অন্যান্য

ছয় পদে এক কর্মকর্তা: খুলনায় প্রশাসনিক ভারে ধীরগতি ও জটিলতা

  প্রতিনিধি 5 July 2025 , 5:12:12 প্রিন্ট সংস্করণ

রাসেল আহমেদ, নিজস্ব প্রতিবেদক:

খুলনা বিভাগীয় প্রশাসনের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মো. হুসাইন শওকতের কাঁধে এখন একসঙ্গে ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক দায়িত্ব। অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তিনি বর্তমানে খুলনা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক, খুলনা জেলা পরিষদের প্রশাসক, স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালক, বিভাগীয় অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন মালিক গ্রুপের প্রশাসক এবং জেলা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির প্রশাসকের দায়িত্বও পালন করছেন।

দায়িত্বের এই ভারে খুলনার বিভিন্ন দপ্তরে প্রশাসনিক কার্যক্রমে শৃঙ্খলার ঘাটতি, সেবা প্রদানে ধীরগতি এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিলম্বের অভিযোগ উঠেছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলছেন, অতিরিক্ত দায়িত্বের কারণে ফাইল স্থানান্তর, সময় ব্যবস্থাপনা ও দৈনন্দিন প্রশাসনিক কার্যক্রমে নানামুখী জটিলতা তৈরি হচ্ছে, যার সরাসরি প্রভাব পড়ছে সেবার মান ও কার্যকারিতার ওপর।

২০২৪ সালের ২৮ জুলাই ২৪তম বিসিএস ব্যাচের এই কর্মকর্তা খুলনার অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সেই সঙ্গে তাঁর দক্ষতা ও উদ্ভাবনী নেতৃত্বের কারণে তাঁকে স্থানীয় সরকার পরিচালক পদেও নিয়োগ দেওয়া হয়। এর পর একে একে তাঁকে দেওয়া হয় ওয়াসার এমডি, জেলা পরিষদ প্রশাসক, নৌ পরিবহন মালিক গ্রুপের প্রশাসক এবং রেড ক্রিসেন্টের প্রশাসকের দায়িত্ব। প্রশাসনিক জটিলতা, যোগ্য কর্মকর্তার স্বল্পতা এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা এসব দায়িত্ব কাঁধে ওঠার পেছনে ভূমিকা রেখেছে বলে জানা গেছে।

বাস্তবতা হলো, দপ্তরগুলোর অনেক কাজেই এখন শ্লথ গতি। খুলনা জেলা পরিষদের একাধিক কর্মকর্তা অভিযোগ করেছেন, প্রশাসকের নিয়মিত উপস্থিতি না থাকায় সিদ্ধান্ত গ্রহণে দেরি হচ্ছে এবং দৈনন্দিন কার্যক্রমে স্থবিরতা তৈরি হয়েছে। তাঁরা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে নতুন প্রশাসক নিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন।

একই চিত্র খুলনা ওয়াসাতেও। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মাসে হাতে গোনা কয়েক দিন হুসাইন শওকত দপ্তরে আসেন। যদিও ফাইল আটকে থাকে না, তবু নিয়মিত তদারকির অভাবে কর্মীদের মধ্যে শৃঙ্খলার অভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। পাম্প অপারেটরদের দায়িত্ব পালনে শৈথিল্য এবং ইউনিয়ন নেতাদের মধ্যকার বিশৃঙ্খলা এরই ইঙ্গিত দেয়।

রেড ক্রিসেন্ট এবং নৌ পরিবহন মালিক গ্রুপের দপ্তরগুলোও একই চিত্রের প্রতিফলন। অধিকাংশ প্রশাসনিক কাজই এখন বিভাগীয় কমিশনারের দপ্তর থেকে পরিচালিত হচ্ছে, ফলে নিচুতলার সেবা কার্যক্রম দুর্বল হয়ে পড়ছে।

এ বিষয়ে বিভাগীয় কমিশনার ফিরোজ সরকার বলেন, “আমি দায়িত্ব নেওয়ার আগেই তিনি এসব দায়িত্ব পালন করছিলেন। দক্ষ কর্মকর্তাদের ওপর আমরা আস্থা রাখি। তবে দীর্ঘমেয়াদে দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।”

অন্যদিকে হুসাইন শওকত নিজেও স্বীকার করেছেন, “ছয়টি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব একসঙ্গে পালন করা সত্যিই চ্যালেঞ্জিং। তবে আমি নিশ্চিত করি যেন কোনো ফাইল পড়ে না থাকে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।” তিনি জানান, ওয়াসার নতুন এমডি নিয়োগের প্রক্রিয়া চলমান এবং নৌ পরিবহন মালিক গ্রুপে নির্বাচন হলে নতুন নেতৃত্ব দায়িত্ব নেবে। এ ছাড়া এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও স্থানীয় সরকার সচিবের সঙ্গে আলোচনা করেছেন বলেও উল্লেখ করেন।

প্রশাসনিক দক্ষতা বা আন্তরিকতা নিয়ে কারও আপত্তি না থাকলেও বাস্তবতা হলো, এককভাবে ছয়টি প্রতিষ্ঠানের ভার বহন কার্যকর নয়। সেবা প্রদান, দপ্তরগুলোর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে দায়িত্ব বণ্টনের একটি সুনির্দিষ্ট ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা এখন সময়ের দাবি। খুলনার সাধারণ মানুষ প্রত্যাশা করে—সুশাসন শুধু কাগজে-কলমে নয়, বাস্তব কর্মপরিধিতেও প্রতিফলিত হবে।

আরও খবর

                   

জনপ্রিয় সংবাদ