আনোয়ার হোসেন গোমস্তাপুর উপজেলা প্রতিনিধি
চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে গবাদিপশুর মারাত্মক সংক্রামক রোগ ল্যাম্পি স্কিন ডিজিজ (Lumpy Skin Disease—LSD)। এ রোগে আক্রান্ত গরুর শরীরে চাকা চাকা ফোলা, উচ্চ জ্বর, দুর্বলতা ও খাদ্য গ্রহণে অনীহা দেখা দিচ্ছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি গরুর মৃত্যু হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, যা খামারিদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে।
পশুচিকিৎসকরা জানিয়েছেন, বর্ষা ও শরৎ মৌসুমে এই রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি হয়। আর্দ্র আবহাওয়া এবং মশা-মাছির সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ভাইরাসটি সহজে গবাদিপশুর দেহে প্রবেশ করে ও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
মিরাপুর গ্রামের খামারি সাব্বির হাসান বলেন,
“আমার একটি গরু হঠাৎ দুর্বল হয়ে পড়ে এবং শরীরে ফোলা দেখা দেয়। চিকিৎসকের পরামর্শে চিকিৎসা শুরু করেছি, তবে প্রতিদিনই অনেক টাকা খরচ হচ্ছে। আগে ভ্যাকসিন দিতে পারলে হয়তো এতটা অসুস্থ হতো না। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে টিকা দিলে আমাদের মতো ছোট খামারিরা উপকৃত হতো।”
পাথরপূজা গ্রামের খামারি বুলবুল আহমেদ বলেন,
“এই রোগে শুধু গরুই নয়, আমরা খামারিরাও বিপর্যস্ত। একদিকে চিকিৎসার খরচ, অন্যদিকে উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। সময়মতো ভ্যাকসিন দিলে অনেক ক্ষতি এড়ানো যেত।”
তেঁতুলতলা গ্রামের খামারি বাবু জানান,
“একটি গরু আক্রান্ত হওয়ার পর সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও বাঁচানো যায়নি। চিকিৎসায় অনেক টাকা খরচ হলেও শেষ পর্যন্ত মারা গেছে। বিনামূল্যে ভ্যাকসিন সরবরাহ করা হলে গ্রামের প্রান্তিক খামারিদের জন্য বড় সহায়তা হবে।”
উপজেলা কৃষকদলের সভাপতি মো. আনারুল ইসলাম বলেন,
“ল্যাম্পি ভাইরাস গোমস্তাপুরের খামারিদের জন্য বড় সংকট। গরু হারিয়ে অনেকেই দেউলিয়ার মুখে পড়ছেন। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উচিত জরুরি ভিত্তিতে মাঠপর্যায়ে ভ্যাকসিন পৌঁছে দেওয়া এবং সচেতনতামূলক কার্যক্রম বাড়ানো।”
ডি এইচ এম এস ডা. আব্দুল ওয়াদূদ জানান,
“এই রোগ প্রতিরোধে আক্রান্ত গরুর বিশেষ যত্ন, খামারের পরিচ্ছন্নতা এবং ভ্যাকসিন প্রয়োগই কার্যকর সমাধান। খামারিদের সচেতন করা এবং সরকারের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে ভ্যাকসিন সহায়তা দেওয়া এখন জরুরি।”
গোমস্তাপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা জানান,
“ল্যাম্পি ভাইরাস একটি ভাইরাসজনিত রোগ, যা মূলত মশা-মাছির মাধ্যমে ছড়ায়। আতঙ্কিত না হয়ে সচেতনতা ও সময়মতো চিকিৎসা গ্রহণই এর প্রতিকার। বিনামূল্যে ভ্যাকসিন বিতরণের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলছে। পাশাপাশি আক্রান্ত খামারিদের চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।”