পুরো বিশ্ব থমকে আছে।
সাদা-নীল আকাশ জুড়ে বিষাদের ঘনঘটা।নিশ্চল-স্থির এক পৃথিবী দেখছে মানুষ।আধুনিক যুগে এসে এমন পৃথিবী আর দেখা যায়নি।এর আগে বিশ্বব্যাপী মানুষে মানুষে সংগঠিত দুটি বিশ্ব যুদ্ধ দেখেছে মানুষ।অবলিলায় ধ্বংস যজ্ঞে মত্ত হয়েছিলো পৃথিবীর হর্তাকর্তাগণ।বিশ্বের আকাশ জুড়ে উড়িয়ে দিয়েছিলো ধ্বংসের নিশানা।আধিপত্য বিস্তার,হিংসা আর ক্রোধকে নতুন জীবন দান করে পৃথিবীময় ছুড়ে দিয়েছিলো অশান্তির বাণী।পৃথিবীর সবচেয়ে ঘৃণিত ব্যক্তি স্বীকৃতি পাওয়া এডলফ হিটলার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মহানায়ক।যার উগ্রতা সমগ্র বিশ্বকে ধ্বংস যজ্ঞে পরিণত করেছিলো।১৯৪৫ সালের ০৬ ই আগস্ট জাপানের হিরোশিমায় লিটল বয় নামের নিউক্লিয় বোমা এবং এর তিন দিন পর নাগাসাকি শহরে ফ্যাট ম্যান নামের আরেকটি বোমার বিস্ফোরণ পুরো বিশ্বকে কাঁপিয়ে তুলেছিলো।বোমা দুটির ধ্বংসলীলা এত ছিলো যে এর আগে এত বড় বিস্ফোরণ বিশ্বের কোথাও ঘটেনি।উল্লেখ্য যে,নাগাসাকি শহরও জাপানে অবস্থিত।
ধারণা করা হয়,১৯৪৫ সালের ডিসেম্বর এর মধ্যে এই বোমা বিস্ফোরণে শুধু হিরোশিমাতেই ১৪০,০০০ লোক মারা যায়।সেদিনের এই ধ্বংসাত্মক বিস্ফোরণ বিশ্ব মোড়লদেরও টনক নেড়ে দিয়েছিলো।দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবীতে আর এমন কোনো ঘটনা সংগঠিত হয়নি যা পুরো পৃথিবীকে থমকে দিতে পারে।কিন্তু ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহান নগরী হতে উৎপত্তি হওয়া কোভিড-১৯ (করোনা ভাইরাস) ২০২০ এ পুরো বিশ্বে সংক্রমিত হয়ে সমগ্র পৃথিবীকে থমকে দিয়েছে।স্থির করে দিয়েছে সমগ্র মানব জাতিকে।চীন হতে ধীরে ধীরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সংক্রমিত হতে হতে ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বময়।ছুটে চলা,দুরন্ত আর দ্বিগবিজয়কারী মানুষদের এক নিমিষেই ঘর বন্দি করে ফেলে।পুরো বিশ্বে জারি করে দেয় বিধিনিষেধ।গোটা পৃথিবী চেয়ে যায় আতংকে।পৃথিবীর ভাগ্যাকাশে নেমে আসে আঁধার।চারদিকে ছড়িয়ে পরে শোকের মাতম।মানবজাতির আর্তনাদে ভরে উঠে পৃথিবীর সমস্ত আকাশ।প্রতি মূহুর্তে,প্রতি ক্ষণে বাতাসের সাথে আসতে থাকে মৃত্যুর মিছিল।এ এমন এক মিছিল যার সারি পৃথিবীর এ প্রান্ত হতে ও প্রান্তে মিশে যায়।দেশে দেশে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘ হতে থাকে লাশের সারি।যেন অঘোষিত এক যুদ্ধ।তবে এ যুদ্ধে মানুষ মানুষকে কতল করছে না।কোনো মানুষ কোথাও ছুড়ে মারছে না মিশাইল।রকেট হামলাও করছে না কেউ।প্রকৃতির কাছে হেরে গিয়ে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘ হতে থাকে লাশের সারি।
ভাবতে পারেন কি দুঃসহ,নির্মম এ দৃশ্য!যেখানে পিতা ছুঁয়ে দেখছে না সন্তানের লাশ,সন্তান ফেলে যাচ্ছে পিতা-মাতার লাশ।ভাই নিচ্ছে না ভাইয়ের মরদেহ।কি এক আতংক!
