খুলনা

জমে উঠেছে মনোহরপুরের কুমারঘাটার নৌকার হাট: বর্ষায় জীবনযাত্রার ভরসা

  প্রতিনিধি 14 August 2025 , 12:21:12 প্রিন্ট সংস্করণ

Oplus_132096

জি এম ফিরোজ উদ্দিন:

বর্ষার আগমনী সুর মনোহরপুরের কুমারঘাটা নৌকার হাটে নিয়ে এসেছে উৎসবের আমেজ। একটানা বৃষ্টি আর খাল-বিল ভরে ওঠা পানিতে মণিরামপুরের এই ঐতিহ্যবাহী নৌকার হাট এখন সরগরম। ক্রেতা-বিক্রেতার আনাগোনায় মুখরিত চারপাশ। কারিগরদের হাতুড়ির ঠক ঠক শব্দে তৈরি হচ্ছে সারি সারি নৌকা, যা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে দিচ্ছে এই অঞ্চলের বর্ষার জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

আষাঢ়ের বৃষ্টি আর শ্রাবণের বারিধারায় নিচু এলাকাগুলোতে পানি জমে যাওয়ায় নৌকার চাহিদা বেড়েছে কয়েকগুণ। বিশেষ করে মাছের ঘের মালিক, কৃষক এবং সাধারণ মানুষ, যাদের বর্ষাকালে যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম নৌকা, তারা ভিড় জমাচ্ছেন কুমারঘাটা বাজারে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এই হাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের পদচারণায় এক প্রাণবন্ত পরিবেশ তৈরি হয়েছে।

বংশ পরম্পরায় দক্ষ কারিগরদের হাতে তৈরি নৌকা

কুমারঘাটা, কপালিয়া, নেহালপুর, কোনাখোলাসহ আশপাশের এলাকার কারিগররা এখন দম ফেলার ফুরসত পাচ্ছেন না। তাঁদের নিপুণ হাতে তৈরি হচ্ছে ডোঙা ও ছোট-বড় নৌকা। মেহগনি, পুইয়ে, লম্বু এবং খই গাছের কাঠ ব্যবহার করে তৈরি হচ্ছে এই নৌকাগুলো। কাঠের তক্তা বিশেষ কৌশলে তৈরি করে শুরু হয় কাজ। এরপর বাটালি দিয়ে চেঁছে, বাঁক গোছা দিয়ে জোড়া লাগিয়ে তৈরি হয় নৌকার কাঠামো। শেষে বৈদ্যুতিক মেশিনে ফিনিশিং দিয়ে এবং কাল রং করে তা বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয়।

কারিগরদের একজন, মাসুদ বিশ্বাস জানান, তিনি বংশ পরম্পরায় এই কাজ করছেন। প্রথম দিকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাজ করলেও গত ১২-১৩ বছর ধরে তিনি কুমারঘাটা বাজারে কাজ করছেন। অন্য একজন কারিগর বলেন, “বাকি সময় মংলায় কাজ করলেও বর্ষার ছয় মাস এখানে ডোঙা তৈরি করি। দিনে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা মজুরি পাই, যা দিয়ে সংসার চলে।”

কুমারঘাটার নৌকা সুনাম ছড়িয়েছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে

এই অঞ্চলের নৌকার কারিগর ও ব্যবসায়ীরা জানান, কুমারঘাটার নৌকার মান ভালো হওয়ায় যশোর, খুলনা, ঝিনাইদহ এবং নড়াইলের মতো দূর-দূরান্ত থেকেও ক্রেতারা নৌকা কিনতে আসেন। কাঠের ব্যবসায়ী ও নৌকা তৈরির মালিক মো. সবুজ হোসেন এবং মো. তৈয়েবুর রহমান জানান, তারা ৯ বছর ধরে এই কাজে জড়িত। জুন থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত নৌকা তৈরি ও বিক্রি চলে। ৮ থেকে ৯ হাত লম্বা একটি নৌকা সাত থেকে দশ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। নৌকা বড় হলে দামও বাড়ে।

কুমারঘাটা বাজারে বর্তমানে ২৫-২৮টি নৌকা তৈরির ঘরে প্রায় ৬০-৭০ জন শ্রমিক কাজ করছেন। স্থানীয় শ্রমিকরা সারা বছর কাজ করলেও বাইরের শ্রমিকরা জ্যৈষ্ঠ থেকে কার্তিক মাস পর্যন্ত কাজ করেন। এখানকার নৌকাগুলো মনিরামপুরের বিভিন্ন এলাকা ছাড়াও সাতক্ষীরা, বেনাপোল, বটিয়াঘাটা, কেশবপুর এবং ডুমুরিয়াতে যায়।

স্থানীয় নৌকা তৈরির মালিক মোস্তাক আহমেদ মোল্লা, মো. মোশাররফ হোসেন এবং ওলিয়ার রহমান জানান, বর্ষার চার মাস তাদের কোনো বিশ্রাম থাকে না। ডোঙা তৈরির এই কাজটি তাদের অর্থনৈতিক স্বাবলম্বীতার পথ খুলে দিয়েছে। তাঁরা আশা করেন, সরকারি ও বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই শিল্প আরও বিকশিত হবে এবং এই অঞ্চলের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখবে।

আরও খবর

                   

জনপ্রিয় সংবাদ