মোঃ মিন্টু মিয়া,বিশেষ প্রতিনিধি:
গাজীপুরের শ্রীপুরে দুই শ্রমিককে তুলে নিয়ে মুক্তপণ দাবি করে পরিবারের লোকজনকে ফোন দিলে সেই ফোন পেয়েই মারা গেছেন এক মা। পরে একজনের মায়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে মুক্তিপণ ছাড়াই ২শ্রমিককে ছেড়ে দেওয়া হয়।
শনিবার শ্রীপুর পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের লোহাগাছ ফালু মার্কেট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।এরআগে, শুক্রবার রাতে কাজ থেকে ফেরার পথে অপহরণের শিকার হয় কারখানার দুই শ্রমিক। যদিও মায়ের মৃত্যুর খবর শুনে শনিবার সকালে ওই ২জনকে ছেড়ে দেয় অপহরণকারীরা। তাদেরকে মারধর করায় চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
অপহরণের শিকার দুজন হলেন,রাজশাহী সদরের রাজপাড়া গ্রামের সেলিম রেজার ছেলে মাহিন রহমান (২৪) এবং অন্যজন একই গ্রামের নবী হোসেনের ছেলে আহসান হাবীব (২৬)।তাঁরা দুজন লোহাগাছ ফালু মার্কেট এলাকার মুনছুর মীরের বাড়িতে ভাড়ায় থেকে স্থানীয় এসকেবি স্টেইনলেস স্টিল মিলস কারখানায় চাকরি করেন।
এ ঘটনায় কারখানার ব্যবস্থাপক আবদুল কাদের শ্রীপুর মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন।তাতে দুজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হলেন লোহাগাছ গ্রামের এম সালামতের ছেলে কাদের মিয়া (২৭) ও একই গ্রামের তাজউদ্দীনের ছেলে শাকিল আহাম্মেদ (৩০)।ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা পলাতক।
থানায় অভিযোগ ও কারখানার ব্যবস্থাপক আবদুল কাদেরের দেওয়া তথ্যমতে,ডিউটি শেষ করে ওই দুই শ্রমিক (যুবক) ভাড়া বাসায় ফেরার পথে বেশ কয়েকজনে মিলে তাদেরকে জোর করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়।সেখানে তাদেরকে মারধর করে তাঁদের সঙ্গে থাকা স্মার্টফোন ও টাকা নিয়ে যায় অপহরণকারীরা।এরপর রাত আড়াইটার দিকে আহসান হাবীবকে মারধর করে তার পরিবারের কাছে ফোন দিয়ে ১লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। ফোন পেয়ে অপহরণের শিকার আহসান হাবীবের মা অচেতন হয়ে পড়েন।রাত আড়াইটার তাঁর মায়ের মৃত্যু হয়। মৃত্যুর খবর শুনে অপহরণকারীরা শনিবার সকাল ১০টার দিকে মুক্তিপণের টাকা ছাড়াই দুজনকে ছেড়ে দেয়।
অপহরণের শিকার আহসান হাবীবের বড় ভাই আল আমীন বলেন,‘ছোট ভাই অপহরণ হয়েছে এমন খবর শুনে মা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হলেও রাতেই তিনি মারা যান।সন্তানের এমন বিপদে মা নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি। অবশেষে আমাদের এতিম করে আলে গেলেন মা।
শ্রীপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জয়নাল আবদিন মণ্ডল বলেন,আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ব্যাপারে একটি অভিযোগ পাওয়ার পর পুলিশ কাজ শুরু করে। জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।’প্রসঙ্গত,গতমাসে এক কারখানা শ্রমিককে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারীরা। পরে দাবীকৃত টাকা নিয়ে গেলে এক নারীকেও ধর্ষণ করে।যা নিয়ে শ্রীপুর থানায় মামলা হয়েছে।
এছাড়াও গত ১২ জানুয়ারি মাওনা চৌরাস্তার উড়ালসড়কের পাশ থেকে এক নিউরোসার্জনকে অপহরণ করা হলে একদিন পর ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দিয়ে বাসায় ফেরেন তিনি। ওই ডাক্তারের নাম আমিনুর রহমান। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজের নিউরোসার্জন বিভাগের চিকিৎসক।দিনদিন অপহরণ,চুরি,ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনায় রীতিমতো আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে শ্রীপুরে।