প্রতিনিধি 25 October 2024 , 7:40:18 প্রিন্ট সংস্করণ
চেতনায় বাংলাদেশ ডেস্কঃ
দেশের ইতিহাসে ছাত্ররাজনীতির অন্যতম প্রাচীন সংগঠন ছাত্রলীগ। দেশের স্বাধিকার আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধের মতো গৌরবগাথা অধ্যায়ের সঙ্গে ছাত্রলীগের নাম অবিচ্ছেদ্য। তবে গত কয়েক দশকে ছাত্রলীগের পরিচিতি সন্ত্রাসী, দখলদার, চাঁদাবাজ আর লুটপাটকারী সংগঠন হিসেবে। টানা ১৬ বছর ক্ষমতায় থাকার কারণে এই সংগঠনের নেতাকর্মীরা একেকজন আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছেন।
শুধু কেন্দ্রীয় নেতারাই নন; জেলা পর্যায়ের নেতাদেরও কোটি কোটি টাকার মালিক হওয়ার বিস্তর অভিযোগ। দেশ-বিদেশেও সম্পদের পাহাড়।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে বাংলাদেশ থেকে লন্ডনে চলে যান ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম। ২০১৯ সালে তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অনুসন্ধান শুরু করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
২০১১ সালে ছাত্রলীগে তিনি যোগ দেন। জানা যায়, তিনি ব্রিটিশ পাসপোর্টধারী। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, দেশের টাকায় লন্ডনে চারটি কম্পানি খুলে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন নাজমুল। এসব প্রতিষ্ঠানে শতকোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন তিনি।
ক্যাসিনো কেলেঙ্কারিতে জড়িতসহ ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের অনেকের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ রয়েছে। নাজমুলের নামে ব্রিটেনের কম্পানি হাউসে আবাসন, গাড়ির অ্যাকসিডেন্ট ক্লেইম ম্যানেজমেন্ট, পণ্যের পাইকারি বিক্রেতা, বিজ্ঞাপন, চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান, সেবা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন ধরনের ছয়টি কম্পানির অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। এর মধ্যে দুটি কম্পানির পরিচালক পদে তাঁর নাম নেই। বাকি চারটি কম্পানির মধ্যে একটির একক পরিচালক এবং আরো তিনটি কম্পানির যৌথ পরিচালক হিসেবে তিনি রয়েছেন।
ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের দুর্নীতির ব্যাপক অভিযোগ তুলেছিল খোদ সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির একটি অংশ।
২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে তাঁদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগও জানানো হয়। তৎকালীন সভাপতি ও সম্পাদকের নানা অপকর্মের বিস্তারিত তুলে ধরে করা ওই অভিযোগে তখন ১০০ কেন্দ্রীয় নেতার সই নেওয়া হয়।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা জানান, আগস্টে জাতীয় শোক দিবসের মাসে কেন্দ্রীয় কমিটি বর্ধিতকরণ, ছাত্রলীগের দুই কাণ্ডারির স্বেচ্ছাচারিতা, কেন্দ্রীয় নেতাদের অবমূল্যায়ন, পদ বাণিজ্য, প্রেস রিলিজের মাধ্যমে যাচাই-বাছাই ছাড়া রাতের আঁধারে কমিটি গঠন অভিযোগে জায়গা পেয়েছে। এ ছাড়াও বিবাহিত, চাঁদাবাজ, মাদকসেবী, ছাত্রদল ও শিবিরকর্মীদের কমিটিতে পদায়ন, সাধারণ সভা না করা এবং সংগঠনের নিয়মভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ারও অভিযোগ ছিল।
২০১৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দরপত্র ঘিরে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগ ছিল ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর বিরুদ্ধে। তখন অবশ্য তাঁদের সংগঠন থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল।
