অন্যান্য

জাহাঙ্গীরনগরে ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে শিক্ষার্থীরা কী বলছেন

  প্রতিনিধি 7 September 2025 , 6:24:55 প্রিন্ট সংস্করণ

Sajjad Hossain 

ভর্তির প্রথম দিনেই ক্যাম্পাসের দেয়ালজুড়ে নানা রকম লেখা চোখে পড়ছিল। এমনই একটি দেয়াললিপি—‘জাকসু চাই।’ হাজারো শিক্ষার্থীর সেই চাওয়া এখন আর শুধুই ‘দেয়াললিখন’ হয়ে থাকছে না। দীর্ঘ ৩৩ বছর পর আমাদের ক্যাম্পাসে হতে যাচ্ছে কাঙ্ক্ষিত জাকসু নির্বাচন।

পুরো ক্যাম্পাসে এক উৎসবমুখর পরিবেশ। এবারের নির্বাচনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বাইরে অরাজনৈতিক শিক্ষার্থীরাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করছেন, যা এই নির্বাচনকে আরও বৈচিত্র্যময় করে তুলেছে। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে আমার প্রত্যাশা, তাঁরা যেন সত্যিই শিক্ষার্থীদের স্বার্থে কাজ করেন। যথাযথ মেডিকেল সেবা নিশ্চিত করা, পরিবহনসংকট সমাধান, ক্লাসরুম–সংকট, ক্যাম্পাসের ইকোলজি সংরক্ষণসহ বাস্তব সমস্যাগুলো নিয়ে কাজ করা দরকার।

আমরা যেন সঠিক নেতৃত্বকে বেছে নিই। কেবল দর্শক হয়ে নয়, সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে জাহাঙ্গীরনগর ও জাকসুকে বাঁচিয়ে রাখি।

দীর্ঘ প্রতীক্ষা যেন সফলভাবে, নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন হয়, সেদিকে প্রশাসন এবং নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। পাশাপাশি প্রার্থীরাও একে অপরের প্রতি সহনশীলতা দেখাবে, সেটাই কাম্য। কারণ, দিন শেষে আমরা একে অপরের আপনজন।

সাথী রায়, বাংলা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

দীর্ঘদিন পর জাকসু নির্বাচন হচ্ছে, এ অনুভূতি অন্য রকম। আগে কখনো এই নির্বাচন দেখা হয়নি বা ভোটও দেওয়ার সুযোগ হয়নি। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে বিভিন্ন প্রচার-প্রচারণা চলছে, ভালোই লাগছে।

যাঁরা নির্বাচনে জয়ী হবেন, তাঁদের কাছে আমার প্রত্যাশা থাকবে, তাঁরা যেন তাঁদের আদর্শ ও প্রতিশ্রুতি থেকে সরে না যান। আমাদের ক্যাম্পাসে, হলে বিভিন্ন সমস্যা আছে। সবার আগে সেগুলো সমাধান করাই হবে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের প্রধান কাজ। বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলার মতো একটি ব্যস্ততম জায়গায় এখনো কোনো ওয়াশরুমের ব্যবস্থা নেই। আমি চাই, সংসদ যেন বটতলাতে ওয়াশরুমের ব্যবস্থা করে। ক্যাম্পাসে সব ধর্মাবলম্বী মানুষেরা কোনো বাধা ছাড়াই যেন তাঁদের ধর্মীয় উৎসব পালন করতে পারেন। আমাদের হিন্দুধর্মাবলম্বীদের জন্য একটা মন্দির বরাদ্দ আছে, কিন্তু সেখানে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার অভাবে অনেকবার চুরি হয়েছে। আমি চাইব, সেখানে যেন আর চুরি না হয়। যারা এমন কাজ করে, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। এ ছাড়া মেয়েদের হলে স্যানিটারি ব্যবস্থা বাড়ানো, পুরোনো হলগুলোতে জেনারেটর সিস্টেম চালু, প্রতিটি হলে ডাইনিং চালুর বিষয়ে ইতিবাচক ভূমিকা চাই। যাঁরা নির্বাচিত হবেন, তাঁরা সবকিছুর ঊর্ধ্বে উঠে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে কাজ করবেন, সেটাই কামনা। নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেবে, এই প্রত্যাশা থাকল।

