মোঃ আশরাফুল ইসলাম বিশেষ প্রতিনিধি, ঠাকুরগাঁও
ঠাকুরগাঁওয়ের বুক চিরে বয়ে যাওয়া এক সময়ের খরস্রোতা টাঙ্গন নদীর চিত্র এখন পুরোপুরি বদলে গেছে। বর্ষার মৌসুমে দু’কূল ছাপিয়ে বন্যা বয়ে আনা নদীটির অনেক জায়গা এখন চরভূমিতে রূপ নিয়েছে। আর সেই পতিত চরভূমিতে এখন চোখ জুড়ানো সোনালী বোরো ধান। প্রান্তিক কৃষকদের পরিশ্রম আর কৃষি বিভাগের পরামর্শে এই জমিগুলোই হয়ে উঠেছে স্বর্ণক্ষেত্র — প্রতি বিঘায় দ্বিগুণ লাভে কৃষকের মুখে এখন প্রশান্তির হাসি।
ঢোলারহাট, খড়িবাড়ি, চাপাতি—এসব এলাকার কৃষক আনসার আলী, খলিলুর রহমান, আব্দুর রহিম জানান, এক সময় অনাবাদী পড়ে থাকা এই জমিতে এখন তারা ধান চাষ করে প্রতি বিঘায় ২৫-৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করছেন। খরচ হচ্ছে ৮-১০ হাজার টাকা—লাভ প্রায় দ্বিগুণ।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে টাঙ্গন নদীর বুকজুড়ে প্রায় ৩০-৩৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছে। স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তা জগদীশ শর্মা বলেন, “চরের পলিমাটি ধান চাষের জন্য খুবই উপযোগী, ফলে ফলন ভালো হচ্ছে। কৃষি বিভাগ কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ ও সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে।”
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ নাসিরুল আলম বলেন, “টাঙ্গন নদীর বুকে সোনালী ধানের হাসি কৃষকদের জীবনে নিয়ে এসেছে নতুন সম্ভাবনা ও স্বপ্ন। পতিত জমিকে কাজে লাগিয়ে যে সফলতা এসেছে, তা আগামীতে আরও প্রসারিত হবে।”
তবে এই সাফল্যের মাঝেও রয়েছে পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ জাকারিয়া বলেন, “নদীর বুকে ধান চাষে ব্যবহৃত কীটনাশকের প্রভাবে দেশীয় মাছ ও জলজ উদ্ভিদ মারাত্মক ক্ষতির মুখে। সেই সঙ্গে নদীর পাড় কেটে জমি তৈরি করায় নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে, কমছে নাব্যতা।”
একদিকে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির গল্প, অন্যদিকে প্রকৃতির ক্ষয়—এই দুই মেরুর মাঝে দাঁড়িয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের টাঙ্গন নদী যেন এক নতুন বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি।