সারাদেশ

জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত: কিশোরগঞ্জে নলকূপ থেকে পানি না আসায় দুর্ভোগ

  প্রতিনিধি 11 April 2025 , 9:47:51 প্রিন্ট সংস্করণ

নিজাম উদ্দীন:

কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার যশোদল ইউনিয়নের কোনামাটি গ্রামে যে কয়টি হস্তচালিত নলকূপ ছিল, সবগুলোই বিকল হয়ে গেছে। একটি দিয়েও এখন আর পানি উঠে না বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। গত কয়েক বছর চৈত্রমাস পর্যন্ত পানি পাওয়া গেলেও এ বছর ফাল্গুন মাসের শুরু থেকেই নলকূপে পানি উঠছে না। এমন অবস্থায় গ্রামের লোকজন যাদের সাবমারসিবল পাম্প রয়েছে সেখানে ঘটিবাটি-কলস নিয়ে ভিড় করছেন। পুরো রমজান মাসে একটু খাবার পানির জন্য চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে তাদের।

কোনামাটি গ্রামের বাসিন্দা ইসমাইল মিয়া বলেন, ‘‘চার থেকে পাঁচ মাস আগে বাড়িতে নলকূপ বসিয়েছি। মাত্র এক-দেড় মাস পানি পেয়েছি। কিন্তু, ফাল্গুন মাস থেকে নলকূপ দিয়ে আর পানি উঠছে না।’’

একই অবস্থা গ্রামের আব্দুল আউয়াল, রেখা আক্তার ও ফাতেমা আক্তারের। বৃদ্ধা ফাতেমা আক্তার জানান, ধারদেনা করে নলকূপ বসিয়েছেন। পানি না উঠায় নলকূপের মাথা খুলে রেখেছেন তিনি। এখন একটু খাবার পানির জন্য দূর-দূরান্তে যেতে হয়। জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর জানিয়েছে, কিশোরগঞ্জে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় নলকূপগুলো দিয়ে আর পানি উঠছে না। ফলে কিশোরগঞ্জ সদর ও করিমগঞ্জ উপজেলায় পানির তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। শুধু দুই উপজেলা নয়, জেলার সব উপজেলাতেই কমবেশি পানির সঙ্কট দেখা দিয়েছে।

সরেজমিনে কিশোরগঞ্জ সদর ও করিমগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে পানির হাহাকার দেখা গেছে। সামর্থ্যবানরা সাবমারসিবল পাম্প বসিয়ে দুর্ভোগ কিছুটা লাঘব করলেও বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। শুধু উজানে নয়, হাওরাঞ্চলের লোকজনও ভুগছেন খাবার পানির সঙ্কটে।

করিমগঞ্জ উপজেলার জয়কা গ্রামের বাসিন্দা আলাউদ্দিন বলেন, ‘‘ইউনিয়নের সব অগভীর নলকূপ বিকল অবস্থায় রয়েছে। এতে খাবার পানির সংকটের পাশাপাশি সেচ কার্যক্রমও ব্যহত হচ্ছে।’’

জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল কার্যালয় জানিয়েছে, পানির স্তর ২৬ ফুটের নিচে নামলে হস্তচালিত নলকূপ থেকে পানি উঠে না। আর ৩০ ফুটের নিচে নেমে গেলে মোটর দিয়েও পানি তোলা যায় না। কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলায় পানির স্তর ৩০ থেকে ৩৫ ফুটের মধ্যে। বর্তমানে এই স্তর অনেক স্থানে ৩৭ থেকে ৪০ ফুটে নেমে গেছে। বৃষ্টি না হলে পানির স্তর আরো নিচে নামবে। তাতে নলকূপে পানি না উঠার আশঙ্কাই বেশি

কিশোরগঞ্জ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘‘জেলায় গভীর-অগভীর মিলিয়ে অন্তত ৬০ থেকে ৭০ হাজার নলকূপ রয়েছে। বর্তমানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নলকূপে পানি উঠছে না বলে আমাদের কাছে খবর রয়েছে। কিন্তু, এর নির্দিষ্ট সংখ্যা আমাদের কাছে নেই।’’তিনি আরো বলেন, ‘‘কিশোরগঞ্জ সদর ও করিমগঞ্জ উপজেলায় সুপেয় পানির সঙ্কট বেশি। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া, কৃষিকাজে মাটির নিচের পানি বেশি ব্যবহার, জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা কারণে এই সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এর সাময়িক সমাধান হচ্ছে সাবমারসিবল পাম্প। আমরা সাময়িক সমাধান নিয়ে কাজ করছি। স্থায়ী সমাধানের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’’

Author

আরও খবর

                   

জনপ্রিয় সংবাদ