মনিরামপুরের রাজগঞ্জে অবৈধ 'মিনি মেডিকেল কলেজে' ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা
রিপন হোসেন সাজু,মনিরামপুর (যশোর):
যশোরের মনিরামপুর উপজেলার রাজগজ্ঞ বাজারে অবস্থিত ‘সুপারস্টার মেডিকেল অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউট’ নামে মিনি মেডিকেল কলেজে অভিযান চালিয়েছে ভ্রম্যমাণ আদালত। এ সময় প্রতারণার দায়ে প্রতিষ্ঠানের পরিচালক কথিত ডাক্তার ডিএম মনিরুজ্জামান মনিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। একই সাথে পরবর্তি নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে মনিরামপুর উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) নিয়াজ মাখদুমের নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালিত হয়।
সূত্র জানায়, ৬ মাস আগে মনিরামপুর উপজেলার রাজগজ্ঞ বাজারের কথিত ডাক্তার মনি কেশবপুরে অবস্থিত ‘সুপারস্টার মেডিকেল অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউটের’ প্রধান কার্যালয় থেকে ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে মিনি মেডিকেল কলেজ পরিচালনার অনুমতি নিয়ে আসেন। গত ২৫ মে কেশবপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শরিফ নেওয়াজের নেতৃত্বে একটি টিম ওই প্রতারণার দায়ে ওই প্রতিষ্ঠানে অভিযান পরিচালনা করেন। এ সময় প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনার জন্য কোনো বৈধ্য কাগজপত্র দেখাতে ব্যর্থ হলে সেটি বন্ধ ঘোষণা করেন। একইসাথে প্রতিষ্ঠানের পরিচালক মিলন হোসেনকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
এতে শাখা অফিস নিয়ে বিপারে পড়ে যান কথিত ডাক্তার মনি। এরপর প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য বের করেন নতুন পদ্ধতি। গত ১৬ জুন বগুড়ার আরও একটি বিতর্কিত প্রতিষ্ঠান ‘সিট ফাউন্ডেশন’ থেকে অনুমতি নিয়ে শুরু করে একই কারবার। গ্রামে প্রচার করে তিনি ‘ডিপ্লোমা ইন মেডিকেল ফ্যাকাল্টি’, ‘ডিপ্লোমা ইন নার্সিং’, ‘ডিপ্লোমা ইন মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট’, ‘মাদার অ্যান্ড চাইল্ড হেলথ কেয়ার’, ‘ডেন্টাল কেয়ার’, ‘ল্যাব টেকনোলজি’, ‘পল্লী চিকিৎসা’, ‘ইউনানী মেডিসিন প্র্যাকটিস’, এমনকি ‘ফ্রিল্যান্সিং’ ও ‘ফার্মেসি’ কোর্সেও ভর্তি নিচ্ছে। ২০১০ সালের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের চিকিৎসা শিক্ষা শাখার এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে , এ সকল কোর্স ম্যাটস্ ছাড়া কেউ করাতে পারবে না।
অপরদিকে, দীর্ঘদিন মনি নামের আগে 'ডাক্তার' পদবি ব্যবহার করলেও তিনি কোনোরকম এমবিবিএস ডিগ্রিধারী নন। তিনি নিজেই শিক্ষকের ভূমিকায় ক্লাস নিচ্ছিলেন। অথচ এসব কোর্সে শিক্ষাদান করার কথা এমবিবিএস ডাক্তারদের। একই সাথে, রাজগঞ্জ এলাকায় তিনি নারী মাঠকর্মী নিযুক্ত করে একটি শক্তিশালি নেটওয়ার্ক তৈরি করেছেন। ওই মাঠকর্মীরা তার শিক্ষার্থী ও চেম্বারের জন্য রোগী সংগ্রহ করে আসছিলো। এই কথিত ডাক্তারের অপচিকিৎসায় এক নারীর গর্ভের সন্তান নষ্ট হয়ে গেছে বলেও গ্রামে প্রচার আছে।
অভিযানের সময় প্রতিষ্ঠানটির সাইনবোর্ডে ‘সুপারস্টার মেডিকেল অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউট’ লেখা থাকলেও অনুমোদনের কাগজপত্রে লেখা ছিল ‘জামান মেডিকেল টেকনোলজি অ্যান্ড নার্সিং ইনস্টিটিউট’। নামের এই অসঙ্গতিও প্রতারণার প্রমাণ হিসেবে চিহ্নিত করে আদালত।
এ বিষয়ে মনিরামপুরের সহকারী কমিশনার নিয়াজ মাখদুম বলেন, নামের আগে ‘ডাক্তার’ ব্যবহার করে একজন ব্যক্তি নিজেই শিক্ষকতা করছেন, আবার রোগীও দেখছেন এমন অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালানো হয়। প্রাথমিকভাবে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে জরিমানা করা হয়েছে এবং প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।
অপরদিকে, একইদিন রাজগজ্ঞ বাজারে লাইসেন্সবিহীনভাবে ক্লিনিক চালানোর অপরাধে ‘তকী ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে’ ২০ হাজার জরিমানা ও বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে একটি দোকানে অভিযান চালিয়ে দু’হাজার টাকা জরিমানা ও ৪২ কেজি পলিথিন জব্দ করা হয়েছে। মৎস্য রক্ষা ও সংরক্ষণ আইনে ৩ কেজি কারেন্ট জালজব্দ ও দু’হাজার জরিমানা করা হয় অপর এক দোকানীকে। অত্যাবশ্যকীয় পণ্য নিয়ন্ত্রণ আইনে এক ব্যবসায়ীকে এক হাজার ৫শ’ টাকা জরিমানা করা হয়। সর্বমোট এদিনে ৭৫ হাজার ৫শ’ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
অভিযানে মনিরামপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়াজ মাখদুম, মনিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কনসালটেন্ট ডাক্তার খালেদুজ্জামান মুজাহিদসহ আইন-শৃঙ্খলাবাহীনির সদস্যরা উপস্থিত ছেলেন।