মতিন গাজীঃ
দেশের সারের চাহিদা সামঞ্জস্য না রেখে অতিরিক্ত সার আমদানি করার জন্য বিএডিসিরি প্রতিবছর সেণ্ট হচ্ছে বিপুল পরিমাণ নন- ইউরিয়া সার। সার চাহিদা মূলত সেপ্টেম্বর থেকে ফেব্রয়ারী মাস পর্যন্ত । কি বিএডিসির সার সারা বছর ধরে আমদানি করে থাকে। একদিকে যেমন বিএডিসির গুদাম জাত করণ স্বল্পতা ও অদক্ষ পরিবহন ঠিকাদার নিয়োগের কারণে বিপুল পরিমাণ সার নষ্ট হচ্ছে। সারাবছর খোলা আকাশের নিচে রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে একাকার হয়েছে বাংলাদেশ কৃষি কর্পোরেশনের (বিএডিসি) আমদানিকৃত লাখ লাখ বস্তা নন-ইউরিয়া সার। আসন্ন বোর মসুম সামনে রেখে ওই সার শুকিয়ে ক্রাশিং করে ফের নতুন বস্তায় ভরে বিএডিসির গুদামে পাঠাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট পরিবহন ঠিকাদাররা। অপেক্ষাকৃত গুণাগুন নষ্ট হওয়া ওই সার কিনে কৃষক প্রতারিত হতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে কৃষির গুরুত্বপূর্ণ এই খাত দায়িত্বরতদের বছরের পর বছর রয়েছে উদাসীনতা। অনুসন্ধানে জানা গেছে, বছরজুড়েই দেশের চাহিদা অনুযায়ী ৬০ ভাগ সার যশোরের অভয়নগরের বাণিজ্য শহর নওয়াপাড়া থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় আমদানী ও সরবরাহ করা হয়। দেশের নওয়াপাড়া, খুলনা ৭নং ঘাট, মুক্তারপুর, আশুগঞ্জ ঘাটে খোলা আকাশের নিচে নামমাত্র তাঁবু টাঙিয়ে এসব সার রাখতে দেখা যায়। গত বছর ডলার সংকটের মধ্যেও বিদেশ থেকে উচমল্য আমদানি করা সার এখনা দেশের বিভিন প্রান্তে খোলা আকাশের নিচে রোদ-বৃষ্টিতে পড়ে রয়েছে। একটি সূত্র বলছে, মুক্তারপুরের আমান ঘাট এখনে প্রায় ৮০ হাজার থেকে এক লাখ বস্তা ডিএপি সার পানিতে ভিজে-গেলে মানহীন অবস্থায় পড়ে রয়েছে। যার আমদানি মূল্য ১০ থেকে ১২ কোটি টাকা হতে পারে। দেশে ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যে সরকার ওই সার বিপুল অর্থ ভর্তুকি গুনছে। কি বিএডিসি কর্মকর্তা ও ঠিকাদারদের গাফিলতিতপ ভালো সার নষ্ট হচ্ছে, যা কৃষকদের ক্ষতিগ্রস্ত করার ঝুঁকি তৈরি করছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ভেজা সারের বস্তা শ্রমিকরা রোদ দিয়ে শুকাচ্ছেন। আর যেসব বস্তা পুরাপুরি ভিজে সার নরম হয়ে গেছে। সেসব বস্তা থেকে সার ঢেলে শুকিয়ে দলা বাঁধিয়ে তারপর আবার ক্রাশিং কর নতুন বস্তায় রি-প্যাকিং করা হচ্ছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে নতুন সারও মেশানা হচ্ছে। এরপর আশপাশের বিএডিসি গুদামে সরবরাহ করা হচ্ছে।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএডিসির আমদানি করা ওই সারের শীপ ব্রাকার ও পরিবহন ঠিকাদার হিসেবে দায়িত্বে পালন করছে ‘মেসার্স বেঙ্গল ট্রেডার্স’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। কয়েক মাস আগে সার ভিজে যাওয়ার ঘটনা সরজমিনে পরিদর্শন করেছেন বিএডিসির জিএম আজিম উদ্দিন, ম্যানজার মেজবাহ উদ্দিন, মুভমেট ম্যানেজার নোমান উদ্দিন, যুগ্ম-পরিচালক কামাল উদ্দিন।প্রাথমিকভাব সার পরিবহন ঠিকাদারদের দায়িত্বহীনতার কারণে সরকারর বিপুল পরিমাণ ক্ষতি হলেও শাস্তিমূলক কোন ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। গুঞ্জন রয়েছে, শীর্ষপদের এক কর্মকর্তা ও তৎকালীন সদস্য পরিচালক (সার) আব্দুস সামাদের হস্তক্ষেপ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি। এমনকি ঊর্ধতনদের ইশারায় বিএডিসির দায়িত্বপ্রাপ্ত ট্যাগ অফিসার ও ঊর্ধতন কর্মকর্তারা বিশেষ কারণে মানহীন সার গুদামে ঢোকাতে বিধিনিষেধ দিতে পারেননি। সরকারি আইন অনুযায়ী, সার সুষ্ঠুভাবে গুদামে পৌঁছে দিতে না পারলে সংশ্লিষ্ট পরিবহন ঠিকাদারের কাছ থেকে আমদানিমূল্য আদায় করার বিধান রয়েছে। তবে এসব ঘটনায় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান বিএডিসি কর্মকর্তাদের ‘ম্যানেজ’ ফর্মুলায় তুষ্ট রেখে নষ্ট সার গুদামে পৌঁছে দিয়ে কৃষকদের ক্ষতিগ্রস্ত করছে।