প্রতিনিধি 13 June 2025 , 9:55:03 প্রিন্ট সংস্করণ
জনবল সংকট, অব্যবস্থাপনা আর পরিকাঠামোগত দুর্বলতায় নুইয়ে পড়েছে মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স; ৯৫টি পদ শুন্য, আধুনিক ভবনের অভাব, চিকিৎসা সেবা বঞ্চিত সাড়ে পাঁচ লাখ মানুষ বাধ্য হয়ে দ্বারস্থ হচ্ছে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের, যেখানে গুণতে হচ্ছে কয়েকগুণ বেশি টাকা
নিজস্ব প্রতিবেদক
স্বাস্থ্যসেবা মানুষের মৌলিক অধিকার হলেও যশোরের মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সে অধিকার আজ শুধু কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ। সরকারিভাবে এটি ৫০ শয্যার হাসপাতাল হলেও বাস্তবে নেই প্রয়োজনীয় জনবল, নেই আধুনিক অবকাঠামো, নেই জরুরি চিকিৎসাসেবা। ফলে সাড়ে পাঁচ লাখের বেশি জনগোষ্ঠী বিশিষ্ট এই জনপদের মানুষ প্রতিনিয়ত বঞ্চিত হচ্ছেন স্বাস্থ্যসেবা থেকে। বাধ্য হয়ে তারা ছুটছেন প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর দ্বারে যেখানে খরচ অনেক বেশি, কিন্তু গ্যারান্টি নেই মানসম্মত চিকিৎসার।
পুরনো ভবনে নতুন আশা, কিন্তু বাস্তবতা করুণ
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬৭ সালে। ২০২১ সালে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও এখনো নির্মাণ হয়নি আধুনিক ভবন। পুরনো ভবনটি বার্ষিক সংস্কার না করলে রোগী রাখার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। প্রতিদিন গড়ে ৩০০–৩৫০ জন রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসেন। বছরে এই সংখ্যা প্রায় ৪৮ হাজার ছাড়িয়ে যায়।
৯৫টি পদ শুন্য, ভেঙে পড়েছে ব্যবস্থাপনা
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, চিকিৎসকের মোট ৩৪টি পদের বিপরীতে কর্মরত রয়েছেন মাত্র ২০ জন, যার মধ্যে একজন সংযুক্ত আছেন যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে। কনিষ্ঠ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ১০টি পদের মধ্যে ৫টি শুন্য। সহকারী সার্জন ও মেডিকেল অফিসারের ১০টি, মেডিকেল টেকনোলজিস্টের ২টি, নার্সের ২টি, স্বাস্থ্য সহকারীর ৩৬টি, সিএইচসিপি (কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার)-এর ১৮টি, স্যাকমো (উপ-স্বাস্থ্য কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার)-এর ১০টি ও ওয়ার্ড বয়ের সব পদই শুন্য রয়েছে। সবমিলিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ২৬৬টি পদের মধ্যে ৯৫টি পদই ফাঁকা।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সংকট চরমে
চক্ষু, নাক-কান-গলা (ইএনটি), চর্ম ও যৌন, অর্থপেডিকস, হৃদরোগসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। চিকিৎসক সংকটে রোগীদের দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষায় থাকতে হয়, কখনো কখনো না পেয়েই ফিরে যেতে হয়।গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, বহির্বিভাগে দীর্ঘ লাইন থাকলেও উপস্থিত ছিলেন না অধিকাংশ চিকিৎসক। সেদিন দেখা মেলেনি ডা. মো. খালেকুজ্জামান মুজাহিদ, ডা. জেসমিন সুমাইয়া, ডা. দিলরুবা ফেরদৌস ডায়না, ডা. মো. ইদ্রিস আলী, ডা. সাইফুদ্দীন আহমেদ, ডা. দেবাশীষ বিশ্বাস, ডা. নাহিদ হাসান এবং ডা. রুহুল আমিনের।
রোগীর ভোগান্তি, ডাক্তারদের নেই খোঁজ
মোহনপুর গ্রামের গৃহবধূ মরিয়ম বেগম বলেন, “ভোরে এসেছি, টিকিট কেটেছি। সকাল গড়িয়ে দুপুর হলেও কোনো ডাক্তার আসেনি।”
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ফাইয়াজ আহমদ ফয়সাল বলেন, ঈদের সময় কয়েকজন চিকিৎসক টানা কাজ করেছেন, তাই তাদের বিশ্রাম দেওয়া হয়েছে।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. মাসুদ রানা বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জনগণের আকুতি: চাই দ্রুত ব্যবস্থা জনগণের অভিযোগ এই জনপদে শুধু হাসপাতালের নাম আছে, সেবা নেই। সরকার যেখানে জনস্বাস্থ্য খাতে বাজেট বাড়াচ্ছে, সেখানে এমন জনবল সংকট ও অব্যবস্থাপনা মেনে নেওয়া যায় না। তাঁরা দ্রুত শূন্যপদ পূরণ, চিকিৎসক ও কর্মীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা, এবং আধুনিক ভবন নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন।