পাঁচ গ্রামের ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে জলাবদ্ধতায় আউষ ধানে পঁচন।
মোঃ শাহজালাল, বরগুনা॥
জলাবদ্ধতার শিকার পাঁচ গ্রামের ২৫ হাজার হেক্টর জমির ফসল রক্ষার দাবীতে প্রভাবশালীদের দখল হয়ে যাওয়া গড়াই নামক একটি খালের বাঁধ অপসারন করে স্লুইস গেট নির্মানের দাবীতে রোপন করা পচা আউষ ধান ক্ষেতের হাটু সমান পানিতে নেমে ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেছে কৃষকরা।
বৃহস্পতিবার দুপুরে খাগদান গ্রামে এ মানবন্ধন কর্মসূচী পালন করা হয়। কৃষক সুলতান হাওলাদারের সভাপতিত্বে মানববন্ধন কর্মসূচীতে বক্তব্য রাখেন খাকদান গ্রামের কৃষক ওয়াজেদ প্যাদা, নূর খালেক ও রায়হান প্রমুখ।
বক্তারা বাঁধ কেটে দুই জলকপাটের স্লুইস গেট নির্মানের দাবী জানান। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও গ্রামবাসী সূত্রে জানা গেছে, আমতলী উপজেলার কুকুয়া ইউনিয়নের কুকুয়া হাটের উত্তর পূর্ব পাসে গড়াই খালের মোহনায় ১৯৬৯ সালে তৎকারীন সরকার একটি বন্যানিয়ন্ত্রন বাঁধ নির্মান করে।
বাঁধের অভ্যন্তরে ধীরে ধীরে কচুরি পানা জমে পানি প্রবাহে সমস্যা দেখা দেয়। এবং সেচ সংকটে কৃষকদের আউষ আমন রবিসহ বিভিন্ন ফসল উৎপাদনে সমস্যা দেখা দেয়।
কৃষকদের দাবীর প্রেক্ষিতে ২০০৫ সালে বিএনপির এমপি মো. মতিয়ার রহমান বাঁধ কেটে একটি আইটলেট ও ইনলেট (পানি সরবরাহের মোটা পাইপ) নির্মান করে।
আইটলেট ও ইনলেট নির্মানের পর পানি প্রবাহ স্বাভাবিক হলেও সরকার পরিবর্তনের পর ২০০৯ সালে স্থানীয় প্রভাবশালী মো. ছালাম হাওলাদারের নেতৃত্বে পানি প্রবাহের ইনলেট ও আইটলেটের মুখে মাটি দিয়ে ভরাট করে বাঁধের ঢালের প্রায় ১ একর সরকারী খাস জমি দখল করে বাড়ি ঘর নির্মান করেন।
জমি দখলের ফলে পানি প্রবাহের আইটলেট ও ইনলেটটি স্থায়ী ভাবে বন্ধ হয়ে যায়। পানি প্রবাহ না থাকায় গড়াই খালের দুই পারে দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা।
খালটি কুকুয়া হাট থেকে শুরু করে কেওয়াবুনিয়া গ্রাম পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার এলাকা জুরে বিস্তৃত। খালের দুই পারে রয়েছে কুকুয়া, রায়বালা, খাকদান, আঠারগাছিয়া ও গোডাঙ্গা গ্রাম। এই পাঁচ গ্রামে প্রায় ২৫ হাজার মানুষ বসবাস করে। তাদের রয়েছে আড়াই হাজার হেক্টর কৃষি জমি।
বর্ষা মৌসুম শুরু হলেই কৃষকের মুখে ভেসে উঠে হতাসার ছাপ। পানি প্রবাহ না থাকায় বৃষ্টি হলেই শুরু হয় জলাবদ্ধতা। চলতি বর্ষা মৌসুমের জুন মাসের শুরু থেকে মাঝামাঝি সময়ে ভারি বর্ষনে পাঁচ গ্রামে দেখা দেয় জলাবদ্ধতা।
