বিশেষ প্রতিবেদন |
রাস্তায় গর্তের পর গর্ত চার বছরের মাথায়ই ধসে পড়েছে কোটি টাকার উন্নয়
খুলনা মহানগরের জিরো পয়েন্ট থেকে ডুমুরিয়ার চুকনগর পর্যন্ত খুলনা-সাতক্ষীরা আঞ্চলিক মহাসড়ক এখন রীতিমতো এক ‘মরণফাঁদ’। জনবহুল এই রাস্তায় চলাচল করা এখন রীতিমতো জীবনের ঝুঁকি নেওয়ার শামিল। ভয়াবহ গর্ত, উঁচু-নিচু চাঙ্গা-পিচ উঠে যাওয়া, আর কোথাও কোথাও পিচের বদলে ইট বিছিয়ে দায়সারা সংস্কার সবমিলিয়ে রাস্তাটি যেন দুর্নীতির প্রতিকী নিদর্শন।
মাত্র চার-পাঁচ বছর আগে অর্থাৎ ২০১৮-২০২০ সালের মধ্যে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে এ সড়কের প্রশস্তকরণ ও পূর্ণাঙ্গ নির্মাণকাজ শেষ করে প্রভাবশালী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘মোজাহার এন্টারপ্রাইজ’। কিন্তু নির্মাণ শেষের এক বছরের মাথায়ই রাস্তার অবস্থা ভয়াবহভাবে অবনতির দিকে যেতে শুরু করে।
জনগণের ক্ষোভ: এটা কি উন্নয়ন না প্রতারণা? স্থানীয় বাসিন্দা ও চালকদের বক্তব্য নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী, দুর্বল ফাউন্ডেশন এবং কাজের তদারকির সম্পূর্ণ অভাবই এই ধসের কারণ।
পরিবহন চালক মো. আলতাফ হোসেন বলেন,
এতো টাকা খরচ করে রাস্তা বানিয়ে যদি এভাবে ভেঙে পড়ে, তাহলে জনগণের সঙ্গে মশকরা ছাড়া আর কী?
রেন্ট-এ-কার ব্যবসায়ী মো. রাসেল বলেন, কেউ আর ওই রাস্তা দিয়ে যেতে চায় না। ধুলা-মাটি আর গর্তের ভয়েই গাড়ি পাঠানো বন্ধ করেছি।
ভুয়া উন্নয়ন, জোড়াতালির সংস্কার! বর্তমানে কোথাও কোথাও পিচ তুলে দিয়ে ইট বিছিয়ে সংস্কারের নাটক চলছে। স্থানীয়রা বলছেন, এটা জনগণের সঙ্গে প্রহসন। প্রকৃতপক্ষে এটি সরকারি অর্থের চরম অপচয় এবং দুর্নীতির স্পষ্ট উদাহরণ।
প্রকৌশলী বলছেন: মেরামত শুরু হবে কিন্তু কবে? খুলনা সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. তানিমুল হক বলেন, সড়কের ফাউন্ডেশন দুর্বল ছিল, এজন্য ক্ষতি হয়েছে। নতুন প্রকল্পে মেরামত কাজ শুরু হবে আগামী মাসে।
কিন্তু দীর্ঘদিন ধরেই এমন প্রতিশ্রুতি শুনে আসছেন স্থানীয়রা। তাঁদের দাবি সময়ক্ষেপণ না করে দ্রুত টেকসই ও মানসম্মত মেরামত নিশ্চিত করতে হবে।
নাগরিকদের দাবি: দুর্নীতির তদন্ত চাই নাগরিক সংগঠনগুলোর দাবি, সড়কের এমন ভগ্নদশার পেছনে দায়িত্বপ্রাপ্তদের অবহেলা, দুর্নীতি ও মনোপলি ঠিকাদারি সিন্ডিকেটের জবাবদিহি জরুরি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেখানে সর্বোচ্চ ২২.৫ টনের যানবাহন চলার কথা, সেখানে প্রতিদিন চলছে ৫০ টন ওজনের ট্রাক। এর ফলে পুরো সড়ক অবকাঠামোই ভেঙে পড়েছে।