কয়কটি জেলায় বিগত কয়েক মাসের বরাদ্দের বিপরীতে গুদামে থেকে মানহীন সার ডিলারদের সরবরাহ করলে কৃষক পর্যায় অসন্তোষ দেখা দেয়। কৃষক ও ডিলাররা এই সারর গুণাগুণ নিয় প্রশ্ন তুললেও পাননি প্রতিকার। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওই সার বিএডিসির মড্ডা গোডাউন থেকে সরবরাহ করা হয়েছে। স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারাও এমন অভিযোগ পেয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন। যশোরের কেশবপুর উপজেলার মাধবপুর গ্রামের রবিউল ইসলাম তিনি বলেন, প্রতি মৌসুমে যখনই সারের প্রয়োজন হয় ঠিক সেই মুহূর্তে স্থানীয় ডিলার পয়েন্ট চাহিদা মোতাবেক সার সরবরাহ থাকে না। গল মৌসুমে বস্তায় ২০০ টাকা বেশি দিয়ে সার কিনতে বাধ্য হয়েছে। তারপরও প্রচুর চাহিদার ওই সময় ভেজা ও জমাটবাঁধা সার কিনতে বাধ্য হতে হয়।এ প্রসঙ্গে স্থানীয় আরেকজন কৃষক আতাউর রহমান বলন, সারের ত্রুটি ধরতে গেলে স্থানীয় ডিলার মালিকরা বলে থাকেন- গুদাম থেকে যা পেয়েছি তাই বিক্রি করছি। পছদ হলে কেনেন, না হলে রেখে যান। এতে বাধ্য হয়েই জমাটবাঁধা সার কিনতে হই। এ ধরনের সার ব্যবহার করায় ঠিকমত ফসলের হিসাবও মেলে না। অভয়নগরের বিসিআইসি ডিলার নাম প্রকাশঅনিছুক বলেন, ‘গত মৌসুম স্থানীয় গোডাউনগুলো থেকে ভেজার কারণ শক্ত হয়ে যাওয়া নিম্নমানের ডিএপি সার সরবরাহ করা হয়। যার কারণে বরাদ্দের সব সার উত্তোলন করিনি। যা উত্তোলন করপছি তা কৃষক না কেনার কারণে স্থানীয় মৎস্য খামারিদের কাছে অল্প মূল্যে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছি। সার ভেজা প্রসঙ্গে এক প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার বলেন, এ ধরনর কোন তথ্য আমার কাছে নেই। এদিকে, সারের গুণাগুণ নষ্টের জন্য বিএডিসিকে দায়ী করেছেন কয়েকটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান।তাদের মতে, সারাদেশের বিএডিসি গুদামগুলার ধারণ ক্ষমতা দুই লাখ ৫০ হাজার থেকে ৩ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন। অথচ প্রতিবছর বিএডিসি আমদানি করে ২০ থেকে ২২ লাখ মেট্রিক টন। ধারণক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত আমদানি করার কারণে সময়মত সার পৌঁছে দিলেও গুদাম জায়গার অভাব তারা বুঝে নিতে ব্যর্থ হয়। ফলে খোলা আকাশের নিচে তাঁবু টাঙিয়ে মজুদ রাখতে বাধ্য হয় ঠিকাদাররা। যদিও বিএডিসির যোগসাজশে কিছু অদক্ষ ঠিকাদার পরিবহনের কাজ নিয়ে ওই সার কালোবাজারে বিক্রির মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়ার নজির রয়েছে। গত বছর বেঙ্গল ট্রডার্স নামের একটি পরিবহন ঠিকাদারের কাছ থেকে প্রায় ২০ লাখ বস্তা ডিএপি সার ভিজে নষ্ট হয়। তুলনামূলক মানহীন ওই সার রোদে শুকিয়ে ভালো সারের সঙ্গে মিশিয়ে বিএডিসি গুদামে পাঠানোর অভিযোগ রয়েছে। এখনো বিপুল পরিমাণ নিম্নমানের সার গুদামে পাঠানো হচ্ছে। বিগত বছর গুলাতে দেখা গেছে সার আত্মসাৎ এর ঘটনায় জড়িত ছিল প্রোটন ট্রেডার্স, কুষ্টিয়া ট্রেডার্স, নবাব এন্ড কোং, কেএন এন্টার প্রাইজের মত অনেক বিএডিসি পরিবহন ঠিকাদার এখনো লক্ষ লক্ষ বস্তা পচাঁ গলা সার মুক্তাপুর ঘাটে পড়ে রয়েছে। দেশের বিভিন্ন এলাকার গুদাম রক্ষকদের সাথে রফা দফা করে ওই সার বিএডিসিকে বুঝে দেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে বিএডিসির মহাব্যবস্থাপক (সার) মো. আজিম উদ্দিন ও ব্যবস্থাপক (বিক্রয়) মো. কবিরুল হাসান এর মুঠাফানে একাধিকবার যোগাযোগকরা করে পাওয়া যায়নি। এরপর সার ব্যবস্থাপনা বিভাগের ব্যবস্থাপক (সংরক্ষণ) কানিজ ফারজানা সাথ কথা হল তিনি জানান, আমাদের সার রাখার জন্য পর্যাপ্ত গুদাম আছে। বাইরে যে গুলা আছ আমাদের নিয়ন্ত্রণ নেই।