অন্যান্য

চিকিৎসক ও জনবল সংকটে ভুগছে কুড়িগ্রামের রাজারহাট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

  প্রতিনিধি 4 January 2025 , 12:06:23 প্রিন্ট সংস্করণ

 

 

আনোয়ার সাঈদ তিতু

 

চিকিৎসক সংকট ও কর্মকর্তারা ছুটিতে থাকায় ধুঁকছে কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। বন্ধ রয়েছে এক্সরে ও আলট্রাসনোগ্রাফি কার্যক্রম। চিকিৎসক না থাকায় একটি উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রও বন্ধ। অন্য তিনটি চলছে ফার্মাসিস্ট ও স্যাকমো দিয়ে। কার্যত চিকিৎসক, সরঞ্জামের অভাব, ওষুধ সংকটসহ নানা অব্যবস্থাপনায় ভেঙে পড়েছে উপজেলার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। ঠান্ডাজনিত রোগের প্রকোপ বাড়লেও হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা দেখা গেছে অনেকটাই কম।

 

বৃহস্পতিবার রাজারহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, বেলা ২টা পর্যন্ত জরুরি বিভাগে ছয়জন চিকিৎসা নিয়েছেন, যাদের মধ্যে চারজনই শীতের রোগী। অন্যদিকে বহির্বিভাগে দুপুর ১২টা পর্যন্ত নানা সমস্যা নিয়ে ১৪ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। সকাল ৯টার পরও বহির্বিভাগ ও দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসকের কক্ষ বন্ধ দেখা যায়। সাংবাদিক আসার খবরে কিছু সময়ের জন্য খুললেও পরে টিকিট কাউন্টার, ওষুধ বিভাগ, পুরুষ ওয়ার্ডের নার্সেস ডিউটি রুম ও দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসকের কক্ষ বন্ধ পাওয়া যায়।

 

জানা যায়, ৫০ শয্যা উপজেলা হাসপাতালে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, আবাসিক মেডিকেল অফিসার, জুনিয়র কনসালট্যান্ট, সার্জারি, ডেন্টাল, গাইনিসহ ২৪ জন চিকিৎসক থাকার কথা। সেখানে কাগজে কলমে আছেন মাত্র ছয়জন। তাদের মধ্যে দুজন ছুটিতে। চারজনের জনের হাসপাতালে থাকার কথা থাকলেও সরেজমিন তিনজনকে দেখা যায়। তাদের একজন অপারেশন থিয়েটারে, একজন জরুরি বিভাগে এবং একজন ভারপ্রাপ্ত পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োজিত।

 

অন্যদিকে ৩৩ জন নার্স থাকার কথা থাকলেও দু’জন মাতৃত্বকালীন ও পাঁচজন শিক্ষাকালীন ছুটিতে আছেন। সাতজনকে সকালের দায়িত্বে এবং তিনজনকে বিকেলের দায়িত্বে দেখা মিললেও বাকি নার্সদের দেখা যায়নি। নার্সেস ডিউটি রুমে দুপুর আড়াইটার দিকে দেখা যায়, এক সিনিয়র নার্স সাধারণ পোশাকে পরিহিত অবস্থায় হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করছেন।

 

হাসপাতালে আরও কিছু অসংগতি দেখা গেছে। কাগজে কলমে রোগী ২৯ জন বলা হলেও পুরুষ ওয়ার্ডে একজন, মহিলা ও শিশু ওয়ার্ডে দুই রোগীর দেখা মেলে। পাঁচজনকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হলেও বাকিদের দেখা যায়নি। অথচ রোগীর পথ্য হিসেবে নিয়মিত ৫০ শয্যার হাসপাতালটিতে তিন বেলা খাবার বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে।

 

প্রতিদিন একজন চিকিৎসকের সাপ্তাহিক ছুটি থাকে। কখনও বিশেষ প্রয়োজনে কেউ ছুটিতে গেলে আরও টানাপোড়েন শুরু হয়। এসব কারণে হাসপাতালটিতে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা। গুটিকয়েক রোগী যারা আসেন, তারা জরুরি বিভাগের চিকিৎসা নেন।

 

২০০৫ সালে এ হাসপাতালে এক্সরে কার্যক্রম শুরু হয়। অল্প দিনের মধ্যেই ত্রুটি দেখা দেয় যন্ত্রটিতে। এর পর থেকে প্রতি বছরই কখনও

চালু, কখনও বন্ধ থাকে যন্ত্রটি। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে এটি একেবারেই বিকল হয়ে যায়। অপারেটরের অভাবে আলট্রাসনোগ্রাফি মেশিন থাকা সত্ত্বেও চালু করা যাচ্ছে না। তিনটি ইসিজি মেশিন থাকলেও রোগীদের বাইরে থেকে এ পরীক্ষা করতে হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। তা ছাড়াও রয়েছে ওষুধের অপ্রতুলতা।

এদিকে চিকিৎসক না থাকায় দুই বছর ধরে উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের রতিগ্রাম উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। উমর মজিদ ও পাঙ্গা উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসাসেবা চলছে ফার্মাসিস্ট দিয়ে। একজন স্যাকমো (উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার) পরিচালনা করছেন নাজিমখান ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র। এসব সমস্যার কারণে সেবাবঞ্চিত উপজেলাবাসী।

 

বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা সব্বা বেগম বলেন, হাসপাতালে যে ক’জন চিকিৎসক থাকেন, তারা দেরি করে আসেন। কাউন্টার থেকে টিকিট করলেও জরুরি বিভাগের ডাক্তারকে দেখাতে হয়। রবিউল ইসলাম নামে এক যুবক বলেন, এ হাসপাতালে চিকিৎসক সংকট প্রকট। এক চিকিৎসক সব রোগের ব্যবস্থাপত্র দেন। রোগ নির্ণয় যন্ত্রগুলোও বিকল। ফলে সঠিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

 

আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. তাসলিমা আক্তার বলেন, ‘আমি একাই সকাল থেকে রোগী দেখছি। দুপুরে আমার শিফট শেষ হলেও সন্ধ্যা পর্যন্ত আমাকে থাকতে হবে।’

 

স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মিজানুর রহমান ছুটিতে থাকায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. উম্মে কুলসুম বিউটি বলেন, ‘জনবল সংকটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তার পরও সমস্যার সমাধান মিলছে না।’ দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসকের কক্ষ বন্ধ, নার্সেজ ডিউটি রুম ও টিকিট কাউন্টার অফিস বন্ধের আগেই বন্ধের বিষয়ে তিনি বলেন, বেলা আড়াইটা পর্যন্ত অফিস চালু থাকলেও ১টার পর টিকিট দেওয়া হয় না। বাকি কক্ষগুলো বন্ধ থাকার কথা নয়। হয়তো জরুরি প্রয়োজনে বাইরে গেছেন।

Author

আরও খবর

                   

জনপ্রিয় সংবাদ