এ কি এক ভয়!!
মৃত্যুর ভয়ে অতি আপনজনেরা ফেলে যাচ্ছে প্রিয় মানুষগুলোর মরদেহ।যে মানুষ মারা গেলে ছুটে আসতো পাড়া-প্রতিবেশী আত্মীয়স্বজন।আর এ কি মৃত্যু!
এই মানুষের মৃত্যুতেই মুখ ডাকছে মানুষ।
কারো এ ভাইরাস সংক্রমণে দূর দূর করে ঠেলে দিচ্ছে।ফেলে রাখছে নিঃসঙ্গতায়।ভাবতে পারেন কি ভয়াবহ এ দৃশ্য!পিতা-মাতা আর সন্তানের অমোঘ এ মিলন ভেঙে একে অন্যকে ফেলে যাচ্ছে সবে।কেউবা কোনো রকম দায়সারা ভাবে সম্পন্ন করছে শেষকৃত্য।কোথাও বা ধর্মীয় রীতি-নীতি উপেক্ষা করেই সম্পন্ন করা হয়েছে শেষকৃত্য।এমন মৃত্যু কি কাম্য ছিলো কারো!
ওয়ার্ডোমিটারস এর তথ্যমতে-৭ই জানুয়ারি ২০২২ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে বিশ্বব্যাপী মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৪ লাখ ৮৯ হাজার।আর আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩০ কোটি ৬ লাখ।করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত,মৃত্যু ও সুস্থতার হিসেব রাখা ওয়েবসাইট ওয়ার্ডোমিটারস থেকে পাওয়া তথ্যমতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ও মৃত্যুর সম্মুখীন হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকেরা।জানুয়ারি ২০২২ পর্যন্ত দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ কোটি ৯৫ লাখ ৬ হাজার। আর মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ৫৫ হাজার ৬৭১ জন।এদিকে প্রতিবেশী দেশ ভারতের অবস্থা খুবই সংকটাপন্ন।করোনা আক্রান্তের দিক দিয়ে ভারতের অবস্থান বিশ্বে দ্বিতীয় আর মৃত্যুর দিক দিয়ে অবস্থান তৃতীয়।মহামারী শুরু থেকে জানুয়ারি ২০২২ পর্যন্ত দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ৫২ লাখ ২৩ হাজার ৭৭০জন আর মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৮২ হাজার ৯১১ জন।লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিল করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের দিক দিয়ে অবস্থান তৃতীয় এবং মৃত্যুর দিক দিয়ে অবস্থান দ্বিতীয়।শুরু থেকে জানুয়ারি ২০২২ পর্যন্ত দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ২৩ লাখ ৯৫ হাজার ৩২২ জন। আর মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ১৯ হাজার ৭৩০ জনের।এছাড়াও মহামারী শুরু থেকে জানুয়ারি ২০২২ পর্যন্ত রাশিয়াতে আক্রান্তের সংখ্যা ১ কোটি ৬ লাখ ১ হাজার ৩০০ জন,মৃত্যুর সংখ্যা ৩ লাখ ১৩ হাজার ৮১৭।যুক্তরাজ্যে ১ কোটি ৪০ লাখ ১৫ হাজার ৬৫ জন এবং মৃতের সংখ্যা ১ লাখ ৪৯ হাজার ৫১৫ জন।ইতালিতে ১ কোটি ১১ লাখ ৮৩ হাজার ২৩৮ জন এবং মৃতের সংখ্যা ১ লাখ ২৫ হাজার ১৩ জন।জার্মানিতে ৭৭ লাখ ৯৯ হাজার ৩ জন এবং মৃতের সংখ্যা ১ লাখ ১৪ হাজার ২০৭ জন।মৃত্যুর সংখ্যার দিক থেকে উত্তর আমেরিকার দেশ মেক্সিকো আলোচনার প্রথম সারিতে।জানুয়ারি ২০২২ পর্যন্ত দেশটিতে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৯৯ হাজার ৮০৫ জন।
