আমরা আবার সফর আলীকেই চাই এলাকাবাসীর গর্জে ওঠা আবেদন
ছাত্রনেত্রীর উপর বর্বর হামলার পর তৎপর পুলিশের প্রশংসা, কিন্তু সৎ ওসি সফর আলীকে হঠাৎ প্রত্যাহার এলাকাবাসীর বিস্ময় ও ক্ষোভ, ঘটনার সময় থানায় না থেকেও বহিষ্কার, অন্যের দায় ঘাড়ে চাপিয়ে সরিয়ে দেওয়া হলো জনতার প্রিয় পুলিশ কর্মকর্তা ফিরিয়ে আনার দাবি গণদাবিতে পরিণত
শাহাদাৎ হোসেন ফরিদপুরঃ
ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা উপজেলার ডাঙ্গী ইউনিয়নের ভবুকদিয়া গ্রামে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেত্রী বৈশাখী ইসলাম বর্ষার ওপর হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে নগরকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সফর আলীকে পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
এই সিদ্ধান্তে এলাকায় চরম ক্ষোভ, দুঃখ এবং বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকেই একে "একজন সৎ কর্মকর্তার প্রতি অবিচার" বলে উল্লেখ করছেন।
ঘটনার সূত্রপাতঃ শুক্রবার, ৩০ মে। বিকেল সাড়ে বারোটায় বৈশাখী ইসলাম তার ছোট বোনকে ইভটিজিংয়ের অভিযোগ নিয়ে নগরকান্দা থানায় উপস্থিত হন। অভিযোগ গ্রহণ করেন ডিউটি অফিসার এসআই আমিনুর রহমান মিয়া এবং ইনডোর্স করেন এসআই মোহাম্মদ আমিরুল ইসলাম। অভিযোগ দায়েরের কিছুক্ষণের মধ্যেই বৈশাখী বাড়ি ফেরার পথে স্থানীয় একদল দুর্বৃত্তের হামলার শিকার হন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানানঃ হামলাকারীরা স্থানীয় প্রভাবশালী একটি রাজনৈতিক দলের অনুসারী এবং তারা সশস্ত্র অবস্থায় রাস্তায় অবরোধ করে বৈশাখীকে হামলা করে। খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং ঘটনাস্থল থেকে ৫-৬ জনকে আটক করে।এ সময় প্রায় ২০০ জনের মতো সশস্ত্র দুর্বৃত্ত একত্র হয়েছিল, যাদের মোকাবেলায় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর দ্রুত হস্তক্ষেপে বড় ধরনের সংঘর্ষ এড়ানো সম্ভব হয়েছে।
এলাকাবাসীর দাবিঃ ওসি সফর আলী ঐ সময় থানায় অনুপস্থিত ছিলেন, এবং ঘটনার পরে পুলিশের কার্যক্রম ছিল প্রশংসনীয়। তারা বলছেন, ওসি সফর আলী একজন সৎ, দক্ষ ও সদালাপী অফিসার হিসেবে এলাকায় পরিচিত ছিলেন। তিনি ২০২৪ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর নগরকান্দা থানায় ওসি হিসেবে যোগদান করেন এবং দায়িত্ব পালনে কখনোই অবহেলা করেননি।
নগরকান্দার সাধারণ মানুষ এবং বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ওসি সফর আলীর প্রত্যাহারকে অন্যায় ও অযৌক্তিক উল্লেখ করে বলেন ওসি সফর আলীর প্রত্যাহারকে কেন্দ্র করে নগরকান্দা থানা এলাকায় বিস্ময়, বেদনা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে শিক্ষক, ব্যবসায়ী, মসজিদের ইমাম, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও তরুণ সমাজের নেতৃবৃন্দ সকলেই আজ এক কথায় বলছেন:
“আমরা আর কাউকে নয়, আবার সফর আলীকেই চাই নগরকান্দার ওসি হিসেবে।
তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, ওসি সফর আলী ছিলেন একজন অন্যায়ের বিরুদ্ধে দৃঢ়, মানবিকতায় ভরপুর ও দায়িত্বশীল পুলিশ কর্মকর্তা। এলাকার নানা সংকটে তার ভূমিকা সব সময়ই ছিল দ্রুত, কার্যকর ও পক্ষপাতহীন। বিশেষ করে নারী নির্যাতন, মাদক এবং ইভটিজিংয়ের বিরুদ্ধে তার অবস্থান ছিল প্রশংসনীয়।
এলাকার প্রবীণ শিক্ষক আব্দুল হালিম মোল্লা বলেনঃ
যে অফিসার আমাদের মেয়েদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছেন, তাকেই আজ মিথ্যা ঘটনার দায়ে প্রত্যাহার করা হলো এটা কষ্টের, লজ্জার। আমরা চাই তদন্ত হোক, কিন্তু তাকে অবিলম্বে ফিরিয়ে আনা হোক।
একই সুরে কথা বলেন স্থানীয় নারী নেত্রী: বৈশাখীর ঘটনার পর পুলিশের তড়িৎ পদক্ষেপেই আমরা বড় বিপদ থেকে রক্ষা পেয়েছি। ওসি সাহেব নিজে না থাকলেও তার নেতৃত্বে থানার দল কাজ করেছে। তাকে সরিয়ে দিয়ে আমাদের যেন নিরাপত্তার আশ্বাসটাই টলে গেল।সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও স্থানীয় তরুণদের মধ্যে একটাই বার্তা ঘুরছে এলাকাবাসী ফরিদপুর জেলার পুলিশ সুপারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলছেন, আমরা বিচার চাই, প্রতিকার চাইন কিন্তু তার আগে চাই ন্যায্যতা। নির্দোষ একজন অফিসারকে সরিয়ে দিয়ে আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। প্রশাসনের উচিত তাকে আবার দায়িত্বে ফিরিয়ে আনা। একজন অফিসার অপরের দোষে শাস্তি পেলেন, অথচ প্রকৃত দোষীরা এখনো বহাল তবিয়তে !
তাদের দাবি, দ্রুত তদন্ত করে ওসি সফর আলী পুনরায় দায়িত্বে ফিরিয়ে আনা হোক।