অন্যান্য

চরমপন্থি থেকে চোরাকারবারি, আ.লীগ করে এখন কয়েকশ কোটি টাকার মালিক

  প্রতিনিধি 28 October 2024 , 5:18:31 প্রিন্ট সংস্করণ

 

একটা সময় ছিলেন দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের চরমপন্থি সংগঠন পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির সক্রিয় সদস্য। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানে আত্মসমর্পণ করে জেল খাটেন। বের হয়ে জড়িয়ে পড়েন চোরাকারবারে। পরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে এসে পেয়ে যান আলাদিনের চেরাগ। বনে যান আঙুল ফুলে কলা গাছ। এখন তিনি কয়েকশ কোটি টাকার সম্পদের অধিকারী।

এলাকাবাসীর মতে, নামে ও বেনামে তার সম্পদ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি। সেই চরমপন্থি থেকে চোরাকারবারি, আ.লীগ করে এখন কয়েকশ কোটি টাকার মালিক হলেন, মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার যতারপুর গ্রামের বাসিন্দা স্বাধীনতাবিরোধী ও তালিকাভুক্ত রাজাকার আমিনুল ইসলামের ছেলে আমাম হোসেন মিলু।

জানা গেছে, গণঅভ্যুত্থানের পরও বিগত ১৬ বছরে প্রদর্শন করা দোর্দণ্ড দাপটের বিন্দুমাত্র কমেনি তার পরিবারের সদস্যদের। আওয়ামী লীগ সরকারের পতন পরবর্তী সময়ে একাধিক মামলার এজহারভুক্ত আসামি হলেও মিলুকে আটক করতে তার বাড়িতে এখন পর্যন্ত পুলিশ বা যৌথবাহিনী অভিযান চালায়নি।

স্থানীয়দের অভিযোগ, মিলুর আত্মীয়দের মধ্যে জেলা বিএনপির কয়েকজন প্রভাবশালী নেতাকর্মী থাকায় আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরও তার ক্ষমতার কমেনি। মিলুর ছোট ভাই শিলুর বেয়াই রতনপুর গ্রামের বাসিন্দা পলাশ স্থানীয় বিএনপির একজন প্রভাবশালী নেতা। আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে বিএনপি কর্মী ও তার সাবেক ব্যবসায়িক পার্টনার টুলু বিশ্বাসসহ আরও কয়েকজন প্রভাবশালী বিএনপি নেতাকর্মীর ছত্রছায়ায় থেকে এখনো ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে যাচ্ছেন।কয়েক মাস জেলও খাটেন মিলু। অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় মিলু এবং মুকুল সাহা ও অপর দুই সহযোগীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন ভারতীয় আদালত। তবে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর মামলা চলাকালীন সময়ে তিন মাস পর জামিনে মুক্তি পেয়েছিলেন মিলু। সে সময় তৎকালীন মেহেরপুর-১ সংসদীয় আসনের সংসদ সদস্য প্রফেসর আব্দুল মান্নানের সহযোগিতা নিয়ে সীমানা অতিক্রম করে বাংলাদেশে চলে আসেন। মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় এরপর তিনি আর কখনো ভারতে যাননি। বিষয়টি কালবেলাকে নিশ্চিত করেছেন সাবেক সংসদ সদস্য প্রফেসর আব্দুল মান্নান।

কালবেলার অনুসন্ধান কালে জানা যায়, মেহেরপুর জেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি জাবেদ মাসুদ মিল্টন সম্পর্কে আমাম হোসেন মিলুর ভাতিজা (বোনের দেবরের ছেলে)। আরও জানা যায় তাদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে ব্যক্তিগত সম্পর্ক অত্যন্ত তিক্ত।

বিষয়টি নিয়ে জেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি জাবেদ মাসুদ মিলটনের সঙ্গে কালবেলা থেকে পক্ষ থেকে কথা বলার জন্য বারবার চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। বিষয় উল্লেখ করে তাকে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ দিয়ে আরও কয়েকবার কল দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরে রাজনৈতিকভাবে জাবেদ মাসুদ মিলটনের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা জানান ব্যবসায়িক কারণে মিল্টন বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছেন।

অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ দিয়ে মিলু কোমরপুর গ্রামে বিকেএম ব্রিকস নামে একটি ইটভাটা স্থাপন করেছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই অবৈধ ইটভাটাটি তার ছোট ভাই শিলু দীর্ঘদিন ধরে পরিচালনা করছে।

আমাম হোসেন মিলু ১৯৯৭ সালে তার খালু এবং মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মান্নান মাস্টারের হাত ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। ২০০৬ সালে যতাপুর গ্রামের জহির রায়হান ও বাবলু হত্যাকাণ্ডের অন্যতম এজহারভুক্ত আসামি ছিলেন তিনি। হত্যা মামলা দুটিতে গ্রেপ্তার হয়ে তিন মাস কারাবরণের পর জামিনে বের হয়ে আসেন। পরবর্তীতে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে মামলা থেকে নিজের নাম সরিয়ে নেন।

Author

আরও খবর

                   

জনপ্রিয় সংবাদ