২২শে ফেব্রুয়ারি ২০২২ বাংলাদেশ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক বিবৃতিতে জানা যায়-শুরু হতে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে মহামারী করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ১৯ লাখ ৩১ হাজার ৩০৪ জন। এবং শুরু থেকে এ পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৮ হাজার ৯৪৪ জনে।উল্লিখিত পরিসংখ্যানে যারা ভাবছেন বাংলাদেশে করোনা মহামারী তেমন আঘাত হানতে পারেনি।২০ কোটি লোকের মধ্যে মাত্র ১৯ লাখ লোক আক্রান্ত।এটা ভাবার অবকাশ নেই।আর এ কারণেই নেই কারণ- এ পর্যন্ত বাংলাদেশে মাত্র ১ কোটি ৩১ লাখ ৮৩ হাজার ৪৬২ টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। যার মধ্যে আক্রান্ত ১৯ লাখ এর উপরে।বিশ্বের অন্যান্য দেশে যেভাবে গণহারে নমুনা পরীক্ষা করা সম্ভব হয়েছে আমাদের দেশে তেমনটা সম্ভব হয়নি।আর হয়নি বিধায় পরিসংখ্যান এত স্বল্প।
মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমশ বাড়তেই থাকে।আকাশ ভারি হতে থাকে মানুষের বোবা কান্নায়।শরতের স্বচ্ছ নীল আকাশেও বইতে থাকে তুমুল ঝড়।সাদা মেঘের বদৌলতে ধেয়ে আসতে থাকে কালো মেঘ।প্রতিষেধক আবিষ্কার করতে হিমশিম খায় বিশ্ব চিকিৎসা বিজ্ঞানীগণ।না,কোনো প্রতিষেধকই আবিষ্কার করতে পারছে না।এই মহামারী করোনাকে ঠেকাতে শেষ সম্বল হয় জারি করা বিধিনিষেধ।দ্রুত একজনের দেহ হতে অন্য জনের দেহে সংক্রমিত হয় বিধায় জারি করা হয় কঠোর বিধিনিষেধ।নিষিদ্ধ করা হয় জনসমাবেশ।সাথে সব ধরনের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান,সামাজিক,রাজনৈতিক অনুষ্ঠান।বন্ধ হয়ে যায় সকল পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।সরকারি-বেসরকারি দাপ্তরিক কাজে আনয়ন করা হয় আধা দিবস কর্মসূচি।সমগ্র মানবজাতিকে ঘর বন্দি করে ফেলা হয়।ঘরের বাহিরে বের হতে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। বিশ্বের এই প্রান্ত হতে ঐ প্রান্তে ছুটে চলা মানবজাতিকে এক নিমিষেই বন্দি করে ফেলা হয়।রাস্তা-ঘাটে,হাঁটে-বাজারে জন কোলাহল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়।এমনকি এক সাথে দুইজন মানুষও কোথাও জড়ো হতে পারে না।কোনো প্রতিষেধক না থাকায় প্রতিরোধের একমাত্র সম্বল হয় মাস্ক ও হ্যান্ডওয়াশ।ছোঁয়াচে ভাইরাস হওয়ায় হাঁচি-কাশির সাথে খুব দ্রুতই বাতাসের সংস্পর্শে সংক্রমণ করে অন্য কোনো মানব দেহে।তাই মাস্ক ব্যবহারে নেয়া হয় সর্বোচ্চ ব্যবস্থা।এমনও ঘটেছে মাস্কবিহীন ব্যক্তি কে জরিমানা পর্যন্ত দিতে হয়েছে।বিধান করা হয় স্যানিটাইজার দিয়ে ৩০ সেকেন্ড পর্যন্ত হাত ধৌত করার নিয়ম।যেহেতু হাত দ্বারা এর সংক্রমণের ভয় ছিলো অধিক।
