প্রতিনিধি 25 July 2025 , 1:19:41 প্রিন্ট সংস্করণ
ঢাকা, ২৫ জুলাই ২০২৫: ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে সরাসরি গুলি ও অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) প্রকাশিত ‘হাসিনা-জুলাইয়ের ৩৬ দিন’ শীর্ষক প্রামাণ্যচিত্রে শেখ হাসিনার প্রাণঘাতী হামলা চালানোর গোপন নির্দেশনার ভয়াবহ বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে তিনি সরাসরি হামলা চালানো ও প্রাণ কেড়ে নেওয়ার যে নির্দেশ দিয়েছেন, তা স্পষ্টভাবে প্রকাশ করা হয়েছে।
ফাঁস হওয়া ফোনালাপ ও নির্দেশনার প্রমাণ
আলজাজিরার ইনভেস্টিগেটিভ ইউনিট (আই-ইউনিট) শেখ হাসিনার ফাঁস হওয়া ফোনালাপের অডিও ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের দিয়ে পরীক্ষা করেছে। আই-ইউনিট নিশ্চিত করেছে যে, এই অডিও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে তৈরি করা নয়। ভয়েস-ম্যাচিংয়ের মাধ্যমে ফোনালাপের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদেরও শনাক্ত করা হয়েছে।
গত বছরের ১৮ জুলাই জাতীয় টেলিযোগাযোগ নজরদারি কেন্দ্র (এনটিএমসি) শেখ হাসিনার একটি ফোনালাপ রেকর্ড করে। সেই ফোনালাপে শেখ হাসিনা ঢাকার দক্ষিণের সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসকে বলেন, “আমার নির্দেশ তো আগেই দেওয়া হয়ে গেছে। আমি তো পুরোপুরি ওপেন অর্ডার দিয়ে দিয়েছি। এখন ওরা মারবে, যেখানে পাবে সেখানে গুলি করবে…আমি তো এত দিন থামিয়ে রেখেছিলাম। আমি ছাত্রদের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবছিলাম।”
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ও আত্মীয় শেখ ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে ওই ফোনালাপে বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে হেলিকপ্টার ব্যবহারের কথাও বলেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, “যেখানেই জমায়েত দেখা যাবে, ওপর থেকে, এখন তো ওপর থেকেই হচ্ছে—কয়েক জায়গায় শুরু হয়ে গেছে। কিছু বিক্ষোভকারী সরে গেছে।”
রক্তক্ষয়ী আন্দোলন ও সরকারের দমন-পীড়ন
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টানা ১৫ বছর বাংলাদেশের ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনা শিক্ষার্থীদের ব্যাপক বিক্ষোভ-প্রতিবাদের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে ভারত পালিয়ে যান। আলজাজিরা জানায়, হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার আগে কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা রক্তক্ষয়ী বিক্ষোভ ও সরকারের দমন-পীড়নে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি)-এর তথ্য অনুযায়ী প্রায় ১ হাজার ৪০০ জন নিহত এবং ২০ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়।
আলজাজিরার অনুসন্ধানে আরও উঠে এসেছে, তৎকালীন হাসিনা সরকার ইন্টারনেট বন্ধ রেখে আন্দোলনের ভয়াবহ ছবি বিশ্ব থেকে গোপন রাখার চেষ্টা করে। এছাড়া জুলাই আন্দোলনের তিন সপ্তাহে প্রায় ১৫০০ জন নিহত এবং ২৫ হাজারের বেশি আহত হয়। নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর ৩০ লাখ রাউন্ড গুলি ছোড়া হয়েছিল বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
পরিবারের ওপর চাপ ও মানবাধিকার লঙ্ঘন
আলজাজিরার অনুসন্ধানে দেখা গেছে, হত্যাকাণ্ডের পর আবু সাঈদের পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিল এবং রাষ্ট্রের হুমকি ও প্রভাবের মুখে তাদের শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে বাধ্য করা হয়। কাতারভিত্তিক গণমাধ্যমটি মনে করে, মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ ঢাকতেই এই কৌশল নেওয়া হয়েছিল।