অন্যান্য

ডাকসুর হল ও কেন্দ্রীয় সংসদে লড়ছেন চট্টগ্রামের ১২ নারী  প্রার্থী।

  প্রতিনিধি 8 September 2025 , 1:53:18 প্রিন্ট সংস্করণ

বাবলু নন্দী 

আগামীকাল  ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। ১৯৯০ সালের পর ২০১৯ সালে সর্বশেষ ডাকসু নির্বাচন হয়েছিল। এবারের ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামের নারী প্রার্থীদের নিয়ে  বিশেষ প্রতিবেদন।

এবারের ডাকসু নির্বাচন ২০১৯ সালের নির্বাচনের তুলনায় অনেক ভিন্ন, বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের দিক থেকে। ডাকসু ও হল সংসদ মিলে মোট নারী প্রার্থী ১২৫ জন। এর মধ্যে ডাকসুতে ৬০ জন এবং হল সংসদে ৬৫ জন প্রার্থী রয়েছেন। এবারের ডাকসু ও হল সংসদে চট্টগ্রামের নারী শিক্ষার্থীদের সংখ্যাও কম নয়।

চট্টগ্রামের নারী শিক্ষার্থী প্রার্থী হয়েছেন মোট ১২ জন। এর মধ্যে ভিপি পদে উমামা ফাতেমা এবং মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক পদপ্রার্থী ফাতিমা তাসনিম জুমা বেশ আলোচিত নাম।

প্রার্থী ও ভোটার পরিসংখ্যান

ভোটার তালিকা অনুযায়ী এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার ৩৯ হাজার ৮৭৪ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ১৮ হাজার ৯৫৯ জন (৪৭.৬ শতাংশ) এবং পুরুষ ভোটার ২০ হাজার ৯১৫ জন (৫২.৪ শতাংশ)। কেন্দ্রীয় সংসদের ২৮টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪৭১ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে নারী প্রার্থী মাত্র ৬০ জন (১৩ শতাংশ) এবং পুরুষ প্রার্থী ৪১১ জন (৮৭ শতাংশ)। সে হিসাবে নারী ভোটারের অনুপাতে প্রার্থীসংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম।

ডাকসুতে চট্টগ্রামের মেয়েরা

ডাকসুতে মোট নারী প্রার্থী ৬০ জন। এর মধ্যে ২৮টি পদের বিভিন্ন পদে চট্টগ্রামের মেয়ে প্রার্থী রয়েছেন ৭ জন।

ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ফটিকছড়ির মেয়ে উমামা ফাতেমা। তিনি সাবেক সমন্বয়ক ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র। অতীতে ছাত্র ফেডারেশনের রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। ২০২৪ সালের গণ অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া নারী মধ্যেও তিনি অন্যতম।

মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েছেন কক্সবাজার জেলার মহেশখালীর মেয়ে ফাতিমা তাসনিম জুমা। তিনি শিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের প্যানেল থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তিনি ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় রয়েছেন।

কমনরুম, রিডিং রুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে লড়ছেন সাতকানিয়ার উম্মে সালমা এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের সুর্মী চাকমা।

ক্যারিয়ার উন্নয়ন সম্পাদক পদে রয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটির মেয়ে রুপাইয়া শ্রেষ্ঠা তঞ্চঙ্গ্যা।

কার্যকরী সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সীতাকুণ্ডের ইশরাত জাহান ইমু এবং হেমা চাকমা। দুজনেই বামদলগুলো সমর্থিত ‘প্রতিরোধ পর্ষদ’ প্যানেল থেকে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।

হল সংসদে চট্টগ্রামের মেয়েরা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের পাঁচটি হলে এবারের নির্বাচনে মোট নারী প্রার্থী হয়েছেন ১৬৫ জন। এর মধ্যে চট্টগ্রামের প্রার্থী রয়েছেন ৫ জন।

কবি সুফিয়া কামাল হলে সহ-সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মিরসরাইয়ের তাসনিয়া জান্নাত চৌধুরী। তিনি ছাত্রদলের হল সংসদ প্যানেল থেকে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। একই হলে কার্যকরী সদস্য পদে প্রার্থী হয়েছেন সাতকানিয়ার মাহরিনা জান্নাত।

রোকেয়া হলে সহ-সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের ফারজানা আকতার (আরজু)।

শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে সহ-সভাপতি পদে রয়েছেন সীতাকুণ্ড উপজেলার সানজিদা সাবরিন।

বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলে কমনরুম, রিডিং রুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সীতাকুণ্ডের সাদিয়া তাবাসসুম তামান্না।

মেয়েদের হলগুলোর মধ্যে শামসুন নাহার হলে চট্টগ্রামের কোনো নারী প্রার্থী পাওয়া যায়নি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এ পর্যন্ত মাত্র দুইজন নারী ভিপি হয়েছেন। নারী ভিপিরা হলেন জাহানারা আখতার ও সালে মাহফুজা খানম। তারা যথাক্রমে ১৯৬০ ও ১৯৬৭ সালে ডাকসুর ভিপির দায়িত্ব পালন করেন।

সর্বশেষ ২০১৯ সালের ডাকসু নির্বাচনে কোনো নারী প্রার্থী বিজয়ী হতে পারেননি। তবে সাম্প্রতিক গণ অভ্যুত্থানে নারী শিক্ষার্থীদের ভূমিকা ছিল অবিস্মরণীয়। ডাকসু নির্বাচনেও রয়েছেন গণ অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া অনেক পরিচিত মুখ। ২০২৪ সালের ১৫ জুলাই ছাত্রলীগের হামলায় আহত সানজিদা আহমেদ তন্বীও প্রার্থী হয়েছেন ডাকসুতে।

তবে, নারী প্রার্থীদের মধ্যে ভিপি পদে চট্টগ্রামের উমামা ফাতেমা আলোচিত প্রার্থীদের একজন। একইভাবে ইনকিলাব মঞ্চের ফাতিমা তাসনিম জুমাও আলোচনায় রয়েছেন। সব মিলিয়ে এবারের ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামের কয়েকজন নারী প্রার্থী বিজয় হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। এখন দৃষ্টি থাকবে ৯ সেপ্টেম্বরের নির্বাচনে।  দেখা যাক আলোচনা ও বাস্তবতার ফলাফল কী হতে পারে এবার।

আরও খবর

                   

জনপ্রিয় সংবাদ