সব ধরনের জনকোলাহল সভা-সমাবেশ,ধর্মীয়,রাজনৈতিক,সামাজিক আচার অনুষ্ঠান বন্ধ করে মানবজাতির মুখে মাস্ক চেপে দিয়ে ঘর বন্দি করে দেওয়া হয় সমস্ত মনুষ্যকূল কে।যে মনুষ্যকূল পাখিকে খাঁচায় বন্দি করে ঘুরে বেড়াতো দিক-দিগন্তে।সেই মানুষই বন্দি হয়ে যায় খাঁচায়।পৃথিবীর সুনসান নিরবতায় প্রশান্তির ঢেকুর তুলে বন্যপ্রাণী।এই বুঝি শান্তিতে বাসের সুবর্ণ সুযোগ।বন্যপ্রাণীদের খাঁচায় বন্দি করে রাখা এই মানুষকেই খাঁচায় দেখে কি তৃপ্তির হাঁসিটাই না হেসেছে ঐসব প্রাণী।বিধিনিষেধের আওতায় পড়ে সমগ্র মানবজাতির পায়ে পড়ে যায় শিকল আর মুক্ত হয়ে যায় মানুষের শিকলে বন্দি বন্য প্রজাতি।জন সাধারণকে সতর্ক করতে গ্রামে-গঞ্জে কাজ করতে থাকে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো।অংশ নেয় স্থানীয় সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।ভাইরাস ঠেকাতে সতর্ক করতে থাকে সাধারণ মানুষদের।ফ্রীতে বিতরণ করা হয় মাস্ক ও স্যানিটাইজার। সরকারি-বেসরকারি অফিসে, গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো তে স্থাপন করা হয় পানির টেপ।স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোও হাঁটে-ঘাটের গুরুত্বপূর্ণ স্থান গুলোতে ব্যবস্থা করে দেয় হাত ধোঁয়ার।পর্যাপ্ত পানি,স্যানিটাইজার দিয়ে অংশ নেয় মহামারী ঠেকাতে।বিতরণ করে ফ্রী মাস্ক,স্যানিটাইজার।তবুও বিশেষ ক্ষমতা নিয়ে জন্ম নেয়া মনুষ্য জাতিকে সতর্ক করে তোলা যাচ্ছিলো না।পুলিশ,আর্মির মহড়া শুরু হয়।লাঠি পেটা করে ঘরবন্দি করতে বাধ্য করা হয়।জারি করা হয় লকডাউন।লকডাউন হচ্ছে একটি নিরাপত্তার পরিমাপ।এটা এমন যে,"মানুষ যেখানেই আছে নিরাপত্তার জন্য তাকে সেই জায়গাতেই অবস্থান করতে হবে।তবে বিশেষ প্রয়োজনে তাদের নিকটতম কোনো কর্পোরেট অফিস,অ্যাপার্টমেন্ট ইউনিট,কন্ডো ইউনিট বা দোকানে যেতে পারবে।তবে যদি বিশেষ কোনো প্রয়োজনবোধ মনে না করেন তাহলে তার নির্দিষ্ট সীমা অতিক্রম করার অবকাশ নেই।"
এই লকডাউনেও দমানো যাচ্ছিলো না মানুষকে।শেষ পর্যন্ত জারি করতে হয় শাটডাউন।শাটডাউন হলো একমাত্র জরুরি সেবা ছাড়া সবকিছু বন্ধ থাকবে।অফিস-আদালত,গণপরিবহন,ব্যবসা-বাণিজ্য।এক কথায় একেবারে সবকিছু বন্ধ।জরুরি সেবা বলতে ঔষধ,ফায়ার সার্ভিস।আর গণমাধ্যমেকেও এর আওতায় আনা হয়।লকডাউনেও যখন সংক্রমণ কমানো যাচ্ছিলো না তখন বাধ্য হয়ে শাটডাউন আরোপ করতে হয়।জরুরি সেবা ছাড়া বন্ধ করে দেওয়া হয় সমস্ত কিছু।
এদিকে কোনো ব্যক্তি কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত কি না,তার মধ্যে উপসর্গ আছে কি না,বা উপসর্গ থাকতে পারে কি না এর জন্য দুইটা নিয়ম মানতে হতো।সেগুলো হলো আইসোলেশন,আর অন্যটি কোয়ারেন্টাইন।আইসোলেশন হচ্ছে- "কোনো ব্যক্তির দেহে কোভিড-১৯ এর লক্ষণসমূহ দেখা দিলে বা টেস্ট রিপোর্ট পজিটিভ হলে সেই ব্যক্তিকে আইসোলশনে পাঠানো হয়।এক কথায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এমন ব্যক্তির জন্য আইসোলশন।এখানে আক্রান্ত ব্যক্তিকে ১৪ দিন অবস্থান করতে হয়।তবে ব্যক্তির সংক্রমণের গতি-বিধি দেখে সেটা বাড়ানোয় হয়।"
