প্রতিনিধি 20 May 2025 , 9:03:00 প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকা | সোমবার, ২০ মে ২০২৫
জলাবদ্ধতা নিরসনের নামে রাজধানীতে গত এক যুগে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হলেও বাস্তব চিত্রে উন্নতির ছিটেফোঁটাও নেই। বর্ষা আসলেই হাঁটুপানিতে ডুবে যায় নগরবাসীর জীবন। সাধারণ মানুষের ভোগান্তি দিনদিন বাড়লেও খাল খনন, ড্রেন সংস্কার ও জলাশয় উন্নয়নের নামে সরকার পরিচালিত প্রতিষ্ঠানগুলো বছরের পর বছর ধরে এই খাতে ব্যয় করে গেছে শত শত কোটি টাকা।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে উন্নয়ন প্রকল্পের নামে জলাবদ্ধতা সমস্যার স্থায়ী সমাধানের বদলে চলে দুর্নীতি, লুটপাট আর ব্যর্থতা। বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য অনুযায়ী, প্রকল্পের যথাযথ বাস্তবায়ন না হওয়ায় রাজধানীর পরিস্থিতি বরং আরও অবনতি হয়েছে।
গত শুক্রবার সন্ধ্যায় মাত্র ৩০ মিনিটে ৩৪ মিলিমিটার বৃষ্টিতে মিরপুর, কাজীপাড়া, মহাখালী, পুরান ঢাকা, উত্তরা, রামপুরা, হাজারীবাগ, ধানমন্ডি, সূত্রাপুরসহ বহু এলাকায় সৃষ্টি হয় ভয়াবহ জলাবদ্ধতা।
মিরপুর-১০-এর বাসিন্দা বিউটি আক্তার বলেন, ‘স্থলপথে অফিসে গেলেও মেট্রোরেল থেকে নেমে পানিপথে যুদ্ধ করে বাসায় ফিরেছি।’
দারুস সালামের বাসিন্দা রকিব উদ্দিন জানান, ‘অল্প বৃষ্টিতেই পুরো এলাকা পানিতে থইথই করে। হাঁটুপানি ভেঙে বাড়ি ফিরতে হয়।’
ঢাকা ওয়াসা ও দুই সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, গত এক যুগে জলাবদ্ধতা নিরসনে ব্যয় হয়েছে অন্তত ৩ হাজার কোটি টাকা। শুধু গত চার বছরেই দুই সিটি করপোরেশন খরচ করেছে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা।
তবুও, সর্বোচ্চ ৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টির পরই অনেক এলাকায় দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। ২০১৭ সালে মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ‘আগামী বছর জলাবদ্ধতা থাকবে না।’ কিন্তু ২০২৪ সালেও সেই প্রতিশ্রুতি অধরাই রয়ে গেছে।
জুলাই বিপ্লবের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে খাল খনন ও পুনরুদ্ধারে সক্রিয় হয়েছে।
প্রথম ধাপে বাউনিয়া, রূপনগর, বেগুনবাড়ি, মান্ডা, কালুনগর ও কড়াইল লেকসহ ২১ কিলোমিটার জলাশয় সংস্কারের কার্যক্রম চলমান।
পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানান, ‘খালগুলোতে পানিপ্রবাহ ফেরাতে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করা হচ্ছে। স্থানীয়দের নিয়ে কমিটি গঠন করে দখল ও দূষণ রোধের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’
যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, ‘১৯টি খাল উদ্ধার করে ব্লু নেটওয়ার্ক তৈরির কাজ চলছে, যাতে জলাধারগুলো পার্কের মতো সবার নাগালের মধ্যে থাকে।’
রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের (আরডিআরসি) এক গবেষণায় বলা হয়েছে, মাত্র ১৫টি খাল খনন করলেই ৮০% জলাবদ্ধতা নিরসন সম্ভব।
তবে এসব খাল বছরের পর বছর ধরে দখল ও দূষণের শিকার। স্বাধীনতার পর ঢাকায় ৫৭টি খাল থাকলেও বর্তমানে কার্যকর রয়েছে মাত্র ২৬টি।
বিশেষজ্ঞদের মতে—
জরুরি ভিত্তিতে ১৫টি গুরুত্বপূর্ণ খাল খনন ও দখলমুক্ত করতে হবে
স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করে খাল ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আনতে হবে
প্রকল্পের নামে অর্থ লোপাটের বিচার নিশ্চিত করতে হবে
দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার পাশাপাশি দ্রুত বাস্তবায়ন জরুরি
গত ১৬ বছরে জলাবদ্ধতা নিরসনের নামে লুটপাট হয়েছে হাজার কোটি টাকা। নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের সৎ ও দায়িত্বশীল পদক্ষেপে রাজধানীবাসী আশার আলো দেখতে পাচ্ছে। তবে এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান করতে হলে অতীতের ব্যর্থতা ও দুর্নীতির বিচার যেমন জরুরি, তেমনি সুপরিকল্পিতভাবে বাস্তবায়নও দরকার।