সাকিব হোসেন পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধিঃ
পটুয়াখালীতে জুলাই-আগষ্ট আন্দোলনে নিহত এক শহীদের কলেজ পড়ুয়া মেয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষনের শিকার হয়েছে। এঘটনায় সাকিব মুন্সি (১৯) নামে এক যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতার হওয়া যুবক পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়ন বিএনপির প্রয়াত সভাপতি মামুন মুন্সির ছেলে বলে জানা গেছে।
আজ বুধবার দুপুরে ভিকটিম দুমকী থানায় হাঝির হয়ে নিজে এমন অভিযোগ করেছেন। ভিকটিম দুমকী সরকারি জনতা কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী বলে জানা গেছে। এঘটনায় মামলা হয়েছে। এদিকে থানা-পুলিশের বিরুদ্ধে দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগ উঠেছে। ভিকটিম দুপুরে থানায় গিয়ে অভিযোগ দিলেও দীর্ঘ নাটকীয়তার পরে মামলা নেয়া হয় রাতে। ততক্ষণ ভিকটিমকে হাসপাতালে না নিয়ে থানায় বসিয়ে রাখা হয়।
ধর্ষনের শিকার ভিকটিম গত জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে নিহত জসীম উদ্দিনের মেয়ে বলে জানা গেছে। তাঁর বাড়ী পটুয়াখালীর দুমকী উপজেলার পাঙ্গাশিয়া গ্রামে। দুমকী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. ইজাজুল হক জসীম উদ্দিনের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন,‘সুত্রমতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গত ১৯ জুলাই ঢাকার মোহাম্মদপুরে গুলিবিদ্ধ হন সিএনজি চালক জসীম উদ্দিন। এরপর তিনি ১০ দিন ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ঘটনা শোনার পর মেয়েটি এলাকায় গিয়ে খোঁজ-খবর নিয়েছি এবং তাঁর পরিবারকে সার্বিক সহযোগীতা দিতে আশ্বস্ত করেছি’।
এদিকে ঘটনার বরাত দিয়ে ভিকটিমের মা মোসা.রুমা বেগম বলেন,গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দুমকী উপজেলার পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে তাঁর স্বামী শহীদ জসীম উদ্দিনের কবর জিয়ারত করে পার্শবর্তী নানা বাড়ীতে ফিরছিল। নানা বাড়ীতে ফেরার পথে একই ইউনিয়নের আলগী গ্রামের মুন্সিবাড়ির কাছে পৌঁছলে স্থানীয় মৃত মামুন মুন্সীর ছেলে সাকিব মুন্সী(১৯) ও সোহাগ মুন্সীর ছেলে সিফাত মুন্সী(২০)তাঁর মেয়ের হাত পা চেপে ধরে সড়কের পাশের একটি নির্জন বাগানে নিয়ে যায়। এরপর তাঁর মেয়েকে ধর্ষন করে তাঁরা। এসময় ওই দুই যুবক ধর্ষনের ভিডিও তাদের মোবাইলে ধারণ করে মুখ বন্ধ রাখতে ভয়-ভীতি দেখিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়। ঘটনার পর বাড়ীতে ফিরে তাঁর মেয়ে এক কলেজ সহপাঠিকে জানান। পরে ওই কলেজ সহপাঠি বিষয়টি তাঁকে মুঠো ফোনে অবহিত করেন। ঘটনা শোনার পর তিনি পরিবহন যোগে ঢাকা থেকে পটুয়াখালীর উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন বলে জানা গেছে।
পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উপস্থিত ণাগরিক কমিটির পটুয়াখালী জেলা শাখার সদস্য মো.আফজাল হোসেন বলেন, মেয়েটির মা ঢাকা থেকে পটুয়াখালীর উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে। বর্তমানে মেয়েটির কাছে কোন আত্মীয়-স্বজন না থাকায়তিনি দেখভালের জন্য হাসপাতালে অবস্থান করছেন।
মো.আফজাল হোসেন ঘটনার বরাত দিয়ে বলেন,‘আজ বুধবার দুপুর ১২টায় ভিকটিম নিজে দুমকী থানায় উপস্থিত হয়ে পুলিশকে এ বিষয়ে অভিযোগ করেন। পুলিশ সন্ধ্যায় পরীক্ষার জন্য পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান।
দুমকী উপজেলার কয়েকজন গণমাধ্যম কর্মীরা বলেন, ভিকিটিম দুপুরে থানায় উপস্থিত হওয়ার পর তাঁকে থানায় বসিয়ে রাখা হয়। এরপর তাঁরা পটুয়াখালী পুলিশ সুপারকে মুঠোফোনে জানালে পুলিশ সুপার ওসিকে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বললে ওসি সন্ধ্যার পরে ভিকিটিমকে মেডিকেল পরীক্ষা করানোর ব্যবস্থা নেন। এরআগে প্রায় ৬ ঘন্টা থানায় বসিয়ে রাখেন।
এ প্রসঙ্গে দুমকী থানার অফিসার ইনচার্জ জাকির হোসেন বলেন,‘ভিকটিম দুপুরে থানায় আসলেও সে কোন তথ্য দিতে পারেনি। তাই তাকে নিয়ে ঘটনাস্থল পরির্দশনে যাই। এরপর মামলা রজু করে একজনকে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরন করি। এসব আইনী প্রক্রিয়া শেষ করে ভিকটিমকে মেডিকেল পরীক্ষা করাতে একটু বিলম্ব হয়েছে’।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সাজেদুল ইসলাম বলেন,‘ ভিকটিমকে উদ্ধার করে পরীক্ষার জন্য পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তিনি এখন পুলিশ হেফাজতে আছেন। এঘটনায় মামলা হয়েছে এবং একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।