পানি জমে কৃষকের লাগানো আউষ ধান আড়াই থেকে তিন ফুট পানিতে তলিয়ে যায়। এমনকি মাঠ ঘাট তলিয়ে পানি ছড়িয়ে পরে ঘরবাড়িতেও।
পানি সরতে না পাড়ায় দীর্ঘদিন ধরে জলাবদ্ধ থাকায় কৃষকের বহু কষ্টে লাগানো আউষ ধানে পঁচন ধরেছে। মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে গড়াই খালের মুখ বন্ধ থাকায় কুকুয়া ইউনিয়নের খাকদান, রায়বালা, কেওয়াবুনিয়া, কুকুয়া, গোডাঙ্গা ও আঠারগাছিয়া গ্রামের হাজার হাজার হেক্টর আউষের খেত ঘর বাড়ি পানিতে তরিয়ে রয়েছে।
১০-১৫ দিন ধরে পানি জমে থাকায় অধিকাংশ আইষ ধানে পচন ধরেছে। বহু কষ্টে লাগানো নিজের ফসল এভাবে চোখের সামনে পঁচে যেতে দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছেন অনেক কৃষক। আবেগ আপ্লুত হয়ে খাকদান গ্রামের কৃষক নূর খালেক মৃধা বলেন, ২ বিঘা জমিতে আউষ ধান লাগিয়েছে পানিতে পচে আমার সর্বনাস হয়েছে। টাকা পয়সা সব খরচ করে ধান লাগিয়েছি।
ফসল না পাইলে পোলা মাইয়া লইয়া খামু কি হেই চিন্তায় আছি। কুকুয়া গ্রামের বারেক হাওলাদার, বাবুল প্যাদা, গোডাঙ্গা গ্রামের আলাউদ্দিন খা, রায়বালা গ্রামের হান্নান মৃধা ও কেওয়াবুনিয়া গ্রামের কেরামত হওলাদার বলেন, পানিতে মোগো সব আউষ ধান পচাইয়া হালাইছে।
খাকদান গ্রামের বারেক হাওলাদার বলেন, মোগো ঘরবাড়ির পানিতে তলাই গ্যাছে। গুরাগারা পোলা মাইয়া লইয়া থাহা খাওয়া ঘুমাইন্যা মোগো ব্যামালা কষ্ট অইতে আছে। পানিতে পোক হাপের ভয়ে মোগো এহন বাড়িতে থাকতে ভয় হরে। কৃষক সুলতান হাওলাদার অভিযোগ করে বলেন, স্থানীয় প্রভাবশালী ছালাম হাওলাদার প্রভাব খাটিয়ে স্লুইস গেটের আউটলেট ও ইনলেটের মুখ বন্ধ করে খাস জমি দখল করায় আজ আমাদের এই অবস্থা হয়েছে। আমরা তার উচ্ছেদ দাবী করছি। এছাড়া এই বাঁধ অপসারন করে এই জায়গায় দুই কপাটের একটি স্লুইস গেট নির্মানের দাবী জানাই।
অভিযুক্ত ছালাম হাওলাদার বলেন, আমি গড়াই খালের বাঁধের সরকারী কোন খাস জমি দখল করি নাই। আমার রেকর্ডিয় জমিতে ঘরবাড়ি বানিয়েিেছ। খালের আইটলেট ও ইনলেটের মুখ বন্ধ করার বিষয়টি কে বা কারা করেছে তা আমার জানা নেই। আমতলী উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. আজিজুর রহমান বলেন, সরেজমিন তদন্ত করে দখলের সত্যতা পেলে উচ্ছেদে করে আউটলেট এবং ইনলেটের মুখ খুলে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রোকনুজ্জামান খান বলেন, পানি সরবরাহের আইটলেট কিংবা সরকারী খাস জমি দখলের কোন সুযোগ নেই। তদন্ত কওে দখলদারকে উচ্ছেদসহ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।