ঢাকা অফিস
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীদের প্রচারণায় কঠোর বিধিনিষেধ জারি করেছে নির্বাচন কমিশন। এই বিধিমালার আওতায় প্রার্থী থেকে সমর্থক সবার উপরে বিধিনিষেধ দেওয়া হয়েছে। এর লঙ্ঘন ঘটলে প্রার্থীতা বাতিল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারও হতে পারেন।
নতুন এই আচরণবিধির আওতায় যে কোনো ধরনের উপঢৌকন আদান-প্রদান, খাবার-দাবার আপ্যায়ন এমনকি সমর্থকদের উপর স্বেচ্ছাসেবামূলক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করার উপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের চিফ রিটার্নিং অফিসার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানান।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আজ থেকে আগামী ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোনো প্রার্থী কিংবা তাদের সমর্থকরা স্বেচ্ছাসেবামূলক কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন না। একই সঙ্গে কোনো ধরনের উপঢৌকন বিলি-বণ্টন, খাবার-দাবার আপ্যায়ন, আর্থিক সহযোগিতা কিংবা অনুরূপ কোনো কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে না। এ ধরনের কার্যক্রম সুস্পষ্টভাবে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী, কোনো প্রার্থী কিংবা তার পক্ষে কেউ আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা জরিমানা, প্রার্থিতা বাতিল; এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের শাস্তিও পেতে পারেন।
মনোনয়ন পত্র জমাদানকারীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় তালিকা প্রকাশে কিছুটা বিলম্ব হবে বলে জানিয়েছেন চিফ রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসিমউদ্দিন। এর আগে, গত বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে চিফ রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, ডাকসুর ২৮টি পদের বিপরীতে ৬৫৮টি মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে ৫০৯টি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে। ১৪৯টি মনোনয়নপত্র জমা পড়েনি। অন্যদিকে, হল সংসদ নির্বাচনের জন্য ১৮টি হলে মোট ১ হাজার ১০৯টি মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে। বিক্রি হয়েছিলো ১ হাজার ৪২৭টি মনোনয়নপত্র। জমা হয়নি ৩১৮টি মনোনয়নপত্র।
উমামার ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য’ প্যানেল ঘোষণা
এদিকে নানা বহু কাঠখড় পুড়িয়ে অবশেষে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করেছে উমামা ফাতেমার নেতৃত্বাধীন স্বতন্ত্র শিক্ষার্থীদের জোট ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য’ প্যানেল। সবার আগে স্বতন্ত্র প্যানেল ঘোষণার কথা থাকলেও সবার পরে ঘোষণা করেন তিনি। এদিকে এতদিন এ প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ঢাবি সাংবাদিক সমিতির (ডুজা) বর্তমান সভাপতি মহিউদ্দিন মুজাহিদ মাহি আলোচনায় থাকলেও চূড়ান্ত প্যানেলে তাকে রাখা হয়নি। এর পরিবর্তে জিএস পদে প্রার্থীতা পেয়েছেন ডুজার সাবেক সভাপতি আল সাদী ভূঁইয়া। এছাড়া সহ-সাধারণ সম্পাদক পদে রয়েছেন জাহেদ আহমদ, মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন বিষয়ক সম্পাদক পদে নূমান আহমাদ চৌধুরী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক মমিনুল ইসলাম (বিধান), আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নাফিজ বাশার আলিফ, কমনরুম, রিডিংরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক সুমী চাকমা এবং সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক পদে আছেন অনিদ হাসান।
গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন সিয়াম ফেরদৌস ইমন। ক্রীড়া সম্পাদক মো. সাদিকুজ্জামান সরকার, ছাত্র পরিবহন সম্পাদক মো. রাফিজ খান, সমাজসেবা সম্পাদক তানভীর সামাদ, ক্যারিয়ার উন্নয়ন সম্পাদক রুপাইয়া শ্রেষ্ঠা তঞ্চঙ্গ্যা, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক ইসরাত জাহান নিঝুম এবং মানবাধিকার ও আইন বিষয়ক সম্পাদক পদে রয়েছেন নুসরাত জাহান নিসু।
এছাড়া সদস্য পদে রয়েছেন নওরীন সুলতানা তমা, আবিদ আব্দুলাহ, ববি বিশ্বাস, মো. শাকিল, মো. হাসান জুবায়ের (তুফান), আব্দুল্লাহ আল মুবিন (রিফাত), অর্ক বড়ুয়া, আবির হাসান, নেওয়াজ শরীফ আরমান, মো. মুকতারুল ইসলাম (রিদয়), হাসিবুর রহমান, রাফিউল হক রাফি, মো. সজিব হোসেন এবং সাদেকুর রহমান সানি।
পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় বানানোর অঙ্গীকার ছাত্রদলের
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে (ঢাবি) পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করার অঙ্গীকার করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। আসন্ন ডাকসু নির্বাচনে শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বড় সমস্যার সমাধানকেই তারা করেছে মূল প্রতিশ্রুতি। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে মধুর ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনে ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান বলেন, `ক্যাম্পাসের অধিকাংশ শিক্ষার্থী মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের। বাইরে মেস বা হোস্টেলে থাকার খরচ বহন করা তাদের জন্য প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাধ্য হয়ে অনেক শিক্ষার্থী ৪-৫টি টিউশন করতে যায়। এতে তাদের পড়াশোনায় মনোযোগ দেওয়ার মতো সময় আর থাকে না।'
তিনি আরও বলেন, ‘সময়ের অভাবে অনেক শিক্ষার্থীর সিজিপিএ ৩.৫০-এর নিচে নেমে যায়, ফলে তারা ভালো চাকরির প্রতিযোগিতা থেকেও বাদ পড়ে। ছাত্রদল শিক্ষার্থীদের জন্য এমন একটি পরিবেশ তৈরি করতে চায় যেখানে তারা মাথার ওপর একটি ছাউনি আর পড়ার জন্য একটি টেবিল নিশ্চিত পাবে। বড় বড় ভবনের প্রয়োজন নেই, সামর্থ্য না থাকলে টিনের চালা দিয়েও আমরা থাকার ব্যবস্থা করব।’
আবিদুল ইসলাম খান আরও জানান, খুব শিগগিরই ঘোষিত পূর্ণাঙ্গ ইশতেহারে আবাসন সংকট নিরসনের পাশাপাশি শিক্ষার্থীবান্ধব নানা পরিকল্পনা আরও বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হবে। সংবাদ সম্মেলনে জিএস প্রার্থী তানভীর বারী হামিম, এজিএস প্রার্থী তানভীর আল হাদী মায়েদসহ ছাত্রদলের প্যানেলের অন্য সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।