এসময়ে আক্রান্ত ব্যক্তিকে শুধুমাত্র চিকিৎসক ও নার্সদের পরিচর্যায় থাকতে হয়।এমনকি তার পরিবার-পরিজনের সাথেও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়।তখনো করোনার কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কার না হওয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির যথাযথ কোনো চিকিৎসার ব্যবস্থা সম্ভব হতো না।তবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে আক্রান্ত ব্যক্তিকে কিছু এন্টিভাইরাল ঔষধ ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো যায় এমন কিছু ঔষধ দিয়ে সুস্থ করে তোলার চেষ্টা করা হতো।
আর কোয়ারেন্টাইন হলো- "কোনো ব্যক্তি যদি করোনায় আক্রান্ত দেশ,স্থান থেকে আসেন অথবা কোনো আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ থেকে আসেন তাহলে ঐ ব্যক্তিকে কোয়ারেন্টাইনে পাঠাতে হতো।যেহেতু করোনা ভাইরাস একটি সংক্রামক ভাইরাস তাই আক্রান্ত দেশ বা ব্যক্তির সংস্পর্শ থেকে আসলে ঐ ব্যক্তিকে কোয়ারেন্টাইনের নিয়ম মানতে হতো।এইখানেও ব্যক্তি কে ১৪ দিন অবস্থান করতে হয়।যেহেতু করোনা ভাইরাসটি ব্যক্তির দেহে প্রবেশের সাথে সাথে লক্ষণ প্রকাশ করে না।তাই আক্রান্ত দেশ বা ব্যক্তির সংস্পর্শ হতে আসার কারণে ব্যক্তিকে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন নিয়ম মানতে হতো।এই ১৪ দিনের মধ্যে উপসর্গ দেখা দিতো অথবা আক্রান্ত না হলে ব্যক্তি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতো।"
কোয়ারেন্টাইনেও ব্যক্তিকে নিঃসঙ্গ অবস্থায় থাকতে হতো।কারো সংস্পর্শে আসার সুযোগ থাকতো না।তবে কোয়ারেন্টাইনের বেলায় ব্যক্তি তার বাড়িতেও অবস্থান করতে পারতো যাকে হোম কোয়ারেন্টাইন বলে।ব্যক্তি যদি তার বাড়িতে টানা ১৪ দিন কারো সংস্পর্শ ব্যতিত নির্জন স্থানে বা কক্ষে নিয়ম মেনে অবস্থান করেন তখন তাকে হোম কোয়ারেন্টাইন বলে।তবে হোম কোয়ারেন্টাইন এর সুযোগ থাকলেও হোম আইসোলশনের কোনো সুযোগ ছিলো না।আইসোলশনে আছেন এমন ব্যক্তিকে হাসপাতালেই অবস্থান করতে হতো।কোভিভ-১৯ করোনা ভাইরাসের নিজস্ব অন্য কোনো লক্ষণ নেই।যাতে করে সহজেই বুঝা যাবে যে ব্যক্তি কোভিড এ আক্রান্ত । জ্বর,সর্দি,কাঁশি,গলা ব্যাথা এই সকল উপসর্গের মাধ্যমে তার উপস্থিতি জানান দেয়।এই ভাইরাসটি মূলত ফুসফুস ও শ্বাসনালিতে আক্রমণ করে।যে কারণে রোগী খুব সহজেই হাঁপিয়ে উঠে।জ্বর,সর্দি,শুকনো কাঁশি দিয়ে শুরু হওয়া এই ভাইরাস ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে।অনেক সময় দেখা যায় যে আক্রান্ত হবার ৫ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে ভাইরাসটির উপসর্গ ধরা পড়তো।এদিকে কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কার না হওয়ায় জনসাধারণকে সামাজিক দূরত্ব,মাস্ক ও স্যানিটাইজার এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে হয়।আক্রান্ত ব্যক্তিদের আইসোলশনে নিবিড় পরিচর্যায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর মাধ্যমে সুস্থ করে তোলার চেষ্টাতেই থেকে যেতে হয়।