প্রতিনিধি 29 July 2025 , 5:17:38 প্রিন্ট সংস্করণ
ঢাকা, ২৯ জুলাই ২০২৫:
শুধু গুলশান নয়, রাজধানীর অভিজাত বনানী থেকে শুরু করে মিরপুরের মতো জনবহুল এলাকাতেও চাঁদাবাজি ও নানা দেনদরবারে সক্রিয় ছিল রিয়াদ এবং তার দলবল। গত শনিবার আওয়ামী লীগের সাবেক নারী সংসদ সদস্য শাম্মী আক্তারের বাড়িতে চাঁদা দাবি করতে গিয়ে গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকেই আব্দুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান রিয়াদসহ তার পুরো গ্রুপের অন্ধকার জগতের নানা দিক সামনে আসতে শুরু করেছে। গুলশান থানা পুলিশ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া তথ্যচিত্রে উঠে আসছে তাদের প্রভাব বিস্তারের চাঞ্চল্যকর চিত্র।
প্রভাবশালীর মুখোশ, থানা পুলিশের মুখে অভিযোগ
গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, রিয়াদ ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে গুলশান ছাড়াও বনানীসহ আশপাশের অনেক এলাকায় চাঁদাবাজির মৌখিক অভিযোগ আসছে। তিনি এও জানিয়েছেন, লিখিত অভিযোগ পেলেই তারা আইনানুগ ব্যবস্থা নেবেন।
এদিকে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, যেখানে রিয়াদকে একটি থানায় বসে ওসির সঙ্গে দেনদরবার করতে দেখা যাচ্ছে। ভিডিওতে রিয়াদ নিজেকে “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন” ও “গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের” নেতা পরিচয় দিয়ে কোনো একটি বিষয়ে ওসিকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন। তার সঙ্গে ১০-১২ জন ছেলেমেয়েও সায় দিচ্ছিলেন। যদিও ঘটনার বিস্তারিত জানা যায়নি, তবে শাহ আলী থানা পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা ভিডিওটি তাদের থানার বলে নিশ্চিত করেছেন। এই ঘটনা রিয়াদের থানা-পুলিশের সঙ্গে ‘দেনদরবার’ করার ক্ষমতা এবং প্রভাব বিস্তারের ইঙ্গিত দেয়।
পলাতক কাজী গৌরব অপু, গ্রেপ্তারের প্রচেষ্টা অব্যাহত
গুলশানের ঘটনার দিন রিয়াদসহ পাঁচজন গ্রেপ্তার হলেও কাজী গৌরব ওরফে অপু নামে একজন ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। তাকে গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে গুলশান থানার ওসি হাফিজুর রহমান জানান, তারা অপুকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন এবং দ্রুতই তাকে আইনের আওতায় আনতে পারবেন বলে আশা করছেন।
দরিদ্র পরিবার থেকে হুট করে বিলাসী জীবন: প্রশ্ন উঠেছে রিয়াদের আয়ে
গ্রেপ্তারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছেন রিয়াদ। নোয়াখালীর সেনবাগের এক দরিদ্র পরিবার থেকে তার অভাবনীয় উত্থান প্রতিবেশীদেরও বিস্মিত করেছে। মাত্র এক বছর আগেও রিয়াদের বাবা রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন এবং তাদের একটি ভাঙা ঘর ছিল। কিন্তু বিস্ময়করভাবে, এই এক বছরের ব্যবধানেই তাদের ভাঙা ঘরের জায়গায় উঠেছে পাকা বাড়ি। যে পরিবার গত ৫০ বছরে কখনো কোরবানি দিতে পারেনি, সেই পরিবার এবার দেড় লাখ টাকার গরু দিয়ে কোরবানি করেছে! রিয়াদের এই আকস্মিক আর্থিক পরিবর্তন তার আয়ের উৎস নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে।
অন্যদিকে, গুলশানের ঘটনায় গ্রেপ্তার দুই সহোদর সাকাদাউন সিয়াম ও সাদমান সাদাবও রয়েছেন আলোচনায়। প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটির এই দুই ছাত্র ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ থেকে বহিষ্কৃত রিয়াদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বলে জানা গেছে। তাদের ফেসবুক প্রোফাইলে রিয়াদের সঙ্গে অসংখ্য ছবিও রয়েছে।
সিয়াম ও সাদাবের বাবা রাজশাহীর একটি পেট্রোল পাম্পে মাত্র সাড়ে ৬ হাজার টাকা মাসিক বেতনে চাকরি করেন। পাঁচ আগস্টের আগে দুই ভাই টিউশনি করে পড়াশোনার খরচ চালাতেন, কিন্তু এরপরই তারা টিউশনি ছেড়ে দেন। তাদের পরিবার এক দশক আগে ঋণগ্রস্ত হয়ে নাটোরের বাড়িভিটা বিক্রি করে রাজশাহীতে এসে ভাড়া থাকছিল। বাবার সামান্য আয়ে চলা এই দুই ভাইয়ের বিলাসী জীবনযাপনও জনমনে ব্যাপক কৌতূহল সৃষ্টি করেছে।
এই গ্রেপ্তারগুলো কেবল কিছু ব্যক্তির নয়, বরং সমাজের গভীরে লুকিয়ে থাকা চাঁদাবাজি ও অবৈধ আয়ের এক বিশাল নেটওয়ার্কের ইঙ্গিত দিচ্ছে। প্রশাসনের দ্রুত ও কঠোর পদক্ষেপই পারে এই ধরনের অপরাধী চক্রকে ভেঙে দিতে এবং সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে।