তন খুলনার প্রধান নাজমুল আজম ডেবিট বলেন, কোটি টাকা খরচ করা চকচক করা ফুটপাত দিয়ে পথচারিরা হাটতে পারবে না-এটা খুবই দুঃখজনক ব্যাপার। এ জন্য পুলিশ প্রশাসন ও কেসিসিকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে বলে তিনি মনে করেন।