প্রতিষেধকহীন মাঝিবিহীন নৌকার মতো যখন ভাসছে বিশ্ববাসী তখনই আসে এক সুসংবাদ।করোনার প্রথম ঢেউ কাটিয়ে কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেও মূহুর্তেই আবার হানা দেয় দ্বিতীয় ঢেউ।একটুখানি স্বচ্ছল পৃথিবী আবার হয়ে যায় স্থির।আবার মানুষকে মেনে নিতে হয় ঘর বন্দির বাস্তবতা।ঠিক তখনই মুসলিম এক দম্পতি নিয়ে আসে আশার বাণী।ঘোষণা দেয় করোনা প্রতিষেধক এর আবিষ্কারের কথা।এ যেন মরুর বুকে এক ফোঁটা জলের দেখা।যে সোনার হরিণটির জন্য সমগ্র মানবজাতি এতটা দিন ধরে পথ চেয়ে আছে।প্রবল ভাবাবেগ নিয়ে যার জন্য অপেক্ষা করছে সেই সুসংবাদটি পাওয়ার মূল্য অনেক।মানুষের কল্যাণে বিভোর,নিবেদিত এক মুসলিম দম্পতি এক শুভ লগ্নে এই মহামারীর প্রতিষেধক এর আবিষ্কারের সুসংবাদ দিলেন।সমগ্র মানবজাতি উচ্ছ্বাস আর উল্লাসে ফেটে পড়ে।হৃদয়ে যে শুষ্কতা দেখা দিয়েছিলো,যে হৃদয় শুকিয়ে এক মরুতে পরিণত হয়েছিলো,এই সুসংবাদ সেই হৃদয়ে আনে কোমলতা।স্নিগ্ধতা আর চপলতায় ভরে উঠে সে হৃদয়।
করোনা প্রতিষেধক আবিষ্কারক কোম্পানি বায়োএনটেক এর নির্বাহী প্রধান ( সিইও ) ড.উগার শাহিন ঘোষণা দেন,তাদের আবিষ্কৃত ভ্যাকসিনটি করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে ৯০% কার্যকর।এই ভ্যাকসিন আবিষ্কারের ফলে থমকে যাওয়া পৃথিবী আবার সচল হবে।স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরবে বিশ্ব।বিশ্বখ্যাত ঔষধ কোম্পানি ফাইজার ও জার্মানভিত্তিক বায়োএনটেক সর্বপ্রথম এই ভ্যাকসিন আবিষ্কারের ঘোষণা দেয়।এই ভ্যাকসিন আবিষ্কারের সম্পূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন মুসলিম দম্পতি ড.উগার শাহিন এবং ওজলেম তুরেসি।তুরস্ক বংশোদ্ভূত ড.উগার শাহিন এবং ওজলেম তুরেসির কোম্পানি বায়োএনটেক এর যাত্রা ছিলো মূলত ক্যান্সার সেল নিয়ে গবেষণার জন্য।
বিশ্বখ্যাত চিকিৎসা বিজ্ঞানীগণ যা করতে পারেননি মুসলিম এ দম্পতি সেটিই করে দেখিয়েছেন।খ্যাতনামা ফাইজার কোম্পানির সাথে যৌথ ভাবে প্রথম সুসংবাদটি দিয়ে প্রশংসা কুড়িয়ে নিলেন বিশ্বব্যাপী।ড.উগার শাহিন ও ওজলেম তুরেসির ভ্যাকসিন আবিষ্কারের পর দ্বিতীয় সুসংবাদটি দেয় আরেক খ্যাতনামা কোম্পানি মডার্না।
ধারণা করা হয়,এটি চীনের এক মহা পরিকল্পনা।তারা কীট উৎপন্ন করে পরিকল্পিত ভাবে ছড়িয়ে দিয়েছে বিশ্বব্যাপী।আর এই সুযোগে তারা লুফে নিচ্ছে তাদের পরিকল্পিত কাজ।এখানে এটা আশ্চর্যের বিষয় যে,তখনো পৃথিবীব্যাপী করোনার প্রবল থাবা।কিন্তু এর মধ্যেই তাঁরা করোনার উৎপত্তি স্থান উহান থেকে সব ধরনের বিধিনিষেধ তুলে নেয়।তাহলে এটা কি মানতে হচ্ছে না যে এখানে অবশ্যই কোনো কিন্তু আছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরও বিশ্বের হর্তাকর্তাদের মধ্যে যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব ছিলো।যা আজও চলছে।সরাসরি কোনো যুদ্ধ না বাঁধিয়ে পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে দিয়েছে স্নায়ুযুদ্ধ।মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র,চীন,রাশিয়া,উত্তর কোরিয়া,জার্মানি,ফ্রান্স,জাপান এসবের দ্বন্দ্ব তো আছেই।আজ বিশ্ববাজার দখলে মেতে উঠেছে হর্তাকর্তারা।বিশ্ববাজারে আজ একচেটিয়া রাজত্ব করছে চীন,জাপান,মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র,রাশিয়া,ইসরায়েল।এই করোনার আবির্ভাব যে বিশ্বমোড়লদের বিশ্ববাজার দখলের নেপথ্যে তা বলার অবকাশ রাখে না ।উন্নয়নশীল আর অনুন্নত দেশগুলোকে হাতের কব্জায় রেখে করোনাকে নেপথ্যে রেখে বিশ্ববাজার আজ দখলে নিয়েছে।বলতে পারেন এই করোনাই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ।যে যুদ্ধ কোনো সামরিক যুদ্ধ নয়,সদৃশ্য কোনো বিমান হামলা করে যুদ্ধ নয়।মাথা খাটিয়ে প্রকৃতিকে কাজে লাগিয়ে নিরব এক যুদ্ধ।এ যুদ্ধে যে শুধু চীনের একার হাত রয়েছে তা নয়।এর পেছনে আরোও কলকাঠি নাড়ছে তাদের সহচররা।বিশ্বব্যাপী আজ যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব হলেও আর যুদ্ধ বাঁধবে না।কারণ-হুকুম দেবার দায়ভার কেউ নিবে না।যুদ্ধ না বাঁধলেও আধিপত্য বিস্তারের লড়াই যে থেমে আছে তা নয়।তবে যদিও সরাসরি হুকুম দিতে কেউ সাহস করবে না,তবে বিশ্বযুদ্ধ বাঁধার সম্ভাবনা নেই যে তা একেবারেই উড়িয়ে দেয়া যায় না।বর্তমান রাশিয়া-ইউক্রেন দ্বন্দ্ব পরবর্তী একটি বিশ্বদ্বন্দ্বের বীজ রোপণ করে।যদি ইউক্রেন রাশিয়ার আহ্বানে ন্যাটো হতে দূরে থাকে তাহলে কোনো রক্তপাতের সম্ভাবনা নেই।তবে ইউক্রেন যদি পশ্চিমাদের রোষানলে পড়ে ন্যাটোতে যোগ দেয় তবে অবশ্যই ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাত অনিবার্য।আর ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা চালানোটা হবে তাদের আত্মরক্ষার্থেই।এমতাবস্থায় রাশিয়া ইউক্রেন হামলা থেকে কখনো বিরত থাকবে না যদি না ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগ দেয়া হতে বিরত থাকে।পশ্চিমা দেশগুলো মূলত রাশিয়ার বিরুদ্ধেই ন্যাটো গঠন করেছিলো।আর এই ন্যাটো ডুকে পড়বে একেবারে ঘরের কোণে এটা কখনো রাশিয়া মেনে নিবে না।আর যদি রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করেই বসে,ইউক্রেন তো অবশ্যই জবাব দিবে।আর যখন ইউক্রেন পেরে উঠতে পারবে না তখন যদি ন্যাটো ভূক্ত বা পশ্চিমা যে কোনো দেশই যদি ইউক্রেনের পক্ষ নিয়ে এগিয়ে আসে তবে আরেকটি বিশ্বযুদ্ধ যে নিকটেই এটা নিশ্চিত। শুনা যাচ্ছে ন্যাটো জোট ইউক্রেনকে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।
বর্তমান বিশ্বে আধিপত্য বিস্তারের সুবর্ণ সুযোগ বিশ্ববাজার।নানান কলে-কৌশলে বিশ্ববাজার দখলে মরিয়া হয়ে উঠেছে বিশ্বমোড়লরা।এই ইসরায়েলীদের এর কথা ভাবতে পারেন।যারা ফিলিস্তিনে উড়ে এসে জুড়ে বসেছে।পবিত্র ফিলিস্তিন তাদের ভূ-খণ্ড নয়।শরণার্থী হিসেবে বসবাস ছিলো তাদের।লোক সংখ্যাও অতি সামান্য।অথচ আজ গোটা ফিলিস্তিনে তাদের কর্তৃত্ব।
শুধু কি তাই!
