অন্যান্য

দহগ্রাম হাসপাতালে জনবল সংকট, ভোগান্তি, ব্যাহত চিকিৎসাসেবাঃ

  প্রতিনিধি 11 December 2024 , 12:21:45 প্রিন্ট সংস্করণ

 

আব্দুল লতিফ সরকার, লালমনিরহাট প্রতিনিধি।

 

লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলায় দেশের বহুল আলোচিত দহগ্রাম আঙ্গোরপোতা ২০ শয্যা হাসপাতালে মিলছে না চিকিৎসা সেবা। চিকিৎসা সেবা হতে বঞ্চিত এ ইউনিয়নের প্রায় ২০ হাজারের বেশি মানুষ। হাসপাতালটিতে চিকিৎসা সেবার আধুনিক যন্ত্রপাতি ও অবকাঠামো থাকলেও কার্যক্রম সচল নেই। ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দের পর দহগ্রাম ও আঙ্গোরপোতা ছিটমহল পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম ইউনিয়ন নামে অন্তর্ভুক্ত হয়। তিনবিঘা করিডোরের মাধ্যমে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত এ দহগ্রাম। এ ইউনিয়নবাসীর জন্য ১৯৯১ সালে নির্মিত হয় দহগ্রাম আঙ্গোরপোতা ২০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালটি। ১৯৯৫ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের অর্থায়নে হাসপাতালটি পরিচালিত হয়। ২০০১ সালে রাজস্ব খাতে আনা হলে নেমে আসে জনদুর্ভোগ। ২০১১ সালের অক্টোবরে হাসপাতালটিতে ইনডোর ও আউটডোর চিকিৎসাসেবা চালু হয়। প্রথম কয়েকমাস ভালোভাবে হাসপাতালটির কার্যক্রম চললেও পরবর্তী সময়ে নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়ে হাসপাতালটি। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের পোহাতে হয় নানা দুর্ভোগ। বর্তমানে ইনডোর চিকিৎসা সেবা বন্ধ রয়েছে। আউটডোর ও জরুরী চিকিৎসা সেবা চালু থাকলেও তা নামে মাত্র। এ ইউনিয়নের কেউ অসুস্থ হলে পায় ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হয়। হাসপাতালটির মূল ফটকে প্রায় সময় তালা ঝুলানো অবস্থায় থাকে। হঠাৎ কখনো খোলা থাকলেও ভিতরে গিয়ে দেখা যায় হাসপাতালটির মাঠে গরু ও ছাগলের বাসস্থান। হাসপাতালটির ভেতরে অধিকাংশ দরজায় তালা ঝুলানোর কারনে ভূতুড়ে পরিবেশের তৈরি হয়েছে।

বেশ কয়েক বছর ধরে ইনডোর চিকিৎসা সেবা বন্ধ থাকার কারণে আধুনিক যন্ত্রপাতি নষ্ট হতে চলছে।

চলতি বছরের জুলাইয়ের তথ্যমতে হাসপাতালটি কার্যক্রম সচল রাখতে ৪ জন মেডিকেল অফিসার প্রয়োজন সেখানে কর্মরত আছেন ১জন। ৪জন সহকারী নার্স কর্মরত থাকার কথা থাকলেও নেই একজনও। ফার্মাসিস্ট পদে একজন থাকার কথা থাকলেও হাসপাতালে ফার্মাসিস্ট পদে জনবল শূন্য। অপরদিকে আয়া পদ শূন্য সেখানে প্রয়োজন ২ জন। অফিস সহায়ক পদে দুইজন থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে কেউ কর্মরত নেই। ক্লিনার পদে দুইজন প্রয়োজন হলেও কর্মরত আছেন ১জন। সবমিলে হাসপাতালটির বিভিন্ন পদে ১৪ জনবল সংকট রয়েছে। যার ফলে ব্যহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা। স্থানীয়দের অভিযোগ, একজন চিকিৎসক দিয়ে চলছে হাসপাতালটি। পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও স্টাফ না থাকার কারণে চিকিৎসা সেবা হতে বঞ্চিত এ ইউনিয়নের মানুষ।

ওই ইউনিয়নের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, দহগ্রাম আঙ্গরপোতা হাসপাতালে চিকিৎসা হয়না ডাক্তার আসে দুই ঘন্টা থেকে চলে যায়।

আব্দুর রাজ্জাক বলেন, হাসপাতালে যে যন্ত্রপাতি আছে সেগুলো যদি চালু থাকে তাহলে আমাদের পাটগ্রাম যাওয়া লাগত না। এখানেই চিকিৎসা পাইতাম।

দহগ্রাম আঙ্গোরপোতা ২০ শয্যা হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. নূর আরেফিন প্রধান জানান, এ হাসপাতালটি প্রত্যন্ত এলাকায় কিন্তু হাসপাতালের কার্যক্রমের মধ্যে শুধু আউটডোর চালু আছে ইনডোর চালু নাই। এখানে জনবলের অভাবের কারণে ইনডোর চালু হচ্ছে না। ইনডোর পরিসেবা খুব জরুরী দরকার। হাসপাতালটি শহর থেকে অনেক দূরে। জেলা থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে। এখানে জনবল জরুরি ভাবে দেওয়া উচিত। ওষুধ মোটামুটি পাওয়া যায়।

পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রায়হান আলী বলেন, দহগ্রাম আঙ্গোরপোতা হাসপাতালে একজন মাত্র চিকিৎসক আছে। একজনের পক্ষে তো ইনডোর চালু রাখা সম্ভব না। চিকিৎসক ও নার্সদের সংখ্যা যদি সম্পূর্ণভাবে ফিলাপ করা যেত তাহলে হয়তো চালু করা যেত। অ্যাম্বুলেন্স একটি আছে চালকের পদ নেই। দীর্ঘদিন পরে থাকার কারণে অ্যাম্বুলেন্সের ব্যাটারি ও টায়ার নষ্ট হয়ে গেছে। ঠিকঠাক করে দেখি আবারো চালু রাখার ব্যবস্থা করা যায় কিনা।

Author

আরও খবর

                   

জনপ্রিয় সংবাদ