অন্যান্য

গ্রীষ্মকালীন ভূট্টা আবাদ ও চাষের মৌসুম:

  প্রতিনিধি 25 March 2025 , 2:48:12 প্রিন্ট সংস্করণ

Oplus_131072

 

জি এম ফিরোজ উদ্দিন

 

ভুট্টা বীজ সারা বছরই বপন করা যায়৷ তবে বাংলাদেশে সাধারণত ৩টি মৌসুমে বীজ বপন করা হয়৷

মাটির ধরন:

ভুট্টা চাষের জন্য উঁচু ও মাঝারি জমি ভালো৷ চাষের জন্য দোআঁশ থেকে পলি দোআঁশ মাটি ভালো৷ মাটির অম্লমান ৬.৫ থেকে ৭.৫ উত্তম৷ সঙ্কর জাতের ভুট্টা চাষ করে অধিক ফলন পেতে হলে জমি উর্বরতা-সম্পন্ন হওয়া দরকার৷

বাংলাদেশের প্রায় সব এলাকায় ভুট্টা চাষ করা যায়৷ তবে নিম্নলিখিত মাটি-যুক্ত এলাকাসমূহ এ কাজের জন্য ভাল৷

দোআঁশ ও পলি দোআঁশ মাটি৷

সেচ সুবিধা থাকলে অন্যান্য মাটি৷

চর ও হাওড় এলাকার উঁচু পর্যায়ের মাটি যা অক্টোবর মাসে শুকিয়ে যায়৷

 

জমি তৈরি পদ্ধতি:

জমিতে ৫ থেকে ৬টি আড়াআড়ি চাষ ও মই দিয়ে ভুট্টার জমি তৈরি করতে হয়৷ মাটির ঢেলা গুঁড়া করে মাটি ঝুরঝুরে করে মই দিয়ে জমি সমতল করতে হয়৷ জমিতে প্রয়োগ জৈব সার ইউরিয়ার অংশবিশেষ টিএসপি, এমপি, জিপসাম ও দস্তা সার জমির শেষ চাষের সময় মাটির সাথে ভাল করে মিশিয়ে দিতে হয়৷ জমির আগাছা মাটির সাথে এমনভাবে মিশিয়ে দিতে হয় যাতে পঁচে গিয়ে সারে পরিণত হয়৷ বড় আকারের আবর্জনা বেছে বাইরে ফেলে দিতে হয়৷ জমির জো অবস্থায় গভীরভাবে চাষ দিতে হয়৷

 

বীজ বপন পূর্বে বীজ শোধন:

বীজ বপনের আগে প্রতি কেজি বীজ ৩ গ্রাম ভিটাভেক্স ২০০ বা ৩ গ্রাম খিরাম দিয়ে শোধন করে নিলে রোগের আক্রমণ কম হয়৷ বীজ শোধনের জন্য একটা ঢাকনাওয়ালা কাঁচের, প্লাস্টিকের বা টিনের পাত্র ব্যবহার করতে হবে৷ প্রতি কেজি বীজের জন্য ৩ গ্রাম ভিটাভেক্স-২০০ (০.৪%) পাত্রের মধ্যে নিয়ে এমনভাবে ঝাঁকাতে হবে যাতে বীজের সঙ্গে ঔষধ ভালোভাবে মিশে যায়৷ শোধিত বীজ একটি বদ্ধ পাত্রে রাখতে হবে যাতে বাতাস ঢুকতে না পারে৷

 

বীজ বপন:

ভুট্টা বীজ সারিতে বুনতে হয়৷ সারি থেকে সারির দূরত্ব ৬০ থেকে ৭৫ সেন্টিমিটার এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ২৫ থেকে ৩০ সেন্টিমিটার৷ বীজের হার প্রতি শতকে ৮০ গ্রাম৷

গোখাদ্য হিসেবে চাষ করতে হলে বীজের পরিমাণ প্রতি শতকে ৩০০ থেকে ৩৫০ গ্রাম দিতে হয়৷ বীজ রোপণের প্রতিটিতে দুটি করে বীজ দিতে হয়৷ ৫ থেকে ৮ সেন্টিমিটার গভীরে রোপণ করতে হয়

সার ব্যবস্থাপনা:

ভুট্টার পুষ্টি চাহিদা অনেক বেশি৷ এজন্য অধিক ফলন পেতে হলে ভুট্টা জমিতে সুষম সার দিতে হয়৷ ভুট্টা জমির প্রয়োজনীয় সার নিচে দেওয়া হলো৷ এছাড়া প্রতি শতক জমিতে সারের পরিমাণ ও নিচে উল্লেখ করা হলো:

সার পরিমাণ (কেজি/শতক)

ইউরিয়া

টিএসপি

এমপি

জিপসাম

জিংক সালফেট

বৃক এসিড

পঁচা গোবর

সার প্রয়োগ পদ্ধতি:

 

এক-তৃতীয়াংশ ইউরিয়া, টিএসপি ও এমপি সার জমি প্রস্তুতের সময় প্রয়োগ করে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হয়৷ বাকি ইউরিয়ার অর্ধেক বীজ বপনের ৩০ থেকে ৩৫ দিন পর এবং অবশিষ্ট ইউরিয়া ৫০ থেকে ৭০ দিন পর প্রয়োগ করতে হয়৷

দ্বিতীয় ও তৃতীয় বারের ইউরিয়া পার্শ্ব-প্রয়োগ করতে হয়৷

 

সেচ ব্যবস্থাপনা:

উচ্চ ফলনশীল জাতের ভুট্টার আশানুরূপ ফলন পেতে হলে সেচ প্রয়োগ অত্যাবশ্যক৷

(১) প্রথম সেচ বীজ বপনের ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে (৪ থেকে ৬ পাতা পর্যায়ে)

(২) দ্বিতীয় সেচ বীজ বপনের ৩০ থেকে ৩৫ দিনের মধ্যে (৮ থেকে ১২ পাতা পর্যায়ে)

(৩) তৃতীয় সেচ বীজ বপনের ৬০ থেকে ৭০ দিনের মধ্যে (মোচা বের হওয়া পর্যায়ে)

(৪) চতুর্থ সেচ বীজ বপনের ৮৫ থেকে ঌ৫ দিনের মধ্যে (দানা বাঁধার আগের পর্যায়ে) দিতে হয়৷

ভুট্টার ফুল ফোটা ও দানা বাঁধার সময় কোনোক্রমেই ক্ষেতে জলাবদ্ধতা হতে দেওয়া যাবে না৷

ফসল সংগ্রহ:

দানার জন্য ভুট্টা সংগ্রহের ক্ষেত্রে মোচা চক্‌চক্‌ খড়ের রং ধারণ করলে এবং পাতা কিছুটা হলদে হলে সংগ্রহের উপযুক্ত হয়। এ অবস্থায় মোচা থেকে ছড়ানো বীজের গোড়ায় কালো দাগ দেখা যাবে। ভুট্টা গাছের মোচা ৭৫-৮০% পরিপক্ক হলে ভুট্টা সংগ্রহ করা যাবে। বীজ হিসেবে মোচার মাঝামাঝি অংশ থেকে বড় ও পুষ্ট দানা সংগ্রহ করতে হবে।

 

ফেসবুক থেকে সংগ্রহ

আরও খবর

                   

জনপ্রিয় সংবাদ