তানজীর হোসাইন, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

এটা খুবই ইতিবাচক দিক যে জাকসুর মাধ্যমে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমে ছাত্র প্রতিনিধিরা অংশ নিতে পারবেন। শিক্ষার্থীদের কল্যাণে অনেক কার্যক্রম দেখতে পাব।

জাকসু নিয়ে যে উৎসাহপূর্ণ অবস্থা থাকার কথা ছিল, এখন পর্যন্ত সেটি চোখে পড়ছে না। সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য প্রশাসন থেকে যে প্রচারণার কার্যক্রম থাকা উচিত ছিল, সেখানে অনেক ঘাটতি আছে। বিশেষ করে আমাদের নারী সহপাঠীদের মধ্যে জাকসু নিয়ে এখনো তেমন আগ্রহ দেখি না। আশা করি, এই নির্বাচন হবে সম্পূর্ণ স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ, যেন সব শিক্ষার্থী স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারে।

নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে চাই, তাঁরা সব শিক্ষার্থীর সমস্যা মনোযোগ দিয়ে শুনুক এবং সমাধানের চেষ্টা করুক। চাই না তাঁরা ব্যক্তিগত বা কোনো বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থে কাজ করুক। কিংবা তথাকথিত রাজনীতি বলতে আমরা যা দেখে এসেছি, তেমন কর্মকাণ্ডে আবার জড়িয়ে যাক। আমার মতে, নির্বাচিত প্রতিনিধিদের প্রথম কাজ হওয়া উচিত ক্যাম্পাসে শিক্ষার সুযোগ-সুবিধা, যেমন লাইব্রেরি, ল্যাব ও পরিবেশগত সুবিধাগুলোর উন্নয়ন। এটি পড়াশোনার মান ও দৈনন্দিন জীবনকে আরও ভালো করবে।

পারভেজ মোশাররফ, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

জাকসু হতে যাচ্ছে, এটা নিখাদ আনন্দের তো বটেই। ক্যাম্পাসে বর্তমানে নির্বাচনী পরিবেশ খানিকটা থমথমে, আবার কিছুটা উৎসবমুখর। গত ১৫ বছরে দেখা আমাদের স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের নির্বাচনের অভিজ্ঞতা খুব তিক্ত। তবে জুলাই অভ্যুত্থানের পর আমরা সবাই হতাশার অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আশাবাদী হয়েছি একটি মঙ্গলময় রাষ্ট্র নির্মাণের স্বপ্ন নিয়ে। সে ক্ষেত্রে আশা করি এবং চাই, একটি ইনসাফভিত্তিক সুষ্ঠু, সুন্দর, ন্যায়সংগত নির্বাচন। আমরা যাঁদের নির্বাচিত করব, তাঁদের প্রতি কিছু দাবিদাওয়া থাকবে। যেমন সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো একাডেমিক বিষয়াদির উন্নয়ন। গৎবাঁধা মুখস্থ থিওরির পরিবর্তে গবেষণা ও বিভিন্ন বাস্তব প্রায়োগিক জ্ঞানের চর্চা দেখতে চাই। দলীয় পক্ষপাত, শিক্ষার্থীদের মৌলিক অধিকারের পরিবর্তে কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর স্বার্থে রাজনীতির ব্যবহার—এসব কখনো আমাদের কাম্য নয়।

দলীয়করণের রাজনীতি নয়; বরং জাকসুর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের দাবি ও আকাঙ্ক্ষা পূরণ, একাডেমিক ক্ষেত্রে মানোন্নয়ন, এসবের প্রতিফলন দেখতে চাই। মোটাদাগে সবার আগে দুটি কাজে হাত দেওয়া জরুরি—প্রথমত, বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক উন্নয়ন এবং দ্বিতীয়ত, জাহাঙ্গীরনগরের প্রাণপ্রকৃতি বাঁচিয়ে রাখা। এ ক্ষেত্রে জাহাঙ্গীরনগরের মাস্টারপ্ল্যানটা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে ক্যাম্পাসে লেক ভরাট, অযাচিত গাছ কাটা, যত্রতত্র ভবন নির্মাণের যে হুল্লোড় চলে, তা বন্ধ হবে বলে আশা রাখি।

আরও খবর

                   

জনপ্রিয় সংবাদ