প্রতিনিধি 10 August 2025 , 2:55:50 প্রিন্ট সংস্করণ
ফয়সাল হায়দার, স্টাফ রিপোর্টার।
গাজীপুরে ভয়ংকর অপরাধ জগতের সম্রাট কেটু মিজান ও তাঁর স্ত্রী পারুল আক্তার গোলাপীর হাতে নিহত হয়েছেন দৈনিক প্রতিদিনের কাগজের স্টাফ রিপোর্টার আসাদুজ্জামান তুহিন। ঘটনাটি শুধু একটি হত্যাকাণ্ড নয়—এটি উন্মোচন করেছে দীর্ঘদিন ধরে চালু থাকা হানিট্র্যাপ ও ছিনতাই চক্রের অন্ধকার দুনিয়া। গতকাল শনিবার দুপুরে গাজীপুর মহানগর পুলিশ সদর দপ্তর থেকে আদালতে নেওয়ার সময় পিছমোড়া হ্যান্ডকাফ পরা মিজান ঔদ্ধত্যের সঙ্গে সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, “আপনারা নাটক-সিনেমা করেন, আমি করি রিয়েল।” হত্যার পরও তাঁর চোখে-মুখে বিন্দুমাত্র অনুশোচনা দেখা যায়নি।
জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার সিঁড়িঘাট মিলনবাজার এলাকার মোবারক হোসেনের ছেলে মিজান ২৫–৩০ বছর আগে রংপুরে যান। পরে একই এলাকার মো. সুলাইমানের মেয়ে গোলাপীকে বিয়ে করে গাজীপুরে আসেন। এখানে দম্পতি মিলে গড়ে তোলেন একটি সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্র, যার নিয়ন্ত্রণ ছিল মহানগরের ব্যস্ততম চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায়। গোলাপীর প্রধান অস্ত্র ছিল হানিট্র্যাপ—প্রতারক কৌশলে যুবকদের ফাঁদে ফেলে সর্বস্ব লুটে নেওয়া।
গত বৃহস্পতিবার রাতে গোলাপীর ফাঁদে পড়েন শেরপুরের বাদশা মিয়া। এটিএম বুথ থেকে ২৫ হাজার টাকা তোলার পর গোলাপী তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে চাইলে বাদশা বিষয়টি বুঝে যান এবং গোলাপীকে ঘুষি মারেন। সঙ্গে সঙ্গে ওত পেতে থাকা সহযোগীরা চাপাতি দিয়ে বাদশাকে এলোপাতাড়ি কোপাতে শুরু করে। এ সময় ঘটনাটি ভিডিও ধারণ করছিলেন সাংবাদিক তুহিন। দুর্বৃত্তরা বিষয়টি দেখে ফেলে এবং ভিডিও মুছে ফেলতে তাঁকে ধাওয়া করে। তুহিন একটি চা দোকানে আশ্রয় নিলেও সেখান থেকে ধরে এনে প্রকাশ্যে কুপিয়ে গলা কেটে হত্যা করা হয়।
ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কেটু মিজান, তাঁর স্ত্রী গোলাপীসহ ছয়জনকে মেট্রোপলিটন পুলিশ এবং স্বাধীনকে র্যাব–১ গ্রেপ্তার করে। কিশোরগঞ্জের ইটনা বাজার থেকে গ্রেপ্তার হয় শহীদুল ইসলাম, যাকে র্যাব–১–এর কাছে হস্তান্তর করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ, মাদক, ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধে মোট ২৯টি মামলা রয়েছে—এর মধ্যে শুধু মিজানই ১৫ মামলার আসামি। বাসন থানার ওসি শাহীন খান জানান, তুহিন হত্যায় দুটি মামলা হয়েছে—একটি নিহতের বড় ভাই মো. সেলিমের, অপরটি বাদশা মিয়ার ভাইয়ের দায়ের করা। সাতজনকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হলেও বিচারক দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার ড. মো. নাজমুল করিম খান স্বীকার করেন, “সাংবাদিক হত্যার দায় আমরা এড়াতে পারি না। আমাদের ব্যর্থতা ও জনবল স্বল্পতা রয়েছে।” তিনি আরও জানান, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেলে ১৫ দিনের মধ্যে চার্জশিট দাখিল করা হবে।
সাংবাদিক তুহিন হত্যার প্রতিবাদে এবং দ্রুত বিচারের দাবিতে ফরিদপুর, কুমিল্লা, সুনামগঞ্জ, পটুয়াখালী, জয়পুরহাট, নরসিংদী, রাজশাহী, সাতক্ষীরা, নারায়ণগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, মাদারীপুর, নড়াইল, নাটোর, লালমনিরহাট, পিরোজপুর, রংপুর, ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। এসব কর্মসূচিতে সাংবাদিকদের পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন।