তোফাজ্জল ইসলাম, - সুনামগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার বিশ্বখ্যাত জলাভূমি ও রামসার ঘোষিত এলাকা টাঙ্গুয়ার হাওর ফের একবার বিতর্কের মুখে। নয়নাভিরাম এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে দাঁড়িয়ে একটি মডেলকে বিদেশি ব্র্যান্ডের মদের বোতল হাতে ধারণ করা বিজ্ঞাপনচিত্র সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওটি ‘Sundori Rumi’ নামে একটি ফেসবুক আইডি থেকে ছড়িয়ে পড়ে।
ভিডিওতে দেখা যায়, একজন তরুণী হাওরের বুকজুড়ে নৌকার ছাদে দাঁড়িয়ে পাশ্চাত্য স্টাইলের পোশাকে মদের বোতল হাতে নানান ভঙ্গিমায় পোজ দিচ্ছেন। সেই দৃশ্য ধারণ করা হয়েছে সংগীত ও সিনেম্যাটিক ধারায়, যা নিছক একটি পর্যটন ভিডিও না হয়ে, বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপনচিত্র বলেই সন্দেহ করছেন স্থানীয়রা।
ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পরপরই স্থানীয় জনসাধারণ, পরিবেশবাদী সংগঠন ও হাওর রক্ষা আন্দোলনের কর্মীরা তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান। টাঙ্গুয়ার হাওরের মতো আন্তর্জাতিক পর্যটন কেন্দ্রকে এইভাবে অশালীন উপস্থাপন করায় অনেকেই ক্ষুব্ধ।
হাওরপাড়ের শিক্ষক মোঃ সিরাজুল ইসলাম বলেন, টাঙ্গুয়ার হাওর আমাদের গর্ব ও অহংকার। এই হাওরের সঙ্গে আমাদের জীবনের নিত্য সম্পর্ক। এখানে বিদেশি মদের প্রচারমূলক ভিডিও ধারণ শুধু অপসংস্কৃতি নয়, এটি হাওরের ভাবমূর্তি ও আমাদের সংস্কৃতির ওপর সরাসরি আঘাত।
স্থানীয় পর্যটন ব্যবসায়ী হারুন রশিদ বলেন, টাঙ্গুয়ার হাওরে প্রতিদিন হাজারো পর্যটক আসে। এ ধরনের ভিডিও বিদেশি পর্যটকদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে পারে এবং পর্যটন শিল্পের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। প্রশাসনের উচিত এসব বিষয়ে নজরদারি বাড়ানো।
এ বিষয়ে তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বলেন,
বিষয়টি আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। ভিডিওটি যাচাই-বাছাই করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তবে, স্থানীয়দের অভিযোগ— এমন বিতর্কিত কর্মকাণ্ড হাওরের নৌকা মালিক, গাইড ও কিছু সংশ্লিষ্টদের অবহেলা ও আর্থিক লাভের ইচ্ছার কারণে বারবার ঘটছে। অনেকেই প্রশাসনের পাশাপাশি স্থানীয় পর্যায়ে সুশৃঙ্খল পর্যটন নীতিমালা ও নৈতিকতা চর্চার আহ্বান জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, টাঙ্গুয়ার হাওর শুধুমাত্র একটি পর্যটন কেন্দ্র নয়, এটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি জীববৈচিত্র্যভিত্তিক পরিবেশ সংরক্ষণ এলাকা (রামসার সাইট)। এখানে রয়েছে ২০০ প্রজাতির পাখি, বিপুল পরিমাণ জলজ উদ্ভিদ ও মাছের ভান্ডার। এই হাওর ঘিরেই জীবন-জীবিকা চলে হাজার হাজার হাওরবাসীর।
এমন একটি স্পর্শকাতর এলাকায় অবৈধ ও অনৈতিক ভিডিও চিত্র ধারণ হাওরের পরিবেশ, সংস্কৃতি ও সামাজিক ভারসাম্যের জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
জনগণের দাবি, দ্রুত তদন্ত করে দায়ীদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হোক— যাতে ভবিষ্যতে এমন কর্মকাণ্ডের পুনরাবৃত্তি না ঘটে।