আলোচিত ফরিদপুরের দুই হাজার কোটি : ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নিশান মাহমুদ শামীম দুই হাজার কোটি টাকা পাচার করেছিলেন। ২০২০ সালের ২৬ আগস্ট তিনি আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে এটি স্বীকারও করেন। ওই বছরের ২৬ জুন ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের অব্যাহতিপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন বরকত ও তাঁর ভাই ইমতিয়াজ হাসান রুবেলকে প্রধান আসামি করে অবৈধ উপায়ে দুই হাজার কোটি টাকা আয় ও পাচারের অভিযোগে ঢাকার কাফরুল থানায় মামলাটি করে সিআইডি।
শিবির নেতা থেকে ছাত্রলীগ নেতা বায়জিদ হাতিয়েছেন শত শত কোটি টাকা : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও সাবেক ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগ নেতা বায়জিদ আহম্মেদ খান। শিবির নেতা থেকে ছাত্রলীগ নেতা বনে গিয়ে শত শত কোটি টাকার বাণিজ্য করে বিশাল বিত্তবৈভবের মালিক হয়েছেন। ছাত্রলীগের পদ বাগিয়ে তিনি বেপরোয়া টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি ও ক্যাসিনো ব্যবসা থেকে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। কেন্দ্রীয় যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের অন্যতম সহযোগী হয়ে নানা অবৈধ সম্পদ অর্জন করেন। এলাকায় এখন বায়জিদ খানের পরিচিতি ক্যাসিনো বায়জিদ হিসেবে।
স্থানীয় রাজনীতিতে তাঁর কোনো উপস্থিতি না থাকলেও তিনি গত উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে অংশ নেওয়ার পর তাঁর পরিচিতি বাড়ে। এ সময় নিজ দলের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে অস্ত্র ও কালো টাকার বিনিময়ে নির্বাচিত হন।
ছাত্রলীগের পদ পেয়ে শূন্য থেকে কোটিপতি আতিক : ঢাকা সাভার উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আতিকুর রহমান আতিক। একসময় নুন আনতে পান্তা ফুরোয় অবস্থা ছিল তাঁর পরিবারের। ২০১৬ সালে সাভার ছাত্রলীগের সভাপতির পদ পাওয়ার মধ্য দিয়ে যেন আলাদিনের জাদুর প্রদীপ হাতে পান। কয়েক বছরের মধ্যে বনে যান কোটি কোটি টাকার মালিক।
স্থানীয়দের অভিযোগ, জমি দখল, বাড়ি থেকে উচ্ছেদ, জাল দলিল, অবৈধভাবে একচেটিয়া ঠিকাদারি ব্যবসা, ফুটপাত থেকে শুরু করে শিল্পপতির কাছ থেকে কোটি কোটি টাকার চাঁদাবাজি, ডিশ ব্যবসা, মার্কেট দখলসহ নানা উপায়ে হাতিয়ে নেন কোটি কোটি টাকা। ঘুরতেন অবৈধ অস্ত্র নিয়ে। কেউ চাঁদা দিতে না চাইলে নিজস্ব বাহিনী দিয়ে প্রকাশ্যে রাস্তায় ফেলে মারধর করতেন।
গাজীপুরে অপকর্মে কোটিপতি ডজনখানেক ছাত্রলীগ নেতা : গাজীপুরে হাসিনা সরকারের সময়ে শূন্য থেকে কোটিপতি হয়েছেন এক ডজনের বেশি ছাত্রলীগ নেতা। তাঁদের কেউ কেউ শতকোটি টাকার মালিক। গড়েছেন বাড়ি, ফ্ল্যাট ও গাড়ি। জনপ্রতিনিধিও হয়েছেন কয়েকজন। তাঁদের বিরুদ্ধে রয়েছে উপজেলা ইউনিয়ন ও কলেজ কমিটি বিক্রি, মাদক বাণিজ্য, চাঁদাবাজি, জমি দখল, ঝুট ব্যবসা ও তদবির বাণিজ্যের অভিযোগ।
এরশাদ : মাসুদ রানা এরশাদ গাজীপুর মহানগর ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। ২০১৩ সালে সভাপতি হয়ে শুরু করেন ঝুট ব্যবসা, জমি দখল ও শহরের বিভিন্ন স্ট্যান্ডে চাঁদাবাজি। অল্প দিনেই কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যান। হয়ে যান গাড়ি ও বাড়ির মালিকও।
মশিউর রহমান সরকার বাবু : টঙ্গীর ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডের সরকার বাবু প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল পরিবারের ঘনিষ্ঠ। ২০২২