আজ বিশ্ববাজার তাদের দখলে।বিশ্বের প্রতিটি বাজারে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে তাঁদের পণ্য ।বিশ্ববাজার দখল করে বিশ্বমোড়লদের সাথে তাল মিলিয়ে চলছে।শরণার্থী হয়েও আন্তর্জাতিক কোনো ইস্যুতে তাদের নাম থাকে প্রথম সারিতে।ফিলিস্তিনে শরণার্থী হয়ে সেখানকার স্থানীয় মুসলমানদের ওপর দমন-নিপীড়ন চালায় প্রতিনিয়ত।বিশ্বময় আধিপত্য বিস্তারে যে বিশ্ববাজার দখলের বিকল্প নেই তার প্রমাণ উদ্বাস্তু ইসরায়েলীরা।এই করোনাকে কাজে লাগিয়ে নতুন কৌশলে বিশ্ববাজার হাতিয়ে নিয়েছে তারা।
উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশগুলোতে করোনা সামগ্রী রপ্তানি করে আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে যাচ্ছে তারা।এই সকল রাষ্ট্রগুলো করোনা সামগ্রী সরবরাহ করতে গিয়ে পড়েছে নাজেহাল অবস্থায়।হিমশিম খাচ্ছে রাষ্ট্রগুলোর স্বাস্থ্য খাত।করোনার এই কালো থাবায় প্রতিটি রাষ্ট্রের বাজেটে দেখা দিয়েছে বিশাল ঘাটতি।করোনাকালে মধ্যম আয়ের দেশ তকমা লাগানো বাংলাদেশেই দেখা দিয়েছে রেকর্ড পরিমাণ ঘাটতি।মহামারী করোনা ভাইরাস মোকাবিলা ও অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে রেকর্ড পরিমাণ ঘাটতি নিয়ে ২০২০-২১ অর্থ বছরের জন্য বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা।প্রস্তাবিত বাজেটের ঘাটতি হতে পারে টাকার প্রায় ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা।যা জিডিপির ছয় শতাংশ।এদিকে ২০২১-২২ অর্থ বছরের বাজেট বাড়িয়ে বৃদ্ধি করা হয়েছে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা।যার মধ্যে করোনায় বরাদ্দ ১০ হাজার কোটি টাকা।প্রথমত করোনা সামগ্রী আমদানি অতঃপর ভ্যাকসিন সরবরাহ করতে গিয়ে এই সকল রাষ্ট্রগুলোর নাজুক অবস্থা।রাষ্ট্রগুলো ভেঙে পড়ে অর্থনৈতিক ভাবে।আর এই গোটা বাজারটি পরিচালনা করেছে ঐ গুটিকয়েক রাষ্ট্র।তার মধ্যে করোনার উৎপত্তি স্থান চীন অন্যতম।
লেখা-: আগস্ট-২০২৩ ইংরেজি।
লেখক-:
আবু তালহা বিন মনির,
শিক্ষার্থী (ইতিহাস বিভাগ),
জামালগঞ্জ সরকারি কলেজ,সুনামগঞ্জ।