রিপন হোসেন সাজু
অনাগ্রহের কারনে দুই দশক আগেও যশোরের মনিরামপুরে গ্রাম পুলিশে ছিল লোকবল সংকট। সামাজিক মর্যাদা, নামমাত্র বেতন-ভাতাসহ নানা কারনে এ পেশায় প্রবেশের অন্তরায় ছিল। সময়ের আবহে এখন সেই অবস্থার ব্যাপক উত্তরণ ঘটেছে। বর্তমানে এ পেশায় নিয়োগের সার্কুলার হলে কাংখিত পদের বিপরীতে অধিক সংখ্যক আবেদনের প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নানামূখী তদ্বিরে বিব্রতকর পরিস্থিতির মূখোমূখি হতে হয়। এদিকে গ্রাম পুলিশের বেতন বৃদ্ধির সাথে সাথে বেড়েছে সামাজিক মর্যাদা সেই সাথে বেড়েছে কাজের পরিধি। গ্রামে আইনশৃংখলা রক্ষা, বাল্য বিবাহ, যৌতুক, নারী ও শিশু নির্যাতনরোধে সহায়তা প্রদান ও গ্রাম আদালতের নোটিশ জারিসহ বিবিধ কাজের পরিধি বেড়েছে। জানাযায়, মোঘল আমলে গ্রাম পঞ্চায়েত ব্যবস্থায় গ্রামে স্ব উদ্যোগে পাহারার ব্যবস্থা করা হতো। ১৮৬১ সালে পুলিশ আইন মুঘল শাসন ব্যবস্থা হতে বিৃটিশ ঔপনিবেশিক শাসন ব্যবস্থায় ছিল চূড়ান্ত পদক্ষেপ। মুঘল আমলে তারা পাশাবন, সিঘাবন ও চৌকিদার নামে পরিচিত ছিল। ১৮৭০ সালে চৌকিদার আইন প্রণয়নের মাধ্যমে আইনি স্বীকৃতি দেয়া হয়। পাকিস্তান আমলে মৌলিক গনতন্ত্র আদেশ ১৯৫৯-এর প্রেক্ষিতে তাদের দফাদার ও মহল্লাদার রাখা হয়। তখন তাদের বেতন ছিল মাত্র ৫০ টাকা। দেশ স্বাধীনের পর স্থানীয় সরকার আইন (ইউনিয়ন পরিষদ), ১৯৮৩ এর মাধ্যমে তাদের নাম ‘গ্রাম পুলিশ’ রাখা হয়। সরেজমিন খানপুর গ্রামে গেলে চোখে হযরত আলী নামের একজন গ্রাম পুলিশ গ্রাম আদালতের নোটিশ জারি করছেন। এসময় তিনি বলেন, ১৯৯৮ সালের ৪ এপ্রিলে মাত্র সাড়ে তিনশ’ টাকার বেতনে তিনি এ পেশায় যোগদান করেন। ওই সময় কেউ কেউ এ পেশায় আসতে চেতেন না। গ্রামের সহজ-সরল ও কোন কাজ করতে না পারাদের পেশায় নিয়ে আসা হতো। বর্তমানে তিনি সাড়ে আট হাজার টাকা বেতন পাচ্ছেন। যার অর্ধেক রাজস্ব খাত হতে বাকী অর্ধেক ইউনিয়ন পরিষদ হতে পান। এছাড়া ২০০১ সাল হতে পূর্ণাঙ্গ ঈদ বোনাস ও ২০২৩ সাল হতে তেরশ’ টাকার বৈশাখী ভাতা পেয়ে আসছেন। এসময় স্থানীয় পারভীনা খাতুন, পদ্ধরানী কর্মকারসহ অনেকেই বলেন, সরকারের অনুদারে খবরসহ নানা খবরাখবর গ্রাম পুলিশ তাদের আগেই জানিয়ে দেন। গ্রাম পুলিশ মনিরামপুর উপজেলা শাখার সভাপতি মোঃ রবিউল ইসলাম জানান, ২০০৮ সালে তৎকালীন সরকার জাতীয় বেতন স্কেলের চতুর্থ শ্রেণিতে অন্তর্ভূক্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরবর্তিতে কার্যকরীতে গড়িমসি করায় ২০১৭ সালে গ্রাম পুলিশের কেন্দ্রীয় নেতা লাল মিয়াসহ ৩শ’৫৫ জন জাতীয় বেতন স্কেলের ঘোষণা কার্যকর করতে উচ্চ আদালতে রিট করেন। ২০২০ সালের ১৯ ডিসেম্বরে জাতীয় স্কেলের ২০-তম ও ১৯-তম গ্রেডে অন্তর্ভূক্তিকরণে উচ্চ আদালত রায় প্রদান করেন। তিনি আরও জানান, এ উপজেলার প্রতি ইউনিয়নে ১০ জন করে গ্রাম পুলিশ ( একজন দফাদার ও ৯ জন মহল্লাদার) মোট ১শ’৭০ জন গ্রাম পুলিশ রয়েছে।